শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


আল্লাহর রাস্তায় থাকলেই ব্যবসা ও কাজ ভালো চলে: মিরাজ ইসলাম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মিরাজ ইসলাম। একজন প্রতিভাবান সফল তরুণ ব্যবসায়ী। আর আমিন গ্রুপ এন্ড কোম্পানিজ-এর কর্ণধার। খুলনা শহরে তার বেড়ে ওঠা ও লেখাপড়া। বাবার মৃত্যুর কারণে অল্প বয়সেই হাল ধরতে হয় পারিবারিক ব্যবসার। দাওয়াত ও তাবলিগের স্পর্ষে পাল্টে গেছে তার জীবনচিত্র।

সুন্নতি পোশাকে শোভিত এ তরুণ দায়ি স্বপ্ন দেখেন শান্তির পৃথিবী গড়ার। পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলে ধরতে চান ইসলামের শ্বাসত বাণী। ইসলামের বাণী প্রচারে ভ্রমণ করেছেন প্রায় ১২টি দেশ। তিনি ব্যবসায়ীদের সমাজসেবামূলক সংগঠন রোটারি ক্লাব খুলনার অতীত সভাপতি। সম্পৃক্ত আছেন অনেক মাদরাসা মসজিদসহ বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে।

৩০ জানুয়ারি ইতালি প্রবাসী বিশিষ্ট লেখক, আওয়ার ইসলামের শুভাকাঙ্ক্ষি সাংবাদিক পলাশ রহমানের সঙ্গে মিরাজ ইসলামওয়াহিদুজ্জামান রিপন আওয়ার ইসলামের অফিস পরিদর্শনে এসেছিলেন।

এ সময় মিরাজ ইসলামের বদলে যাওয়ার গল্প, দাওয়াতি কাজে ও ব্যক্তিগত জীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন রোকন রাইয়ানআতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : আপনি দাওয়াত ও তাবলিগের সাথে কীভাবে সম্পৃক্ত হলেন?

মিরাজ ইসলাম : ছোট থেকেই নামাজ-রোজা করতাম। কিন্তু অন্তরের প্রশান্তি পাচ্ছিলাম না। আমি আত্মার প্রশান্তির জন্য বিভিন্ন জায়গা গিয়েছি। তাবলিগেরও দাওয়াত পেয়েছি। একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম তাবলিগে যাবো।

আমার এক বন্ধু আমাকে তাবলিগের দাওয়াত দিতো। একদিন এশার নামাজের পর ও জানালো, তাবলিগে যাচ্ছে। আমি যেহেতু আগ থেকে তাবলিগে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তাই ওর সাথে বের হয় গেলাম। আমার প্রথম রুখ পরেছিলো সৈয়দপুর।

আওয়ার ইসলাম : প্রথম সফরের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?

মিরাজ ইসলাম : আমার সিদ্ধান্ত ছিলো, আমি এক সপ্তাহ ও দশ দিন সময় লাগাবো। কিন্তু আমি চিল্লা শেষ করে আসি। তিন দিনের মাথায় আমি নিজের ভেতরে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। আমি দাড়ি রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। সুন্নাতের উপর চলার ইচ্ছা প্রবল হলো। এটা ২০১১ সালের ঘটনা। এরপর থেকে আর কখনো দাড়ি টুপি ছাড়ি নি।

আওয়ার ইসলাম : দাওয়াত ও তাবলিগের কোন জিনিসটি আপনাকে মুগ্ধ করেছিলো?

মিরাজ ইসলাম : আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিলো, তারা নিজের খেয়ে অন্যের কল্যাণের জন্য কাজ করে। তাছাড়া এখানে শিরক বিদআত নেই।

আওয়ার ইসলাম : আপনার হঠাৎ এ পরিবর্তনকে আপনার পরিবার কীভাবে গ্রহণ করেছিলো?

মিরাজ ইসলাম : পারিবারিকভাবে আমরা পীর বংশের সন্তান। সুতরাং তারা আমার ইতিবাচক পরিবর্তনকে স্বাগত জানায়। তারা দোয়া করেন যেনো আমি দীনের উপর টিকে থাকতে পারি।

হ্যা, এলাকার অনেকে আশঙ্কা করেছিলো আমি আগের জীবনে ফিরে যাবো।

Image may contain: 6 people

আওয়ার ইসলাম : এতো ব্যস্ততার ভেতর দাওয়াতের কাজে কীভাবে সময় দেন?

মিরাজ ইসলাম : ব্যবসায়িক ব্যস্ততার জন্য নেসাব পূর্ণ করা হচ্ছে না। কিন্তু চেষ্টা করি মাসে তিন দিন, বৃহস্পতিবার মারকাজে বয়ান শুনি। এর বাইরে স্থানীয় পর্যায়ে তাবলিগি মেহনতে সময় দেই। মাশওয়ারার ভিত্তিতে তাবলিগে যাই। চেষ্টা করি, সে সময়টাতে নিজেকে ফ্রি করতে।

আওয়ার ইসলাম : তাবলিগের নেসাবটা কী? আপনার কখনো মনে হয়েছে, নেসাব পূর্ণ করতে গেলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়?

মিরাজ ইসলাম : তাবলিগের নেসাব হলো, দিন, সপ্তাহ ও মাসে নির্ধারিত পরিমাণ সময় আল্লাহর রাস্তায় মেহনতে ব্যয় করা। তাহলো, দিনে আড়াই ঘণ্টা, সপ্তাহে চব্বিশ ঘণ্টা, মাসে তিন দিন আর বছরে এক চিল্লা।

না, আমার কখনো মনে হয় নি, নেসাব পূর্ণ করতে গেলে আমার কাজের বা ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। বরং অনেক সময় মনে হয়েছে, আমি আল্লাহর রাস্তায় থাকলেই ব্যবসা ও কাজ ভালো চলে। অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়।

আওয়ার ইসলাম : আপনি দেশে ও দেশের বাইরে দাওয়াতি কাজ করেছেন। কিন্তু পরিবারের দীন-ধর্মের প্রতি আপনি কতোটা মনোযোগী?

মিরাজ ইসলাম : পরিবর্তনের মালিক তো আল্লাহ। আমি চেষ্টা করি, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের কাছে দীনের দাওয়াত তুলে ধরি। আল-হামদুলিল্লাহ আমার পরিবারের সবাই নামাজি।

আওয়ার ইসলাম : সাধারণ একটি অভিযোগ আছে, যারা দাওয়াতের কাজে বেশি ঝুঁকে যায়, তারা পরিবারের প্রয়োজন, সুবিধা ও অসুবিধার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না। এটা কতোটা বাস্তব? আপনার প্রতি এমন কোনো অভিযোগ আছে কী?

মিরাজ ইসলাম : এটা সত্য এ ধরনের কিছু অভিযোগ সমাজে আছে। আমার প্রতি আমার পরিবারের এমন কোনো অভিযোগ নেই। তারা আমার কাজে খুশি।

আমার মনে হয়, এমন অভিযোগ তারাই করে, যাদের দীনী বুঝের অভাব আছে। তারা দুনিয়ার আসবাবকে আল্লাহর সাহায্য থেকে বড় মনে করেন।

Image may contain: 7 people, people smiling, people standing

আওয়ার ইসলাম : আপনার জীবনে যে পরিবর্তন এসেছে, তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কীভাবে পৌঁছে দিবেন? আপনার নিজের সন্তান, ভাই-বোনের সন্তান পযন্ত?

মিরাজ ইসলাম : আমার সন্তান নেই এখনো। আমার ইচ্ছে আছে, আমার সন্তান হলে আমি তাকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করবো। আমার পরিবর্তী জেনারেশনকে দীনি পরিবেশে চলার জন্য যে উপরকরণ দরকার সে পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করবো।

ভাই-বোনের ক্ষেত্রে আমি হয়তো বলতে পারবো। এর বেশি কিছু তো আমার হাতে নেই। চূড়ান্ত পরিবর্তন আল্লাহর হাতে।

আওয়ার ইসলাম : দাওয়াত ও তাবলিগে বের হওয়ার পর আপনি আল্লাহর কোনো নুসরত প্রত্যক্ষ করেছেন কি?

মিরাজ ইসলাম : আমার বহুবার মনে হয়েছে, আমার ব্যবসায়িক ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা ও সঙ্কট দীনের রাস্তায় বের হওয়ার কারণে সহজে সমাধান হয়েছে। তাছাড়া আমি ভেবে দেখেছি, আল্লাহ আমাকে বিভিন্ন সময় শারীরিক আঘাত ও দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করেছেন।

 আওয়ার ইসলাম : পড়ালেখা শেষ করে মানুষ চাকরির চিন্তা করে। ব্যবসার দিকে কেনো গেলেন?

মিরাজ ইসলাম : পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে ব্যবসায় আসা। বাবার ব্যবসা ছিলো সেখান থেকে ব্যবসায় যুক্ত হয়েছি।

আওয়ার ইসলাম : বর্তমান যুগে সততার সঙ্গে ব্যবসা করা সম্ভব কি?

মিরাজ ইসলাম : চেষ্টা করলে অসম্ভব কিছু না। আমি মনে করি, সততার সঙ্গে ব্যবসা করা সম্ভব। সততা রক্ষা করে খুব বেশি লাভ করা যায় না।

আমি সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পণ্য সরবারহ করি। চেষ্টা করি, জেনে বুঝে খারাপ পণ্য সরবারহ না করতে। কিন্তু দেখা যায়, আমি ভালো পণ্য সরবারহ করার পরও আমাকে ঘুষ দিয়ে অর্থ ছাড় করাতে হয়। ঠিক যেমন অন্যরা পণ্যে ভেজাল দেয়ার কারণে ঘুষ দেয়।

আমাকেউ অনেক জায়গায় ঘুষ দিতে বাধ্য হতে হয়। অবশ্য সেটা আমি ঘুষ হিসেবে দেই না। আমি মনে করি, যেহেতু আমাকে বাধ্য করা হচ্ছে তাই আমি পরকালে তা ফেরত পাবো।

হ্যাঁ, চাহিদা বেশি হলে সৎ থাকা যায় না। ব্যবসা খুব ছোট হলেও সৎ থাকা কঠিন।

আওয়ার ইসলাম : কী পরিবর্তন এলে সর্ব শ্রেণির ব্যবসায়ী সৎ থাকতে পারবে?

মিরাজ ইসলাম : সৎ ও যোগ্য শাসক ব্যতীত সমাজ ও রাষ্ট্রের আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়। যেমন মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ। আমরা যদি এমন একজন শাসক পাই তাহলে এ পরিবর্তন সম্ভব।

আওয়ার ইসলাম : এখানে সাধারণ মানুষের করার কিছু আছে কি?

মিরাজ ইসলাম : পৃথিবীতে টাকার সামনে সৎ থাকা সবচেয়ে কঠিন। রাষ্ট্রীয় সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে মানুষ ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় অসৎ কাজে জড়িয়ে পড়ে। সৎ শাসক ও সুশাসন আবশ্যক।

একটা ঘটনা বলি, হজ থেকে ফেরার সময় আমার সঙ্গে দুট ব্যাগ ছিল। একটি কাপড়ের আরেকটি খেজুরের। দুটিই ছিল ২৪ কেজির উপরে। তো সৌদির আরবের এয়ারপোর্টে আমার মালামাল ছাড়বে না। চেকিংয়ে এক আরব আমাকে বললেন আপনি দুটি ব্যাগের একটি নিতে পারবেন। কোনটি নিবেন ঠিক করেন। এখানে কিছু টাকা দিলেই আবার ছেড়ে দেয় সবাইকে। তো হজ করার পর আমার মানসিকতা এমন ছিল না। চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছিল। আমি বললাম আমার খেজুরের প্রয়োজন নেই। এগুলো আপনি রেখে দিন। তো এটা শুনে তিনি আমাকে আর আটকাননি।

এইযে হজের মতো একটা জায়গাতেও অনেকেই টাকার লোখে কিছু সময়ের জন্য অসৎ হয়ে যান। টাকা জিনিসটা খুবই মুশকিল।

Image may contain: 22 people

আওয়ার ইসলাম : শাসক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পরিবর্তন কী দাওয়াতের মাধ্যমে সম্ভব?

মিরাজ ইসলাম : যারা দেশ শাসন করেন তারা আমাদের সমাজেরই মানুষ। সমাজের মানুষ ও মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারলে দেশও এক সময় পরিবর্তিত হবে।

তাছাড়া মানুষের অন্তরের মালিক আল্লাহ। আমরা আল্লাহর কাছে পরিবর্তনের জন্য দোয়া করবো। আমরা সেই দোয়াটা করতে পারছি না যেটা আল্লাহ কবুল করেন।

আওয়ার ইসলাম : আপনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। সুন্নতি পোশাকের কারণে কোথাও কী কোনো সমস্যা হয়েছে?

মিরাজ ইসলাম : উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যা হয় নি। শুধু ইন্দোনেশিয়াতে একটু ঝামেলা হয়েছিলো। তাও কয়েক ঘণ্টার পর তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। জার্মানিতে একটু সমস্যায় পড়েছিলাম কিন্তু বেশিক্ষণ নয় দশ মিনিটের মতো আটকে ছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা আর আটকাননি।

আওয়ার ইসলাম : আপনি ভবিষ্যৎ পৃথিবীটা কেমন দেখতে চান?

মিরাজ ইসলাম : আমি চাই, পৃথিবীর মানুষ ইসলামের ছায়াতলে চলে আসুক। পৃথিবী শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে যাক। পৃথিবীর সবাই আল্লাহওয়ালা হয়ে যাক।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ