শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


ব্যস্ত তিন প্রচ্ছদ শিল্পীর সঙ্গে কথোপকথন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ব্যস্তময় ভাবনায় লেখক জন্ম দেয় বই। বইয়ের দেহকে সুন্দর করে তোলে প্রচ্ছদশিল্পী। বই ও লেখকের মাঝে প্রচ্ছদশিল্পীর অন্তর্ভুক্তিটা জরুরি এজন্যই। সারা বছর যেমনই হোক, প্রাণের বইমেলা কেড়ে নেয় প্রচ্ছদশিল্পির ঘুম। বইয়ের জন্য মানানসই পোশাক নির্মাণে হেলা করা শিল্পবিরোধি। তাই দিন-রাত এক করে প্রচ্ছদশিল্পিরা নির্মাণ করেন একেকটি বইয়ের পোশাক।

২০১৭ অমর একুশে বইমেলার বইয়ের কভার নির্মাণে ব্যস্ত তিন শিল্পীর সঙ্গে প্রচ্ছদশিল্প ও শিল্পীর নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন আওয়ার ইসলাম প্রতিবেদক হাসান আল মাহমুদ

suhag_parvej

সোহাগ পারভেজ। সমকালিন প্রচ্ছদশিল্পিদের অন্যতম পরিশ্রমী শিল্পী। প্রচ্ছদ জগতে প্রবেশ করেন ২০০৮ সালে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির 'শিশু' পত্রিকার মাধ্যমে তাঁর সেই যে যাত্রা শুরু, পেছনে ফিরে আর তাকাননি। এগিয়ে চলছেন দুর্দান্ত গতিতে। সৃষ্টি করে যাচ্ছেন একেকটি অমর শিল্প। এ পর্যন্ত তাঁর হাত দিয়ে ২০০০ প্রচ্ছদ অতিক্রম করেছে। আসুন শোনা যাক তার কথা।

এ কাজ কেন করেন নেশা না পেশার তাগিদে?
না, আসলে আমি মূলত ছবি আঁকি, দেশে বিদেশে প্রদর্শন করি, বলা যেতে পারে আমার কাজ ছবি আঁকা। মূলত ভালো লাগা থেকেই এই কাজ করি।

আঁকাআঁকিটার শুরু কবে?
৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে। প্রথমে নিজে নিজে বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখাতাম। পরবর্তীতে চারুকলায় ভর্তি হই।

প্রচ্ছদ নির্মাণ শিখেলন কিভাবে? কার কাছে? কোন গুরু আছে আপনার?
কোনো কিছুই গুরু ছাড়া হয় না। সব শিক্ষাই হচ্ছে গুরুমুখি শিক্ষা। তাই আমার প্রথম উৎসাহ এবং হাতেখড়ি শ্রদ্ধেয় হাশেম খান বলতে পারেন। তার কাছেই আমি প্রচ্ছদ শিল্পের প্রেরণা পাই।

এবারের মেলায় কয়টি বইয়ের প্রচ্ছদ করছেন?
প্রায় ১৫০ টির মতো।

প্রচ্ছদ শিল্প নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
আসলে প্রচ্ছদ নিয়ে ভাবনা কিছুই নেই। নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে আরো কাজ করতে হবে।

কাজ করতে গিয়ে কোন সুখের কিংবা বিব্রতকর গল্প যেটা আপনার মনে পড়ে বেশি?
না, তেমন কোনো বিব্রতকর হয় না। তবে জানুয়ারি মাস এলে চাপ অনেক বেড়ে যায়। প্রকাশক ও লেখকদের বলবো, আগে থেকে সময় দিয়ে কাজ করালে কাজ পরিচ্ছন্ন হয়।

উল্লেখযোগ্য কোন কোন লেখকের বইয়ের কাভার করেছেন?
আমি বরেণ্য লেখকের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্ম লেখকদের বেশি প্রাধান্য দেই। বড়দের মধ্যে রয়েছেন, আলী ইমাম, আসাদ চৌধুরী, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, সেলিনা হোসেন, শামসুজ্জামান খান ও সুজন বড়ুয়া প্রমুখ।

tanvir_anayet

তানভীর এনায়েত। উদ্যমি তরুণ প্রচ্ছদশিল্পী। প্রচ্ছদ শিল্পে তাঁর যাত্রা বেশি দিন না হলেও কাজের প্রতি একনিষ্ঠতায়, প্রচ্ছদের চমৎকারিতায় নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন সবার। এ পর্যন্ত তাঁর প্রচ্ছদসংখ্যা অর্ধ শ'কে ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ এর বইমেলার জন্য করছেন সবচে বেশি। মেলার বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে পাচ্ছেন কাজের আবদার। কাটছে তার ব্যস্ত সময়। আওয়ার ইসলামকে জানালেন সেসব।

প্রচ্ছদে কাজ করছেন কবে থেকে?
ইচ্ছাটা শুরু হয় সাপ্তাহিক লিখনীতে চাকরি করার সময় থেকেই। তখন ২০১৩। কাজ শুরু করি তারও বছর দেড়েক পরে। গালায় থাকতে। ২০১৪ শেষ শেষ করছে তখন। সময়টা এমনই হবে। গালা বলতে হামীম কেফায়েত ভাইয়ের এখানে। একটা ক্রিয়েটিভ হাউস। মাহবুব মুর্শিদ ভাইও তখন গালায়। দুইজন বড় মাপের শিল্পী ও ক্যালিগ্রাফার। ঘরের মেঝেতে ছড়ায়ে থাকতো রঙ আর তুলি। সাদা আর অফহোয়াইট ক্যানভাস। এই শুরু। আগের ইচ্ছার বীজ এখান থেকেই বৃক্ষ হতে লাগলো। কেফায়েত ভাইয়ের সাথে বসে বিজনেস কার্ডের পেছনে রঙারঙি করতাম। শিল্পে এটার নাম মিনিয়েচার। সেগুলো ফেসবুকে আপলোড করতাম। অনেকেই সেখান থেকে ডাউনলোড করে পত্রিকায় দিয়ে দিতো। একবার মুন্সিগঞ্জের একটা মোটা ম্যাগাজিটে প্রচ্ছদ হলো আমার আকা মিনিয়েচারে। ২০০টাকাও খামে ভরে পাঠিয়েছিলো তারা। সেবছর ঘটনাক্রমে তিনটা প্রচ্ছদ করে ফেলেছিলাম। সেই শুরু।

এ কাজ কেন করেন নেশা না পেশার তাগিদে?
আমি করি পেশার তাগিদেই। এটা অকপটে বলা আমার পরম সত্য। শিল্পকে নিজের আয়তনে রাখা কিংবা নিজে শিল্পের আয়তনে থাকার জন্য কারো কারো মতো ভবের দেশের মতো কথা আমি বলতে পারবো না। শিল্পী হয়েও শিল্প নিয়ে এমন ঘোরলাগা কথা বলা শিল্পের সাথেই বেইমানি। কল্পনার দিক দিয়ে আমি বিশাল, বিস্তৃত আমার রঙের সীমানা। শিল্পী বলতে যেটা বোঝায়, রঙ তুলিতে আঁকতে জানা লোক-আমি সেরমটা ছিলাম না। এখন অবশ্য কিছু করি। তাও সেটা এবস্ট্রাক্ট। মূলত কালচারাল কাজের সাথে জড়িতরা বেশির ভাগই নেশাটাকে পেশা বানায়। আমার বেলায় হয়েছে উল্টোটা। প্রথমে শুরু করি পেশার তাগিদেই। পরে দেখলাম এটা আমার নেশায় বদলে গেলো। নেশাটা পেশা বানালে কিংবা পেশাটা নেশা হয়ে গেলে একটা মজার ব্যাপার ঘটে। কাজটায় নিমগ্নতা থাকে। বিরক্তি আসে না সহজে। পেশার তাগিদে কেন সেটা বলছি এখন- পত্রিকা অফিস থেকে যখন আমাদের ফুলস্টাফ এর বেতন আটকা। আমাদের চলতে ফিরতে কষ্ট। চায়ের দোকানে পড়ে গেছে বাকির লম্বা লিস্ট। তখন দেখতাম গ্রাফিক্স বা মেকাপের জন্য যে ছিলো- শাকীর; সে দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিক চলছে ফিরছে। মানে তার কাছে টাকা পয়সা আছে থাকছে। সে পত্রিকার বইরেও কাজ করছে। এর ওর প্রচ্ছদ, লোগো ইতাদি গ্রাফিক্সের আরো অন্যান্য কাজ অনলাইন অফলাইনে করে ফিরছে। মাঝেমধ্যে তার কাছ থেকেও ধার নিতাম কেউ কেউ। তার এই ভালো থাকাটা আমার ভালো থাকার বুদ্ধি বের করে দিলো।

আঁকাআঁকি থেকেই কি এ পথে আসা? আঁকাআঁকি কেমন করেছিলেন ছোটবেলায়?
না, আঁকাআঁকি করিনি কখনো আগে। আমার ছেলেবেলা কেটেছে মাটি গাছের সাথে। আমি বরাবরই অপড়েলেখার ছাত্র ছিলাম। এ কারণেই কেউ কেউ আমাকে বেপরোয়া এবং কেউ কেউ বেপড়ুয়া বলে। স্কুলে ৪০০/৫০০ ছাত্রছাত্রীর মথ্যে আমার আলাদা খাতা করা ছিলো। কিশোরগঞ্জ আদর্শ স্কুলে যখন পড়ি। তখন প্রিন্সিপাল ছিলেন খালেদা আপা। প্রতিদিন স্কুলে আমার উপস্থিতির প্রমাণ রাখতে হতো প্রিন্সিপালে সিগনেচার দিয়ে। আমি ছিলাম বড্ড ফাঁকিবাজ। ঘুড়ি উড়ানো আর বর্শি দিয়ে মাছ ধরা ছিলো আমার প্রধান খেলা। তখন ভাবতাম বড় হলে আমি বিদেশ থেকে ইয়া বড় বড় ঘুরি কিনে এনে ওড়াবো।

প্রচ্ছদ শিখেছিলেন কিভাবে? কার কাছে? কোন গুরু আছে?
প্রচ্ছদ বলতে আলাদা কোনো শাখা নেই। পুরোটা হলো শিল্প বা ডিজাইন। প্রচ্ছদ হলো তার একটা অংশবিশেষ। শিখতে ভর্তি হয়েছিলাম পল্টনের হুসাইন নামের এক বড় ভাইয়ের কাছে। ইলাস্ট্রেটর। তাও মাসখানেক হবে হয়তো। কিংবা তারও কম। সে বড় ভাইয়ের এখানে পিসিটা ছিলো নষ্টের জায়েজ ব্যবহার আরকি। আর যাওয়া হয়নি। তারপর নিজে নিজেই গুগল সাহেবের কাছে এলাম। তাকে অনুনয় বিনয়ও করতে হয়নি। তাকে শুধু বলতে পারলেই হয়। এখনও আসি। ফটোশপটা পুরোটাই নিজে নিজে শেখা। অপ্রাতিষ্ঠানিক কোনো ব্যক্তির কাছে গেলে কেউ শেখাতে চায় না কাজ- এমন অভিযোগ প্রায় সবারই থাকে। আমার নেই। কারণ তেমনভাবে কারো কাছে যাইনি। এ টু জেট কেউ শেখাবে না আমাকে। আমি নিজের চেষ্টায় চলি, যখন কোথাও আটকে যাই বন্ধু বা বড় ভাইদের কাছে জেনে নেই। সার্টিফিকেটের জন্য সরকারি আইসিটিতেও ক্লাস করছি। এর মধ্যে সেখানকার ট্রেইনার হওয়ার অফারও পেয়ে গেছি। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা না থাকলে ট্রেইনার হয়ে যেতাম। ইংরেজিটা একটু ভালো করতে পারলেই ফ্রিল্যান্সার হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

ভবিষ্যতে বিখ্যাত কোন (ধ্রুবদা) শিল্পির মত বিখ্যাত হওয়ার স্বপ্ন রাখেন?
না, একদমই বিখ্যাত হতে চাই না। বিখ্যাত হওয়ার লোকদের বেশিরভাগের পা আর মাটিতে থাকে না। মানুষ তাদের ছুঁতে পারে না। অবশ্য এটাও সত্য মানুষকে ছুঁতে দেয়া লোকরা কখনই বিখ্যাত বা আকাশচুম্বী হতে পারে না। সবটা বিষয়ই তো মনের। মনের ব্যাকরণটা এমন। নারীকে পাওয়ার পর পুরুষের রোমান্টিকতা কমে যাওয়ার মতো। তবুও বিখ্যাত লোকেরা এগুলো খুব মেইনটেন করে চলে। আমি মানি না। আমার মাটিই ভালো লাগে। ড্রেনের উপরের টং দোকানে পা ঝুলিয়ে বসে চা খেতে ভালো লাগে। বিখ্যাত হওয়ার পর খ্যাতি কমে যাওয়ার ভয়ের চেয়ে বিখ্যাত না হতে পারার যন্ত্রণা অনেক বেশি। তবে আমি পেশাদারিত্বে খুব সচেতন হতে চেষ্টা করি। কাছের লোকেরা মনখারাপ করে। কী করার আছে।

এবারের মেলায় কয়টি বইয়ের প্রচ্ছদ করছেন?
বইমেলার জন্য করেছি ৩৭টা। একাধিক প্রকাশনী থেকে। কালো প্রকাশন থেকেই আসছে ২৩টার মতো। এজন্য কালোকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। দাঁড়িকমা থেকে আছে কিছু। মুক্তচিন্তা, চৈতন্য আরো কী কী। শ্রাবণী থেকেও ফোন দিয়েছিলো ওদের কাজ করে দেয়ার জন্য। আমার ডিমান্ড অনুযায়ী হয়নি বলেই তাদের কাজ করা হচ্ছে না। সরাসরি লেখকরা যেসব বই করতে দিয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগ প্রকাশনীই জানা নেই আমার।

প্রচ্ছদ শিল্প নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
ভাবনা থেকে দুর্ভাবনাই বেশি। আমরা যতটা কল্পনাবিলাসী, রঙ সম্পর্কে যতটা ধরনা, কালার কম্বিনেশন সমআপকে যতটুকু জানাশোনা। এলাইনমেন্ট নিয়ে যতদূর পড়াশোনা- তার সবটা বা কিয়দাংশও প্রয়োগ করতে পারি না। সমসাময়িক ডিজাইন কেমন চলছে বাজারে, সেসবের নূন্যতম স্টাডি না থাকা সত্ত্বেও অল্পকিছু ক্লায়েন্ট ডিজাইনে হস্তক্ষেপ করে। বেশির ভাগ প্রচ্ছদই লেখকরা নষ্ট করে ফেলেন। ভালো লেখকদের ক্ষেত্রেও এমনটা পরিলক্ষিত হয়। ভালো লেখকদের ধারণা, লেখার মতো ডিজাইনেও তারা পাকা। অথচ তিনি লেখার ক্ষেত্রে এতটা ভালো হওয়ার জন্য যে প্ররিশ্রম করেছেন সে পরিশ্রম অবশ্যই প্রচ্ছদের পেছনে করেননি। আমরাও একবার দুবার বলার পর তাদের ইচ্ছামতো করে দিই। ক্লায়েন্ট ধরে রাখার প্রবনতাও আমাদের থাকে। এই আরকি। তবে ব্যতিক্রমও আছে। তাদের ভালো কাজগুলো করার ফলেও একটা দুইটা মেনে নিই। খারাপগুলো নিচে পড়ে থাকে ভালোগুলোর।

কাজ করতে গিয়ে কোন সুখের কিংবা বিব্রতকর গল্প যেটা আপনার মনে পড়ে বেশি?
এখন তেমন কিছু মনে পড়ছে না। তবে লেখার বিষয়বস্তু, বইয়ের নাম ইত্যাদি সুন্দর হলে কাজ ভালো হয়। সুখ কিংবা বিব্রতকর বলতে কাজটা মনমতো হলেই ভাল্লাগে। ব্যতিক্রম হয়, ফিরিয়েও দিই, রাখিও কিছু।

প্রচ্ছদে কাজ করার কেমন অনুভূতি?
এ প্রসঙ্গে ধ্রুব দা বলেছেন সুন্দর, ‘ভালো প্রচ্ছদশিল্পী হতে চাইলে ভালো পাঠক হতে হবে। প্রচুর পড়তে হবে। কম্পোজিশনের ধারণা ও জ্ঞান থাকতে হবে। সবার ওপরে একটা শিল্পীমন থাকতে হবে। কারণ জোর করে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রচ্ছদশিল্পী হওয়া যায় না।’ আমিও পড়ছি ইদানিং। বই থেকেও পড়ছি, প্রকৃতি থেকেও পড়ছি।

উল্লেখযোগ্য কোন কোন লেখকের বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন?
এটা একটা মজার বিব্রতকর প্রশ্ন। এই উত্তরটা একটু পাশ কাটিয়েই যাই। সব বইয়েই যেহেতু লেখকের নাম থাকে সেদিক দিয়ে সবাই উল্লেগযোগ্য। তাছাড়া এভাবে মূল্যায়ন না করাটা নবীনদের জন্য অনুপ্রেরণা বজায় থাকার কারণ। আমি যেহেতু সাহিত্য সমালোচক নই, আমার কাছে যারা প্রচ্ছদ করতে দেয় পেশাদার হিসেবে আমি সবাইকেই মূল্যায়ন করবো। পাঠক হিসেবে বলার অনেক থাকে। ভবিষ্যতে আরো সাহস নিয়ে বলবো। তবে বড়দের মধ্যে করেছি ছড়াকার জগলুল হায়দারের বই, আসলাম সানী, অনুরূপ আইচ, জামিল জাহাঙ্গীরের, আমিরুল মোমেনীন মানিক, উমর বিশ্বাসসহ আরো অনেকের।

himel_haq

হিমেল হক। সমকালীন প্রচ্ছদশিল্পিদের অন্যতম তরুণ শিল্পী। প্রচ্ছদে প্রবেশ করেন ২০১৫ অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। বাংলাদেশ রাইটাস গিল্ডে। সেই থেকে তাঁর পথচলা। প্রচ্ছদ নিয়ে রয়েছে তার নানান ভাবনা। এ পর্যন্ত তাঁর প্রচ্ছদসংখ্যা ১৩৫ অতিক্রম করেছে। তন্মধ্যে এবারের মেলায় করছেন সবচে বেশি।  শিল্পের এ নান্দনিক কাজে তিনি এসেছেন নেশা থেকে। নেশাই থাকবে, কোনদিন পেশা হবে না জানান তিনি।

আপনি কি তাহলে এখনো এ কাজকে পেশা হিসেবে করছেন না?
আসলে ব্যপারটা সেরকম না। প্রচ্ছদ করে আমি মোটামুটি ভালো একটা ইকোনমিকাল সাপোট পাচ্ছি। তবে শখটাকে পুরোপুরি ব্যবসায়িক কায়দায় পেশা হিসেবে দেখার পক্ষে আমি না।

আঁকাআঁকি থেকেই কি এ পথে আসা? আঁকাআঁকি কেমন করেছিলেন ছোটবেলায়?
মূলত পাঠক থেকে আসা। আমি এক মফস্বলের ছেলে, সেই ছোট বেলা থেকেই বই পড়ি। এখন মোটামুটি ১৫০০+ বই সংগ্রহে। আঁকাআঁকি বলতে খুব বেশি কিছু না, বেসিক কিছু আকাআকি ছোট বেলায় ট্রাই করেছি, আসলে এর বেশি সুযেগ ছিল না।

প্রচ্ছদ শিখেছিলেন কিভাবে? কার কাছে?
প্রচ্ছদ আসলে শেখার কিছু নাই। তাছাড়া কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কথা যদি বলেন তাহলে ওটাও নিজে নিজে ট্রাই করে শিখেছি। আমি মনে করি শিখে শিখে ক্রিয়েটিভ কাজ হয় না।

তাইলে কি এ কাজে আপনার গুরু নেই?
না, গুরু বলতে কারো সংস্পর্শে থেকে কাজ করা, টিপস নেয়া। সে রকম কেউ আসলে আমার লাইফে নেই। তবে ধ্রুবদাকে আমি পছন্দ করি, তার কাজের ধরন, তার চিন্তাকে সম্মান করি।

ভবিষ্যতের ধ্রুবদা হওয়ার ইচ্ছা আছে কি?
আসলে কারো জায়গা কেউ পূরণ করতে পারে না। আমার স্বপ্ন কভারে নানা এলিমেন্টের ব্যবহার বাড়ানো, যেটা ধ্রবদা করে থাকেন।

প্রচ্ছদ শিল্প নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
প্রচ্ছদ শিল্প আগে বাস্তবিক ক্ষেত্রে "প্রচ্ছদশিল্প" রুপে প্রতিষ্ঠা জরুরি। নানা কারণে প্রচ্ছদ শিল্প আসলেই একটা ইন্ড্রাষ্টি হয়ে ওঠেনি। Industry. বলতে বুঝিয়েছি প্রচ্ছদ শিল্পীদের সুবিধা অসুবিধার নিশ্চয়তা দেয়া, যাতে তারা আসলেই এটাকে পেশা হিসেবে নিয়ে এটাতে আরো দূরে নিতে পারে। যেমন সিনেমা শিল্প আরো বিভিন্ন সেক্টরে দেখা যায়।

কাজ করতে গিয়ে কোন সুখের কিংবা বিব্রতকর গল্প যেটা আপনার মনে পড়ে বেশি? হি
অনেক সময় দেখেছি কভার করেছি একটা, প্রকাশনীতে দেবার পর তার অনেক কিছৃ পরিবর্তন হয়েছে। সেক্ষেত্রে সুনাম নষ্ট হয়। প্রত্যেক আর্টিস্টরই নিজস্ব স্বকীয়তা আছে, তার ফন্ট সিলেকশন, কালার কম্বিনেশন এগুলো। মানুষ আসলে সুন্দর খোঁজে, শিল্পটা বুঝতে চায় না। সুখের গল্প বলতে প্রথম যখন কভার করতাম, তখন আসলে বুঝতাম না কভার কেমন হয়। ফ্ল্যাপ জিনিসটা কি, মাপটা কেমন হয় বই ভেদে কভার কেমন হতে পারে এগুলো। আন্দাজে কিছু কাজ করেছিলাম, প্রকাশককে ধন্যবাদ, এতকিছুর পরও তখন আস্থা রাখার জন্য। না হলে অনেক কিছু মিস করতাম।

উল্লেখযোগ্য কোন কোন লেখকের বইয়ের কভার করেছেন?
মেওর বংশীরাজের 'মন খারাপের দিন', সাজিয়া সুলতানা পুতুলের-পুতুলকাব্য, মহিবুল আজিজের- গল্প সমগ্র, মারলিন ক্লারার- মরুর বুকে সবুজ রেখা, আখতার মাহমুদের স্বপ্নন্দী, হাসান জাহিদের- জাগরণী পর্ব ।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ