বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


নিষিদ্ধ ৭ মুসলিম দেশের তালিকা ওবামা প্রশাসনেরই তৈরি: ইমাম কাজী কাইয়্যুম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

3

ইমাম কাজী কাইয়্যুম। জন্ম ১৯৫৯ সালে সিলেটের বিয়ানি বাজার এবং এখানেই বেড়ে ওঠেন তিনি। ১৯৯১ সালে পাড়ি জমান আমেরিকায়। ইউএস ইসলামিক কলেজে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা সম্পন্ন করে ১৯৯৬ সালে যোগ দেন বিয়ানি বাজার বাঙালি কমিউনিটির প্রতিষ্ঠিত মসজিদে। সেখানে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন ২০০৪ সাল পর্যন্ত। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজসেবামূলক সংগঠন মুহাম্মদী কমিউনিটি সেন্টার। ২০১০ সালে তার হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যান্টি ট্যাররিজম এ্যওয়ারনেস ইউনিট। বর্তমানে সমাজসেবা কাজেই ব্যস্ত আছেন তিনি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন জাতিসংঘের শান্তি সেমিনারের প্রধান আলোচক হিসেবে।

আমেরিকায় দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটানো এ মুসলিম নেতার কাছে আওয়ার ইসলাম জানতে চেয়েছিলো সেখান মুসলিমদের সর্বশেষ অবস্থা এবং ট্রাম্পের মুসলিম বিরোধী কর্মকাণ্ডের বাস্তবচিত্রসহ অনেক কিছু। দীর্ঘ আলোচনায় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তা সম্পাদক আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : আজ বিশ্বব্যাপী যে মুসলিম বিদ্বেষ ও ইসলামভীতি দেখা দিয়েছে তার কারণ কী?

ইমাম কাজী কাইয়্যুম : আমার মনে হয়, এজন্য প্রধানত আমরাই দায়ী। পৃথিবীর কোনো জাতির মধ্যে এতোটা আত্মকলহ আছে বলে আমার মনে হয় না। আপনি দেখেন, আমাদের মধ্যে শিয়া-সুন্নি, মাজহাবি-লা মাজহাবি ইত্যাদি কতো রকম বিরোধ রয়েছে।

শুধু শিয়া-সুন্নি দ্বন্ধের কারণে আজ মধ্যপ্রাচ্যের কী করুণ দশা বলুন! আত্মকলহ ও উগ্রবাদের কারণে আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি।

এটাও ঠিক আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচারও রয়েছে। আমাদের প্রতি জুলুম করা হচ্ছে কিন্তু অপপ্রচারের সুযোগ তো আমরাই দিচ্ছি। জুলুম করার সুযোগও আমরা দিচ্ছি। নাকি?

আওয়ার ইসলাম : আমেরিকার মুসলিমগণ ধর্মপালনে কতোটা স্বাধীন?

ইমাম কাজী কাইয়্যুম : ইসলামের মৌলিক বিধানসমূহ যেমন, নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ, পর্দা, আকিকা, কুরবানি ইত্যাদির ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। ইচ্ছে করলে মসজিদ নির্মাণ করা যাচ্ছে, সেমিনার সভা করতে পারছি। একটি অমুসলিম দেশে এটুকুই বা কম কী?

 

[caption id="attachment_26959" align="aligncenter" width="838"]4 ঈদের নামাজের মুসল্লিদের সঙ্গে[/caption]

ওয়ার ইসলাম : ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর অবস্থার কতোটা অবনতি হয়েছে?

ইমাম কাজী কাইয়্যুম : ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর অবস্থার কিছুটা অবনতি তো হয়েছেই। শুধু মুসলিমগণ নয়; সব অভিবাসীগণই আতঙ্কিত। বিশেষত যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই।

আওয়ার ইসলাম : ট্রাম্পের এই মুসলিম বিরোধী মনোভবের কারণ কী?

ইমাম কাজী কাইয়্যুম : এ ব্যাপারে শুধু ট্রাম্প নয়; বরং আমেরিকান জনগণের বৃহৎ একটি অংশ ইসলামভীতিতে আক্রান্ত। কারণ, ট্রাম্প তার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ করছে। জনগণ কিন্তু তার মতামত ও অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছে।

এজন্য আমরাই দায়ী। আমাদের নৈতিক পতনের কারণেই অমুসলিমগণ আমাদের প্রতি এখন আর শ্রদ্ধাশীল নয়। আমি একটি বই পড়েছিলাম। নাম ‘সুকুতে বাগদাদ সে সুকুতে ঢাকা’ বইটাতে বাগদাদের আব্বাসী খেলাফতের পতনের পর থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রেক্ষাপট আলোচিত হয়েছে। লেখক প্রমাণ করেছেন, আমাদের নৈতিক পতনের কারণেই রাজনৈতিক ও সামাজিক পতন হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : আমেরিকার মুসলিম কমিউনিটির সাথে অন্যান্য কমিউনিটির পারস্পারিক সম্পর্ক কেমন?

ইমাম কাজী কাইয়্যুম : আমেরিকার মুসলিম কমিউনিটির সাথে অন্যান্য কমিউনিটির সম্পর্ক ভালো। তারা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে।

এখানে মাঝে মাঝে আন্তধর্মীয় বৈঠক হয়। এতে পরস্পরের সাথে মত বিনিময়ের সুযোগ হয়। ২০১২ সালে জেকসন হাইটস-এর ইহুদি কমিউনিটির সেনেগগে মুসলিমগণ ঈদের নামাজ আদায় করে। এর মাধ্যমে আমরা বিশ্ববাসীকে ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছি।

[caption id="attachment_26960" align="aligncenter" width="847"]5 রমজান উপলক্ষ্যে আয়োজিত আন্তধর্ম আলোচনা শেষে ভার্জিনিয়ার খ্রিস্টান মিশনারির প্রতিনিধিদের সঙ্গে।[/caption]

কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি করছে বাইরের কিছু মতাদর্শ। যেমন, আইএস, আল কায়েদাসহ উগ্র দলগুলো। এসব দল তাদের প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সমাজে উগ্রবাদের জন্ম দিচ্ছে। ফলে আমেরিকান সমাজে মুসলিমগণ ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।

আওয়ার ইসলাম : মিডিয়ার ভাষ্য ও প্রচারণা থেকে বোঝা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প যা কিছু করছে তার পেছনে মুসলিমবিদ্বেষই বেশি কাজ করছে। বিষয়টা কতোটা বাস্তব?

ইমাম কাজী কাইয়্যুম : ডোনাল্ড ট্রাম্প বার বার বলছেন এবং এটাই বাস্তব যে, তার পদক্ষেপ শুধু মুসলিমদের বিরুদ্ধে নয়। যেমন অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতারে চলমান অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের ২ ভাগও মুসলিম না।

আরেকটি বিষয় হলো, এখন যে বিধি-বিধান প্রয়োগ করা হচ্ছে তার অধিকাংশ ওবামা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। তারা প্রয়োগের সাহস করে নি। ট্রাম্প তা করেছে।

যেমন, যে ৭টি মুসলিম দেশের অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাদের তালিকা ওবামা প্রশাসনই প্রস্তুত করে রেখে গেছে। গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে এ তালিকা তৈরি হয় ওবামা প্রশাসনের নির্দেশেই।

আওয়ার ইসলাম : আপনি বলতে চাচ্ছেন ট্রাম্প মুসলিম বিদ্বেষী নয়?

ইমাম কাজী কাইয়্যুম : আমি তাকে ঠিক বিদ্বেষী বলবো না। আমি বলবো, তার ভেতর ইসলামভীতি রয়েছে। সে মনে করছে, কোনো কোনো মুসলিম যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

এটাও ঠিক আমেরিকায় এমন একাধিক গ্রুপ রয়েছে যারা ট্রাম্পের ইসলামভীতিকে মুসলিম সমাজের বিপক্ষে কাজে লাগাতে চাচ্ছে। তারা মুসলিম বিদ্বেষী। তারা মুসলমানের অকল্যাণ চায়।

[caption id="attachment_26961" align="aligncenter" width="849"]2 সচেতনতামূলক সমাবেশে[/caption]

আওয়ার ইসলাম : ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন, তাদের দাবি কী?

ইমাম কাজী কাইয়্যুম : তাদের দাবি হলো, কোনো অপরাধের জন্য কোনো দেশ বা জাতিকে দোষারোপ করা যায় না। নির্দিষ্ট ৭টি দেশ নিষিদ্ধ হলে সে দেশ ও জাতিকে অপমান করা হয়। সন্ত্রাস ও উগ্রতার জন্য কোনো গ্রুপ ও সংগঠন নিষিদ্ধ হতে পারে। দেশ বা জাতি নয়।

আওয়ার ইসলাম : আপনি যুক্তরাষ্ট্রে আন্টি ট্যাররিজম এ্যওয়ারনেস ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা। আপনার এ সংগঠনের ইতিহাস ও উদ্দেশ্য কী?

ইমাম কাজী কাইয়্যুম : আন্টি ট্যাররিজম এ্যওয়ারনেস ইউনিট মূলত মুহাম্মদী কমিউনিটি সেন্টারের একটি ইউনিট। নয় এগারোর পর যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সমাজের ব্যাপারে যখন নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তার প্রেক্ষাপটে সামাজিক কল্যাণ, বিশেষত সিলেট বিয়ানি বাজারের বাংলাদেশিদের কল্যাণে ২০০৫ সালে মুহাম্মাদি কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়।

[caption id="attachment_26962" align="alignright" width="269"]1 ইসলাম প্রচারেও নেই বাঁধা[/caption]

এর ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্টি ট্যাররিজম এ্যওয়ারনেস ইউনিট।

আওয়ার ইসলাম : আমাদের কমিউনিটি সেন্টার ও এ্যওয়ারনেস ইউনিটের প্রধান প্রধান কাজ ও সেবাগুলো কী?

ইমাম কাজী কাইয়্যুম : মুহাম্মদী ইউনিটের প্রধান কাজ হলো, সামাজসেবা। আমরা এখানে একটি ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেছি, গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণ করি, ধর্মীয় দিবস উদযাপনের ব্যবস্থা করি, শীতে শীতবস্ত্র বিতরণ করি, নবাগতদের সহায়তা করি।

এ্যওয়ারনেস ইউনিটের মূল কাজ হলো, মুসলিম তরুণ ও যুবকগণ যেনো কোনো চরমপন্থার সাথে জড়িয়ে না পরে সে লক্ষ্যে কাজ করছে।

সাথে সাথে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, ইসলাম যে শান্তির ধর্ম তা সাধারণ আমেরিকানদের সামনে তুলে ধরা। ইসলামের সঠিক বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া।

আরআর

rokon_book2


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ