মুহা. অাশিকুল ইসলাম খান
তরুণ আলেম
কওমি মাদরাসা, সহীহ দ্বীন শিক্ষার একটি মার্কাজ। যেখান থেকে বিচ্ছুরিত হয় ঐশী ইলমের অালোকচ্ছটা। তৈরি হয় কুরঅান হাদিসের জ্ঞানের ধারক বাহক। প্রতিটি কওমি মাদরাসা তৈরি করে সুস্থ বিবেক সম্পন্ন বিশুদ্ধচেতনাধারী জাতির কর্ণধার।
অাপাত দৃষ্টিতে অাপামর জন সাধারণ এটাই দেখে যে কওমি অঙ্গনে যারা অাছেন পড়েন বা পড়ান সমাজের সকলেই তাদের সমীহ করে চলে এবং স্বশ্রদ্ধ অাচরণ করে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা কি তাই??
অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যায় বর্তমানে প্রায় প্রতিটি কওমি মাদরাসাই স্থানীয় ক্ষমতাবান প্রভাবশালীদের হাতে যিম্মি। নিজ নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠান বলে ক্ষমতার দাপটে সমাসিত হয় মাদরাসা পরিচালনা পরিষদে। এবং সদা সচেষ্ট থাকে ছাত্র শিক্ষকসহ সকলের উপর নিজেদের অধিপত্য বিস্তারসহ নিজস্ব অভিমতটাকেই তাদের উপর চাপিয়ে দিতে। যদিও হোক না তা কওমি ধারার চিন্তা চেতনার পরিপন্থি। এসম্পর্কে মিরপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান এর জনৈক মুখপাত্র জানান, হ্যাঁ অামরা মানি কওমি মাদরাসাগুলো জাতির অনুদানে পরিচালিত এবং কওমি শিক্ষার সুতিকাগার দারুল উলূম দেওবন্দের অষ্টম মূলনীতির মাঝে এটাও রয়েছে যে প্রতিটি কওমি মাদরাসা একটি পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হবে। যারা মাদরাসাগুলোর সার্বিক উন্নয়নসহ শিক্ষক ছাত্রের খানা পিনা ও বেতনাদির ব্যাপরে সজাগ দৃষ্টি রাখবে।
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট এর সম্পূর্ণই ব্যাতিক্রম। অনেকে ক্ষমতার দাপটে পরিচালনা পরিষদের সদস্যপদ বাগিয়ে নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রদর্শিত হচ্ছে মারাত্মক পর্যায়ের উদাসিনতা। পক্ষান্তরে যারা মাদরাসায় নিয়মিত খোঁজ খবর রাখেন বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে থাকেন তারা মাদরাসা অভ্যান্তরীণ বিষয়ে কোনরূপ হস্তক্ষেপই করে না এমন কি তারা অনেকে পরিচালনা পরিষদের সদস্যই না। উপরন্তু অনেকে তো এমন রয়েছেন যাদের মাদরাসা নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাঝেও খুব সহজে উপস্থিতও করা যায় না। পক্ষান্তরে এরূপ বহুত সংখ্যক রয়েছে যারা ক্ষমতা বলে পরিচালনা পর্ষদে নিজের স্থান করে নিয়েছে কিন্তু মাদরাসায় কেমন যেন তারা বসন্তের কুকিল বা সিজনারি বার্ডের মতই। কেবলমাত্র অনুষ্ঠানাদি ও ভোজন পর্ব ব্যাতীত তাদের দেখা পাওয়াটাও দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায় । মাদরাসা কিভাবে চলছে শিক্ষকদের বেতন ও ছাত্রদের সার্বিক অার্থিক যোগান কোন খাত থেকে কিভাবে হচ্ছে এ ব্যাপারে তাদের কোন দৃষ্টিই নেই।
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি কওমি মাদরাসাই স্থানীয় ক্ষমতাবান প্রভাবশালীদের হাতে যিম্মি। নিজ নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠান বলে ক্ষমতার দাপটে সমাসিত হয় মাদরাসা পরিচালনা পরিষদে। এবং সদা সচেষ্ট থাকে ছাত্র শিক্ষকসহ সকলের উপর নিজেদের অধিপত্য বিস্তারসহ নিজস্ব অভিমতটাকেই তাদের উপর চাপিয়ে দিতে
এ কোন একটি মাদরাসা নয় বরং সারা বাংলাদেশব্যাপী যত কওমি মাদরাসা রয়েছে প্রায় সকল মাদরাসার চিত্র একই রকম। অাবার অনেক অাগ বেড়ে সভাপতি ও কোষাধক্ষের পদ অলংকৃত করে মাদরাসার হিসাব বিভাগটা নিজেদের করায়ত্তে রেখে শিক্ষক মহোদয়দের অানিত অনুদান ও জনসাধারণের বিভিন্ন দানকৃত অর্থ অাত্মসাৎ করে নেয়। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করা তো দূরে থাক মুখ খুলেলেই ক্ষমতার দাপটে কেড়ে নেয়া হয় চাকরি এবং স্বীকার হতে হয় নানা রকম হেনেস্তা ও জুলুমের।
এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে ঢাকার প্রাণ কেন্দ্র মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী একটি মাদরাসায়। পরিচালনা পরিষদের হর্তা কর্তাদের একজন যার নামে প্রায় দশলক্ষ টাকা অাত্মসাৎ এর কথা উঠলে তার কাছে হিসাব জানতে চায় ওই প্রতিষ্ঠানটির একজন প্রবীন শিক্ষক যিনি সুদীর্ঘ একটি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটির সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু তিনি হিসাব দিতে অস্বীকার করার এক পর্যায়ে শুরু হয় তাদের মাঝে বাক বিতন্ডা এবং এর জেড় ধরে ঐদিনই ক্ষমতার দাপটে বরখাস্ত করা হয় প্রতিষ্ঠানটির জন্য সদা নিবেদিত প্রাণ হাজারো ছাত্রের প্রাণ প্রিয় প্রবীন এই শিক্ষককে।
এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং এ ধরনের হাজারো ঘটনা অহর্নিশি ঘটছে অামাদের সমাজে যা লোক চক্ষুর অন্তরালেই রয়ে যাচ্ছে। এহেন নানা প্রকারের নির্যাতনের স্বীকার কওমি মাদরাসা ও তৎসংশ্লিষ্ট অালেমগণ।
আরআর