শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


হরতালের শরয়ি বিধান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

hortalআওয়ার ইসলাম : বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হরতাল। হরতাল হয় ন্যায্য ও অন্যায্য অনেক দাবির পক্ষে। হরতাল হয় শান্তিপূর্ণ এবং তা হয় ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ ও নিরীহ মানুষের ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে। তাহলে হরতালের হুকুম কী?

বর্তমান প্রচলিত হরতাল কর্মসূচীতে শরীয়ত বিরোধী বহু কারণ বিদ্যমান থাকায় তা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। তবে  ওইসব কারণ থেকে মুক্ত থেকে কোনো দ্বীনী কিংবা ন্যায্য দাবির পক্ষে বা অন্যায়ের প্রতিবাদে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামত তৈরি করে হরতাল পালন করলে তা অবৈধ নয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, হরতাল শরীয়ত নিষিদ্ধ কারণ থেকে মুক্ত হলে শুধু তা একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হওয়ায় অবৈধ নয়। কেননা, এতে শরীয়তে কাম্য একাধিক বিষয় রয়েছে যেমন হরতাল অর্থ অসহযোগিতা, কুরআন মাজীদে গুনাহ এবং অন্যায় কাজে অসহযোগিতার বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। হরতাল মানে জালিমের কাছে ন্যায়ের বার্তা পৌছানো। হাদীস শরীফে যাকে উত্তম জিহাদ বলা হয়েছে। হরতাল মানে অসৎ কাজে বাধা দান, কুরআন-হাদীসে এবিষয়ে স্পষ্ট আদেশ দেওয়া হয়েছে। হরতাল মানে জালিমকে তার জুলুম থেকে বিরত রাখা, এব্যাপারেও হাদীসে সুস্পষ্ট আদেশ রয়েছে।

পক্ষান্তরে হরতাল মানে রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়। এবং হরতাল মানেই ফাসাদ ফিল আরয অর্থাৎ ফিতনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি নয়। তাই মৌলিকভাবে হরতাল কর্মসূচী অবৈধ নয়। বরং উদ্দেশ্য ভাল হলে এবং শরীয়ত নিষিদ্ধ সকল বিষয় থেকে মুক্ত হলে তা কিছু শর্ত সাপেক্ষে বৈধ হবে।

১. গ্রহণযোগ্য সংখ্যক দ্বীনদার, ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিগণের মতামতের দ্বারা সিদ্ধান্ত গৃহিত হতে হবে, যে বিষয়ে হরতাল ডাকা হয়েছে তাতে জনগণের স্বার্থ নিহিত রয়েছে এবং তারা এবিষয়ে একমত হবে। আর যদি কোনো দ্বীনী বিষয় হয় তাহলে সেক্ষেত্রে গ্র্হণযোগ্য আলেমগণ একমত হতে হবে।

২. হরতাল ডাকার পূর্বে দাবি-দাওয়া পূরণের প্রাথমিক পর্যায় ও পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে। যেমন- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি কিংবা প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাদের বুঝিয়ে দাবি মানানোর চেষ্টা করা। এবং সঠিক বিষয়টি উপস্থাপন করা।

৩. হরতাল চলাকালে অন্যায়ভাবে কারো জান-মাল ক্ষতিগ্রস্থ্ না হয় এবং শরীয়ত বিরোধী কোনো কর্মকান্ড না হয় সেবিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত ও কর্মপন্থা গ্রহণ করা।

হরতালে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গাড়ি, দোকান পাট, কারখানা ইত্যাদি ভাংচুর করা, সরকারের সম্পদ বিনষ্ট করা, বোমাবাজী  এবং গোলাগুলি করা সম্পূর্ণ হারাম। শরীয়তে এজাতীয় কর্মকান্ডের কোনো সুযোগ নেই। অবশ্য উপরোক্ত শর্তসমূহ মেনে হরতাল করলে তা বৈধ। এবং তাতে সহযোগিতা করা সকলের দায়িত্ব। যদি কেউ এমন হরতালের বিরোধিতা করে কিংবা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে তাকে গ্রহণযোগ্য পন্থায় বাধা দেওয়া উচিত। আমাদের জানা মতে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ, দাবি আদায় কিংবা চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে হরতালের বিকল্প ফলপ্রসু কোনো পদ্ধতি নেই।

সূত্র : জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া-এর ওয়েবসাইট থেকে গৃহিত।

দলিল দেখুন : https://rahmaniadhaka.com/?cat=18


সম্পর্কিত খবর