রোকন রাইয়ান: কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকার কারিগরি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ইকরা বাংলাদেশ ও এটুআইয়ের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তিস্বাক্ষর হয়েছে। এর দ্বারা সরকারের উদ্দেশ্য সারা দেশের কওমি মাদরাসায় কারিগরি শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়া। তবে এ শিক্ষার সংযুক্তি কতোটা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে তা নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা উত্তরার জামিয়া ইসলামিয়া গাওয়াইর এর মুহাদ্দিস এবং কুষ্টিয়া আল্লাহর দরগাহ মাদরাসার শাইখুল হাদিস বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মুফতি জহির ইবনে মুসলিমের সঙ্গে কথা বলেছি।
আওয়ার ইসলাম: সরকার কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, এটাকে কিভাবে দেখছেন?
মুফতি জহির ইবনে মুসলিম: প্রথমত বলব, বিষয়টা যদি ঐচ্ছিক হয় তাহলে তো কোনো সমস্যা দেখি না। যেমন আমি যদি আমার পড়াশোনার বাইরে এক্সট্রা ড্রাইভিং শিখি তবে সেটা আমার একটা আলাদা যোগ্যতা হিসেবেই দেখবে মানুষ। এটুআইয়ের সঙ্গে যে চুক্তিটা হয়েছে ইকরার, সেখানে যদি কারিগরিকে মাদরাসায় বাধ্যতামূলক না করা হয় তাহলে খারাপের কিছু নেই। বরং এটা আলাদা কিছু যোগ্যতা তৈরি করবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
আওয়ার ইসলাম: অনেকেই বলছেন এতে কওমির মূল শিক্ষা ও আদর্শ ব্যহত হবে এবং ইলম অর্জনে একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।
মুফতি জহির ইবনে মুসলিম: এখানে একটা ব্যাপার হলো, আমরা সব সময় দারুল উলুম দেওবন্দের কথা বলি কিন্তু এ সম্পর্কে আমাদের কতটুকু ধারণা আছে? আমি ২০ বছর আগে দেওবন্ধে যা দেখে এসেছি তা আমাদের এখানে এখনো চিন্তাই করা হযনি। দারুল উলুম দেবওন্দের তত্ত্বাবধানে একসময় তিব্বিয়া কলেজ। এখনো আছে তবে এটা দেওবন্দের নিয়ন্ত্রণে নয়। এছাড়াও দেওবন্দের শিক্ষার্থীদের ভিন্ন যোগ্যতার জন্য বেশি কিছু বিভাগ সে সময়েই দেখে এসেছি যেমন, খুশখত (সুন্দর হাতের লেখা) এর জন্য আলাদা কোর্স আছে। দেওবন্দ কম্পিউটার শেখাচ্ছে ৪০ বছর আগে থেকে। এছাড়াও সেলাই মেশিন বা দর্জিগিরিও শেখাচ্ছে দারুল উলুম দেওবন্দ।
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে এটা কওমির জন্য মৌলিক বিষয় না। কওমির মূল হলো ইলম অর্জন। সেটা যদি ব্যাহত হয় তবে এটা আমরা মানতে পারি না।
আওয়ার ইসলাম: তাহলে আপনার কি ধারণা এ কারিগরি শিক্ষার কারণে কওমি তার মূল লক্ষ থেকে বিচ্যুত হবে?
মুফতি জহির ইবনে মুসলিম: এখানে বিষয়টা পরিষ্কার থাকতে হবে। কারিগরি এ শিক্ষাটা যদি ঐচ্ছিক হয় তাহলে তো সমস্যা দেখি না। আর যদি ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারো উপর চাপানো হয় তাহলে সমস্যা আছে।
যেমন কেউ মুফাসসির হতে চায়, তাকে বাধ্য করা হলো কম্পিউটারই শিখতে হবে। এতে তো তার ফায়দা হলো না তার লক্ষ উদ্দেশ্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হলো। আবার কেউ ইফতা পড়ে মুফতি হবে তার জন্য তো কারিগরি কোর্স প্রয়োজন নেই। তাই বলবো কারো মূল চাহিদা যদি ব্যহত না করে তাহলে কারিগরি শিক্ষা উপকারই করবে। অনেক শিক্ষার্থীর জন্য কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বেশ ফায়দা দেবে।
আরেকটা বিষয় যেটা বলা দরকার তা হলো, এ উদ্যোগের পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা। এ বিষয়টি আমাদের নজরে রাখতে হবে।
আওয়ার ইসলাম: তাহলে আপনি ধারণা করছেন সরকারের একটা উদ্দেশ্য আছে এর পেছনে।
মুফতি জহির ইবনে মুসলিম: সরকার তো নিজেদের ফায়দা ছাড়া কোনো কাজ করে না। সব কাজেই একটা বৃহত উদ্দেশ্য থাকে। এখানেও এমনটা আছে কিনা খতিয়ে দেখা জরুরি। আর যদি এরকম কিছু পাওয়া যায় তবে সবাইকে মিলে তা প্রতিহত করাটাও জরুরি।
আওয়ার ইসলাম: সাম্প্রতিক সময়ে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ অনেক কাজ করছেন, অনেক আলোচনা সমালোচনা শোনা যায় এসব নিয়ে। তার ও তার কাজের ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
মুফতি জহির ইবনে মুসলিম: দোষ গুণ মিলেই তো মানুষ। ব্যক্তি মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব যদি মন্দ কিছু করেন তবে সেটা মন্দের কাতারেই থাকবে। আর ভালো কিছু করলে তো সেটা ভালোর কাতারেই রাখতে হবে। এটাই একজন আলেমের ব্যাপারে যথাযথ মূল্যায়ন বলে মনে করি।
আরো পড়ুন : এটুআই ও ইকরার সমঝোতা কওমি শিক্ষার উদ্দেশ্য পরিপন্থী: মাওলানা মামুনুল হক
কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরিই এটুআই প্রকল্পের উদ্দেশ্য: হুসাইনুল বান্না