শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


হ্যাঁ, আমরা বিকল্প বইমেলার স্বপ্ন দেখি: মাওলানা ওবায়দুল্লাহ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

obaidullah_ajhari

মাকতাবাতুল আযহার। এ দেশের প্রকাশনা জগতে একটি ব্যতিক্রম নাম। ভিন্ন উদ্যোগ। ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের বাইরেও যে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কিছু করণীয় থাকে বাংলাদেশে তা সম্ভবত প্রথম উপলব্ধি করে মাকতাবাতুল আযহার। বইমেলা, লেখক সম্মাননা ও পদক প্রদান মাকতাবাতুল আযহারের ব্যতিক্রম আয়োজন। যা ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে লেখক, পাঠক ও সাধারণ মহলে।

২০১৫ সাল থেকে লেখকদের সম্মাননা দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটি এবং এ বছর যুক্ত হয়েছে ১ লাখ টাকা অর্থমূল্যের ‘মাওলানা মুহাম্মদ সাঈদ রহ. পদক’। কিতাব মেলার আয়োজন করেন প্রতিবছর।

ভিন্ন মাত্রার এসব আয়োজনের প্রাণপুরুষ ও স্বপ্নদ্রষ্টা মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আযহারী। মাকতাবাতুল আযহারের সত্ত্বাধিকারী ও বিশিষ্ট আলেম। তার চোখে স্বপ্ন দেখছে এদেশের বহু প্রবীন ও নবীণ আলেম, লেখক ও পাঠক। কিন্তু তাকে কী ছুঁতে পারে তাদের প্রত্যাশাগুলো? এসব আয়োজনের পেছনে তার ভাবনাগুলো কী? কী করার স্বপ্ন দেখেন আগামীর দিনগুলোতে? এসব প্রশ্ন নিয়ে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে তার মুখোমুখি হয়েছিলো আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : নিকট ইতিহাসে ইসলামি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আপনারা লেখক সম্মনা ও পদকের প্রচলন করেছেন। কোন লক্ষ্য থেকে?

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ : কয়েক বছর আগে আমরা সিদ্ধান্ত নেই, আমরা আমাদের সিনিয়র লেখক এবং লেখালেখিতে যাদের অবদান বেশি তাদেরকে সম্মানিত করবো। তাদের কাজ ও অবদানের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য। আমরা প্রথম লেখক সম্মাননা প্রদান করি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫। এবার আমাদের তৃতীয় লেখক সম্মাননা হলো। এবার যুক্ত হয়েছে মাওলানা মুহা. সাঈদ রহ. পদক।

আওয়ার ইসলাম : মাওলানা মুহাম্মদ সাঈদ রহ. পদক সংযুক্ত করলেন কেনো?

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ : আমার বাবা মাওলানা মুহা. সাঈদ রহ. গত বছর ইন্তেকাল করেন। আমি তার নামে এক লক্ষ টাকা অর্থমূল্যের পদক জারি করেছি। উদ্দেশ্য মরহুম পিতার পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণ এবং সমাজে যারা ইতিবাচক অবদান রাখছেন তাদেরকে সম্মানিত করা। ইনশা আল্লাহ! প্রতিবছর এক বা একাধিক লোককে এক লক্ষ টাকা অর্থমূল্যের সম্মাননা দিবো। আল্লাহ চাইলে এটা বাড়তেও পারে। কমবে না। শুধু লেখালেখি নয় ইসলামের যেকোনো অবদানের জন্য আমরা এ পদকটি প্রদান করবো।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হতে পারে। লেখালেখির সাথে যুক্ত নয়। হয়তো তিনি কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীর্ঘ জীবন ধরে কুরআনের খেদমত করছেন। মকতবে বসে মানুষকে সহি কুরআনের পাঠ দিচ্ছেন। অথবা ইসলামের অন্য কোনো ক্ষেত্রে অবদান রাখছে এমন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করবো।

maktabatul_ajhar

আওয়ার ইসলাম : সম্মাননা ও পদকের জন্য যাদের নির্বাচিত করা হয়, তাদের কোনো বিষয়গুলো দেখা হয়?

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ : এতোদিন পর্যন্ত যেটা করেছি তাহলো আমাদের প্রকাশনীতে যাদের বইয়ের সংখ্যা বেশি, যাদের লেখার মান ভালো এবং পাঠকের উপর যাদের লেখার প্রভাব বেশি তাদের নির্বাচিত করেছি। প্রথমে আমরা সৃজনশীল লেখক বেছে নিয়েছি। এ বছর একজন অনুবাদক এসেছেন। আবদুল্লাহ আল ফারুককে। আমাদের প্রকাশনীতে ওনার অনেক বই আছে এবং প্রকাশনী তার দ্বারা নানাভাবে উপকৃত।

তবে আগামী বছর থেকে আমাদের প্রকাশনীর নয় এমন লোকও নির্বাচিত করা হবে। হয়তো সেটা অর্ধেক অর্ধেক হবে।

আওয়ার ইসলাম : লেখক নির্বাচনে আপনাদের কোনো নির্বাচনী প্যানেল আছে কী?

ওবায়দুল্লাহ : আমাদের প্রকাশনীর তিনজন উপদেষ্টা রয়েছেন, মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, মাওলানা যাইনুল আবিদীন, মাওলানা ইয়াহয়া ইউসুফ নদভী। আমি মনে করি, উনারা আমাদের প্রকশানীর প্রাণ। আমরা লেখক নির্বাচনের তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা গ্রহণ করি।

আওয়ার ইসলাম : যে মান ও গুণের বিবেচনা আপনারা করছেন। আগামী দশ বছর সে ‍গুণ ও মান রক্ষা করে সম্মননা প্রদান অব্যাহত রাখা যাবে কী?

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ : আমরা আশাবাদী। নতুন নতুন লেখক আসছে। এখন প্রায় শ’খানেক লেখক নিয়মিত ইসলাম বিষয়ক লেখালেখি করছেন। লেখক সংকট পড়বে এটা আমার মনে হয় না।

আওয়ার ইসলাম : আপনাদের মূল ফোকাস তো সৃজনশীল লেখকের উপর। কিন্তু আমাদের বেশির ভাগ লেখকই কিন্তু অনুবাদক লেখক। সে ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না?

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ : সৃজনশীল লেখকের অভাব আমরা বোধ করি। বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিতও।

আওয়ার ইসলাম : আপনাদের এ আয়োজনে মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন?

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ : মানুষের প্রতিক্রিয়াঅনেক বেশি। আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। তাদের অভিব্যক্তি দেখলে মনে হয়, আরও পাঁচ বছর আগেই তা করা দরকার ছিলো। আরও দশজন প্রকাশককে একত্র করে বড় আয়োজনে করা দরকার ছিলো।

আমরা এর কিছুই করিনি। তাতেও যে সাড়া নিঃস্বার্থ সাড়া পেয়েছি। অভিভূত হওয়ার মতো। একজন লেখকের কতো ব্যস্ততা থাকে। তাদেরকে আমরা ভাড়াও দেই না। সামান্য আপ্যায়ন, একটু হাসিমুখ এর মূল্যায়ণ তারা অনেক বেশি আন্তরিকতার মাধ্যমে পরিশোধ করেন। আমরা বিস্মিত।

অন্যান্য প্রকাশকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

আওয়ার ইসলাম : মানুষের ভালোবাসা পেয়ে আপনার অনুভূতি কী?

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ : আমার...? প্রকাশের ভাষা নেই। ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। শুধু বলবো ভালোবাসাই আমার আমার মূল অনুপ্রেরণা। এটা পাওয়ার জন্যই যতোদিন পারবো আয়োজনটা অব্যাহত রাখবো। ইনশা আল্লাহ!

আওয়ার ইসলাম : ইসলামি ধারার লেখক ও পাঠকগণ আপনাদের বইমেলা নিয়ে বিপুল প্রত্যাশার কথা প্রকাশ করেছেন। তাদের স্বপ্ন একদিন হয়তো এটি একুশে বইমেলার মতো মানুষের প্রাণে সাড়া জাগাবে। বই নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

[caption id="" align="alignnone" width="825"]Image may contain: 3 people, beard and hat বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের পক্ষ থেকে পদক নিচ্ছেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ[/caption]

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ : আমাদের বইমেলাকে একুশে মেলার সঙ্গে তুলনা করা যায় না। ওটার তুলনায় এটা কিছুই না। কিন্তু সবকিছুর একটা বিকল্প হয়। একুশে বইমেলার বিপরীতে যদি একটি এমন মেলা হয় যেখানে সুন্দর পরিবেশ থাকবে। সুন্দর সুন্দর এবং ইসলামি বই থাকবে।

ইসলামি বইয়ের সংখ্যা এখন কম না! কয়েক হাজার ইসলামি বই বাজারে আছে। প্রত্যেক প্রকাশক যদি তাদের ভালো ভালো বইগুলো বেছে বেছে এক জায়গা এক সময় উপস্থাপন করেন তাহলে তা অবশ্যই প্রসংশনীয় কাজ হবে। আমাদের জন্য আনন্দের কাজ হবে।

ইসলামি ধারার অন্যান্য প্রকাশকগণ যদি এগিয়ে আসেন, তবে কোনো মাদরাসা প্রাঙ্গণে আমরা আরও বড় পরিসরে এ আয়োজনটা করতে পারবো। একুশের বইমেলার মতো এক মাস ব্যাপী না হোক আমরা যদি সুন্দরভাবে এক সপ্তাহব্যাপী করতে পারি তাও কম হবে না।

আশা করি, আগামী দুয়েক বছরের মধ্যেই হবে। আমরা বিকল্প কিছু করতে পারবো।

আওয়ার ইসলাম : সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা আছে কী?

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ : হ্যা, আছে। খুব তাড়াতাড়িই আমরা লেখক, প্রকাশক ও মিডিয়া কর্মীদের নিয়ে বসবো। আগামীর আয়োজনটা আরও সুন্দর কীভাবে করা যায় তা নির্ধারণ করতে।

আওয়ার ইসলাম : পাঠক-লেখকের সাড়া তো পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশকগণ আপনার উদ্যোগকে কোন চোখে দেখছেন?

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ : প্রকাশকরাও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। বইঘর, রাহনুমা ও মাকতাবাতুল হেরা আমাদের সাথে কথা বলেছিলেন আমাদের মেলায় যুক্ত হওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের সীমাবদ্ধতার জন্য তাদের আমরা আমন্ত্রণ করতে পারি নি।

[caption id="" align="aligncenter" width="960"]Image may contain: 3 people, indoor বাড্ডায় নিজের প্রকাশনীতে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ[/caption]

আওয়ার ইসলাম : একটা ভিন্ন প্রশ্ন। অন্যদিন যদি একজন হুমায়ুন আহমদকে পৃষ্ঠপোষণ করতে পারে, আমাদের অঙ্গণের বনেদি প্রকাশনীগুলো কেনো লেখকের দায় নিতে পারছেন না?

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ : এর পেছনে অনেক কারণ আছে। তবে আমি মনে করি, এখন ইসলামি বইয়ের বাজার যে পরিমাণ বিস্তৃত হয়েছে তাতে একজন প্রকাশক পারেন একজন ভালো লেখকের দায়িত্ব নিয়ে তাকে নির্ভাবনা করে দিতে। কারণ, আমাদের অঙ্গণে এমন অনেক লেখক আছেন যাদের বই এক বছরে কয়েক এডিশন চলে। তাহলে প্রকাশক কেনো তা পারবে না?

সামনে অবশ্যই প্রকাশকগণ লেখকদের সর্বোচ্চ স্বার্থ বিবেচনা করবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।

আওয়ার ইসলাম : আপনার সব শুভ উদ্যোগ এবং আজকের সাক্ষাৎকারের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ : আওয়ার ইসলাম ও তার পাঠক এবং আমাদের অঙ্গণের সব লেখক, পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদেরকে ধন্যবাদ।

আরআর

rokon_book2


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ