শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


দুর্দান্ত এক বীরাঙ্গনা নীনাহ খাতুন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

nenehatun

এনামুল হক কাসেমী

নীনাহ খাতুন। এক দুর্দান্ত মুসলিমাহ বীরাঙ্গনা। সাক্ষাৎ বুভুক্ষু বাঘিনী! রূশদের যমদূত! রাশানরা আজও এই নামটি শুনলে ভয়ে কুঁকড়ে যায়! ওসমানী সালতানাতের 'আযীযিয়াহ' নামক স্থানের অধিবাসিনী। এই স্থানের নিকটেই একটি মজবুত দূর্গ ছিল, ওসমানী সৈন্যরা এই দূর্গ থেকেই রূশদের মোকাবেলা করত।

১৮৭৭ সালের ৭ নভেম্বর রাতের অন্ধকারে রাশানরা উক্ত দূর্গের উপর সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। ওসমানী সৈন্যদের হত্যা করে দূর্গ দখল করে নেয়। দূর্গে 'নীনাহ খাতুন' এর 'হাসান' নামে এক সহোদর ভাই ছিল। রাশানরা তাকে মারাত্নক জখম করে ছাড়ে। পরদিন 'হাসান' দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। এর পরদিন সকালে 'নীনাহ খাতুন' এর কাছে আপন ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পৌঁছল। 'নীনাহ খাতুন' খবর শুনেই তিন মাসের দুধের মেয়ে শিশুকে ঘরে ফেলে দূর্গাভিমুখে দৌড় দিলেন! ভাই হারানোর এবং শিশু সন্তান ফেলে আসার বিরহে চোখের নোনাজলে গন্ডদেশকে প্লাবিত করে দূর্গে এসে পৌঁছলেন।

'নীনাহ খাতুন' আপন ভাইয়ের ললাটে চুমো খেলেন। লাশ ছুঁয়ে কসম খেলেন প্রতিশোধের! ভাইয়ের মৃত্যুর, দেশ ও দশের পক্ষে প্রতিশোধ! 'নীনাহ খাতুন' নিহত ভাইয়ের বন্দুক হাতে ওঠালেন। একটি কুড়াল হাতে নিলেন। স্থানীয় জনগণের সাথে রূশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ঈমান-ইসলামকে রক্ষা করতে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ও ওসমানী সৈন্যদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে স্থানীয় ওসমানী জনগণ রাশানদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।

লড়াকু ওসমানী জনগণের বেশিরভাগ ছিল নারী ও বয়স্ক লোক! অস্ত্র হিসেবে সকলের হাতে ছিল দা, কুড়াল, খুন্তি ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র! বিপরীত দিক দিয়ে রাশানরা বন্দুক, গোলা-বারূদ ও তীর-ধনুক ইত্যাদি অস্ত্রে সজ্জিত। অল্পক্ষণের মধ্যেই রাশানরা চোখে শর্ষে ফুল দেখতে পেল! এক একটা লোক তাদের জন্য মৃত্যুদূত হিসেবে আবির্ভূত হল! এঁদের প্রত্যেকেই যেন অসীম সাহস ও সীমাহীন শক্তির পর্বত! অবশেষে রাশানরা পরাজিত হল। ওসমানী জনগন দূর্গ পূণরায় দখল করে নিল। প্রায় ২ হাজার রূশকে দুনিয়া ত্যাগ করল দা, কুড়াল, খুন্তির এলোপাতাড়ি আনাড়ি আঘাতে! রূশদের গুলি বৃষ্টিতে কয়েকশো লড়াকু জনগন শাহাদাতের শরাব পান করল।

Image result for nene hatun
পুরো লড়াইয়েই 'নীনাহ খাতুন' সকলের আগে ছিলেন। ভাইয়ের পরিত্যক্ত বন্দুক আর কুড়াল নিয়ে বীরত্বের নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। উপস্থিত সকলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লড়াইয়ে 'নীনাহ খাতুন'-ই সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন। লড়াই শেষে 'নীনাহ খাতুন'-কে পাওয়া গেল আঘাতে আঘাতে জর্জরিত। চেতনাহীন। এই কঠিন মুহুর্তেও রক্তেরঞ্জিত উভয় হাতে কুড়াল আগলে ধরে রেখেছেন!

১৯৫২ সালে আমেরিকান জেনারেল 'রেডজাই' তুরষ্ক ভ্রমণে গিয়েছিলেন। বীরাঙ্গনা 'নীনাহ খাতুন'কে একনজর দেখার জন্য বায়না ধরলেন। 'রেডজাই' প্রশ্ন করেছিলেন, যদি সম্ভব হয় তাহলে আপনি কি নতুন কোনো যুদ্ধে শরীক হবেন? 'নীনাহ খাতুন' অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তে উত্তর দিয়েছিলেন- হ্যাঁ, অবশ্যই শরীক হব।

ইতিহাসে 'নীনাহ খাতুন'- 'উম্মুল জাইশিস সালিস' নামে পরিচিতি লাভ করেন। 'উম্মুল উম্মাহাত' উপাধিতে ভুষিত হন। ১৯৫৫ সালে 'নীনাহ খাতুন' মৃত্যুবরণ করেন। রাহিমাহাল্লাহ। তাক্বাব্বালাহাল্লাহ।

সূত্র- আরবের জনপ্রিয় ফেইসবুক পেইজ #التاريخ_الإسلامي এর দেয়াল হতে অনূদিত।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ