মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ইসির নতুন নির্দেশনা ইরান সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম: চীন বান্দরবানে দুর্গম পাহাড়ে অভিযানে কুকি-চিনের ৯ সদস্য গ্রেফতার আজমিরীগঞ্জে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কমিটি গঠন উদীচীর কর্মকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিব্রত: ডিএমপি অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিজ্ঞাপন নীতিমালা শিগগিরই বাস্তবায়ন : তথ্য প্রতিমন্ত্রী ইরানের হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে সহায়তা করা নিয়ে যা বলছে সৌদি মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে বাংলাদেশে শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে যোগদান করলেন মুফতি মকবুল হোসাইন কাসেমী খুলনায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলন নেতার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

ইতালির রেডিওতে আমরাই প্রথম বাংলা অনুষ্ঠান শুরু করি: পলাশ রহমান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

palash_rahman7

পলাশ রহমান। লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় যিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। গড়ে তুলেছেন বৃহৎ ইউনিটি। খুলনায় বেড়ে উঠা পলাশ রহমান বর্তমানে থাকেন ইতালিতে। সেখানে কাজের পাশাপাশি বাংলাকে ছড়িয়ে দিতে নিয়েছেন নানান উদ্যোগ। দেশের বাইরে থাকলেও তিনি সর্বদাই ভাবেন দেশকে নিয়ে। নীতি ও নৈতিকতার চরম অবক্ষয়ে তিনি মর্মাহত হন। সমাজের অধপতনগুলো তাকে নতুন কিছু ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে।

৩০ জানুয়ারি ইতালি প্রবাসী এ লেখক এসেছিলেন  আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ে। এ সময় তার সঙ্গে কথা বলেন রোকন রাইয়ানআতাউর রহমান খসরু

লেখালেখির শুরু করেন কীভাবে?

পলাশ রহমান : লেখালেখির শুরু হয় স্কুল জীবন থেকেই। ক্লাস সিক্স-এ থাকতেই আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। খুলনার একটি লোকাল পত্রিকায় ছয় লাইনের ছড়া। এরপর আমি বিভিন্ন পত্রিকায় চিঠিপত্র ও পাঠকের কলাম বিভাগে লেখা পাঠাতাম। সে লেখাগুলোর অধিকাংশই ছাপা হতো না। আমি হতাশ হই নি। লেগে ছিলাম। এক সময় দেখা গেলো যারা তাদের চিঠিপত্র বিভাগে আমার লেখা ছাপে নি তারা উপসম্পাদকীয় পাতায় আমার কলাম ছেপেছে।

ছড়া দিয়ে শুরু করে কলামের গেলেন কীভাবে?

পলাশ রহমান : ছড়া দিয়ে শুরু করেছিলাম। ছড়া কবিতা লিখেছি, চর্চা করেছি অনেক দিন। স্কুল জীবনে বন্ধুদের চিঠি লিখে দিয়েছি ছন্দে ছন্দে। তখন ভাবনা ছিলো কবি হওয়ার। পুরান ডায়েরি খুললে অনেক ছড়া-কবিতা পাওয়া যাবে।

এক সময় এসে আমার মনে হলো, কবিতার জগৎটা আমার না। ইচ্ছে হলো সাংবাদিক হওয়ার। মিডিয়ায় কাজ করলাম। রিপোর্ট লিখলাম। কিন্তু সাংবাদিকতাও আমার না। তখন কলাম লেখা শুরু করলাম। এখন আল হামদুলিল্লাহ! বাংলাদেশের যে কোনো জাতীয় দৈনিকে আমার কলাম ছাপে। সেটা পরিচয়ের জন্য হোক বা আমার লেখার মানের জন্য হোক। ইদানিং মনে হচ্ছে, কলামটাও আমার জায়গা না। আমি মনে হয় এখনো স্থির হতে পারলাম না।

কবিতা ছাড়লেন কেনো? কঠিন মনে হয়েছিলো?

পলাশ রহমান : ঠিক কঠিন না। আপন করে নিতে পারি নি। মনে হয়েছে, কবি প্রতিভা নিয়ে আমি জন্মাই নি।

লিখছেন অনেক দিন বই করছেন না কেনো?

পলাশ রহমান : অনেক দিন লিখছি ঠিক। কিন্তু এখনো আমার মনে হয় না মলাটবদ্ধ হওয়ার মতো পরিক্কতা আমার মধ্যে তৈরি হয়েছে। তাই বই করি না।

আমার প্রকাশক বন্ধুরা প্রায় বলে, তুমি নতুন কলাম না লিখো অন্তত পুরানগুলো ঠিক করে দাও। আমরা বই করি। কিন্তু আমার মনে হয়, আমার অপেক্ষা করা উচিৎ।

আরেকটা কারণ, সমাজের প্রতি আমার যা দেয়ার তা হয়তো আমি দিতে পারছি না। কমিটমেন্টটা রক্ষা করতে পারছি না। যেমন, আমি আজ একটা টকশোতে অংশ নিয়েছিলাম। তারা অনুষ্ঠানের আগেই বলে দিলো, আমি কী বলতে পারবো এবং কী বলতে পারবো না। আমি বলেই ফেললাম, তাহলে আমাকে একটা স্ক্রিপ্ট লিখে দেন সেটা পড়ে শোনাই।

আমি যদি আমার বইতে আমার কথাটাই লিখতে না পারি তাহলে নাটক করে কী লাভ?

আপনি একজন লেখক। পাঠকের ভালোবাসা কেমন লাগে?

পলাশ রহমান : সুখ সুখ লাগে অবশ্যই। একটা লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর যখন পাঠক সাড়া দেয়, আলোচনা করে, অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তখন ভালো লাগে।

যেমন, সেদিন হুট করে একটি ছেলে আমাকে বললো, আপনার নাম কী? বললাম, পলাশ। থাকেন কোথায়? খুলনা। কিছুক্ষণ ভেবে বললো, আপনি পলাশ রহমান? আপনার অনেক লেখা পড়েছি। একটানা অনেক কথাই সে বলে ফেললো। এ অভিব্যক্তিগুলোর সুখকর।

Image may contain: 1 person, suit

[caption id="" align="alignnone" width="800"]Image may contain: 11 people, people standing ভেনিস বাংলা স্কুলের ছাত্রদের সঙ্গে[/caption]

সবুজ শ্যামল সম্ভাবনার বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দিলেন কেনো?

পলাশ রহমান : বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনার দেশ ঠিক। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি এখনো কোনো সুশাসক পায় নি। ফলে সুশাসনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই আমার মতো অনেক তরুণ ও যুবককে দেশ ভবিষ্যৎ গড়ার মতো উপযুক্ত আনুকূল্য দিতে পারে নি। আমরা অনেকটা জীবিকার তাগিদেই দেশ ছেড়েছি।

তবে পৃথিবীর যেখানেই থাকি না কেনো হৃদয়ে আমাদের বাংলাদেশ থাকেই। এটা কখনো ভুলবার নয়।

আপনি ইতালিতে থাকেন। ওখানকার জীবন এবং বাংলাদেশের জীবনের মধ্যে পার্থক্য কেমন?

পলাশ রহমান : আসলে দুই দেশের জীবন ও জীবনমান সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানের পরিবার ও সমাজব্যবস্থা, ধর্ম ও সংস্কৃতি, মানুষের মন ও মানসিকতা, আইন-কানুন বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বলে বোঝানো কঠিন।

ধরুন! আজ আমি আসার সময় আমার বন্ধুকে বলছিলাম, ঢাকা শহরের রাস্তায় চলা আর মানুষের উপর অত্যাচার করা সমান কথা। ট্রাফিক জ্যাম পৃথিবীর সব দেশেই আছে। কিন্তু এমন অসহনীয় মাত্রা খুব বেশি দেশে নেই।

প্রবাস জীবন কতোটা উপভোগ করছেন?

পলাশ রহমান : উপভোগের জায়গা থেকে আমার ভালোই লাগে। আমি আমার ধর্ম পালন করতে পারি, আমি আমার সংস্কৃতি চর্চা করতে পারি। কেউ বাধা দেয় না। পাশাপাশি আমি যে সামাজিক নিরাপত্তা পাচ্ছি, সেটা আমাদের দেশে পাবো না।

তারপরও আমার দেশ তো আমার দেশ। আমার মা। এখানে ছাড় দেয়ার খুব সুযোগ নেই। দুই অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ইতালিয়ান সমাজের কোন জিনিসটা আপনাকে মুগ্ধ করে?

পলাশ রহমান : আমি প্রতিদিন ট্রেনে যাতায়াত করি। কয়েক দিন আগের কথা, ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড়। এক মহিলা ফার্স্ট ক্লাস বগিতে গিয়ে বসেছে। টিটি এসে মহিলাকে উঠিয়ে দিতে চায়। তখন মহিলা বলেন, আমি টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছি বসার জন্য। তুমি আমাকে বসতে দিবে এটা আমার অধিকার। কোথায় দিবে সেটা তোমার সমস্যা। দরকার হলে ট্রেনের বগি বাড়াও। টিটিও নাছোড় বান্দা। তখন মহিলা বললো, তোমার কোড নম্বর দাও, তোমার সাথে আমার আদালতে দেখা হবে। এই যে মানুষের অধিকার সচেতনতা এটা আমার ভালো লাগে।

আমাদের দেশের জনগণ যদি অধিকার সচেতন হতো, তাহলে অনেক অন্যায় কমে যেতো। শাসক ও সমাজের শোষক শ্রেণি এতো প্রশ্রয় পেতো না।

সেখানে দুর্নীতি ও অন্যকে ঠকানোর চিন্তা মানুষের মধ্যে কতোটা প্রবল?

পলাশ রহমান : দুষ্টু প্রকৃতির মানুষ পৃথিবীর সব দেশেই আছে। আমাদের সমাজে বেশি, ওদের সমাজে কম। পার্থক্য হলো, এখানে অন্যায় করে পাড় পেয়ে যায়। ইতালিতে অন্যায় করে পাড় পায় না।

কিছু দিন আগে ইতালির অর্থমন্ত্রীর স্ত্রী গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলো। এক ট্রাফিক পুলিশ তার গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্স দেখতে চায়। তার লাইসেন্স ছিলো নয় ছিটের গাড়ি চালানোর, সে চালাচ্ছিলো বারো সিটের গাড়ি। পুলিশ তার লাইসেন্স বাতিল করে দিলো এবং সাত হাজার ইউরো জরিমানা করলো।

সাধারণ মানুষ হলে হয়তো দুইশো ইউরো জরিমানা করা হতে। কিন্তু তিনি ভিআইপি হয়ে আইন লঙ্ঘণ করায় তাকে উচ্চ হারে জরিমানা করা হয়।

[caption id="" align="alignnone" width="960"]Image may contain: 1 person, indoor রেডিও বেইজে বাংলা অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন[/caption]

বাংলাদেশের সমাজ পাল্টানোর জন্য কী করা প্রয়োজন?

পলাশ রহমান : প্রথম হাত দিতে হবে শিক্ষা ক্ষেত্রে। সন্তানকে নৈতিক ও মানবিক শিক্ষা দিতে হবে। ওদের স্কুলে প্রথম দু‘চার বছর কোনো একাডেমিক বই পড়ানো হয় না। শিশুদের ফিজিক্যালি রাস্তায় নিয়ে যায় তারপর তাদের হাঁটা শেখায়, মানুষের প্রতি আচরণ শেখায়, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা শেখায়। এভাবে অক্ষর শেখানোর আগে ওদেরকে আচরণ শেখায়।

প্রবাসে বাংলা চর্চা করেন কীভাবে?

পলাশ রহমান : ওখানে বাংলা চর্চার কোনো সুযোগ নেই। আমরা দেশ থেকে ফেরার সময় বাংলা বই, পত্র-পত্রিকা নিয়ে যাই। নেটেও পর্যাপ্ত ইনফরমেশন পাওয়া যায়। এগুলোর উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগতভাবেই বাংলা চর্চা করতে হয়।

আমরা যারা প্রবাসে থাকি, আমরা এক প্রকার দাসত্বই করি। অন্যের দেশে অন্যের কাজ করে লেখালেখি করা খুব কঠিন। কিন্তু আমি অন্যদের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে একটু ভালো অবস্থানে থাকায় আমার লেখালেখি করার সুযোগ হয়।

প্রবাসে বাংলার প্রসারে আপনি কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছৈন?

পলাশ রহমান : বাংলার প্রসারে খুব বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়নি। তবে কিছু করার চেষ্টা সবসময় মনের মধ্যে থেকেছে। ওখানে একটি বাংলা স্কুল আছে নাম ‘ভেনিস বাংলা স্কুল’। ওটার সাথে আমি জড়িত আছি। স্কুল কমিটির উপদেষ্টা।

এখানে আমরা বাচ্চাদের কিছু বাংলা শেখানোর চেষ্টা করি। পুরোপুরি শেখানো সম্ভব হয় না।

আপনি ওখানকার একটি রেডিওতে কাজ করেন। রেডিওটার ধরন ও প্রকৃতি কেমন?

পলাশ রহমান : আমরা যে রেডিওতে কাজ করি তার নাম ‘রেডিও বেইজ’। ২০০৪ সালে আমরা কয়েক বন্ধু মিলে শুরু করি। তখন ইউরোপে কোনো বাংলাদেশি চ্যানেল দেখা যেতো না। অনলাইন মিডিয়াও এতো ছিলো না। ইতালিতে ইতালিয়ান ভাষাই ব্যবহৃত হয়। ইংরেজি ভাষা সবাই কমবেশি জানে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যেয়েই ইতালিয়ান ভাষা রপ্ত করা কঠিন। সুতরাং বাঙালিদের বাংলা ভাষায় কিছু তথ্য জানানো প্রয়োজনবোধ করলাম।

এ চিন্তা থেকে আমরা স্থানীয় ১২টা রেডিওর সঙ্গে কথা বলি। মাত্র দুটো রেডিও আমাদের ডাকে সাড়া দেয়। দুটোর একটা হলো রেডিও বেইজ। রেডিও বেইজে আমরা প্রথমে পাঁচ মিনিটের বাংলা সংবাদ দিয়ে শুরু করি। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা এখন প্রতিদিন ৩০ মিনিটের একটা অনুষ্ঠান করি। এখন অবশ্য বাংলা খবরটা করি না।

[caption id="" align="alignnone" width="818"]Image may contain: 1 person, sitting ইতালিতে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন[/caption]

শ্রোতা কেমন পান?

পলাশ রহমান : শুরু দিকে আমাদের শ্রোতা ছিলো প্রায় ১২ হাজার। কমিউনিটির প্রায় সবাই শুনতো তখন। কারণ, তখন বিকল্প কোনো মাধ্যম ছিলো না। এখন বিকল্প মাধ্য হওয়ায় শ্রোতা কিছুটা কমেছে। তবে খুব বেশি কমেছে বলা যাবে না।

ইতালিতে বৈধ ও অবৈধ সব মিলিয়ে কতো সংখ্যক বাঙালি আছে?

পলাশ রহমান : আমার মনে হয়, বৈধ ও অবৈধ শব্দ দুটো এখানে বহুল ব্যবহৃত হলেও খুব গ্রহণযোগ্য নয়। বলা ভালো, বৈধ ডকুমেন্ট আছে এমন এবং বৈধ ডকুমেন্ট নেই এমন। যাক ‍পুরো ইতালিতে প্রায় দুই লাখ বাঙালি আছে।

দেশে ফেরার ইচ্ছে আছে কি?

পলাশ রহমান : পুরোপুরি ঠিক উত্তর দেয়া কঠিন। আগে ভাবতাম দেশে ফিরে আসবো। কিন্তু এখন ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথাও মাথায় আসে। তবুও মনে হয় একদিন আমি হয়তো ফিরে আসবো। কারণ, মাটির সাথে আমার মায়ের গন্ধ মিশে আছে।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ