কওমি মাদরাসার ছাত্রদের কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রজেক্টি বাস্তবায়ন করা হবে। বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে ইকরা বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কাযালয়ের এটুআই প্রোগ্রাম ও ইকরা বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু কী আছে এই চুক্তিতে? কোন কোন প্রতিষ্ঠান এবং কোন শ্রেণির শিক্ষার্থী সুযোগ লাভ করবে তাতে? কীই বা শিখবে তারা? এসব প্রশ্ন নিয়ে জামিয়া ইকরার পরিচালক (শিক্ষা) ও ইকরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রকল্প তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা হুসাইনুল বান্নার মুখোমুখি হয় আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকম। আওয়ার ইসলামের পক্ষে কথা বলেন, আতাউর রহমান খসরু।
আওয়ার ইসলাম : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রাম ও ইকরা বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটি কী ধরনের চুক্তি বা সমঝোতা?
মাওলানা হুসাইনুল বান্না : এটি একটি সহযোগিতামূলক চুক্তিমূলক সমঝোতা। সরকার কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে চায়। আমরা এ বিষয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করবো।
আওয়ার ইসলাম : এ প্রকল্পের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী?
মাওলানা হুসাইনুল বান্না : প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, কওমি মাদরাসা ছাত্রদের কারিগরি শিক্ষা প্রদান করা এবং তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।সরকার লক্ষ্য করেছে, আমাদের দেশে যারা ভালো ইংরেজি জানে তার আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে ইউরোপ আমেরিকার বাজার থেকে ভালো অর্থ উপার্জন করে। মাদরাসা ছেলেরা ভালো আরবি জানে। পৃথিবীতে আরবিভাষী মানুষের সংখ্যা কম নয়। সুতরাং মাদরাসার ছাত্রদেরকে উপযুক্ত কারিগরি শিক্ষা দিলে তারাও আউট সোর্সি করতে পারবে।
আওয়ার ইসলাম : প্রোগ্রামের আওতায় ছাত্রদের কী কী শেখানো হবে?
মাওলানা হুসাইনুল বান্না : মূলত যুব উন্নয়ন থেকে যেসব টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম শিখতে পারে -যেমন, কম্পিউটার, ড্রাইভিং, গ্রাফিক্স ইত্যাদি- একজন ছাত্রের জন্য এর একটি প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণের সুযোগ থাকবে। তবে মূল প্রোগ্রাম থাকবে গ্রাফিক্স, কাউন্সিলিং ও ল্যাংগুয়েজ। সাথে সাথে আমরা ইসলামি ব্যাংকিংয়ের উপর প্রশিক্ষণের দাবি করেছি।
আওয়ার ইসলাম : প্রশিক্ষণ কারা গ্রহণ করতে পারবে?
মাওলানা হুসাইনুল বান্না : ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী ইকরার বর্তমান ও সাবেক যেকোনো শিক্ষার্থী কোর্স করার সুযোগ পাবেন।
মূল কোর্স তথা গ্রাফিক্স, কাউন্সিলিং, ল্যাংগুয়েজ ও ব্যাংকিং-এর উপর প্রশিক্ষণ লাভ করবে ইকরায় অধ্যয়নরত ছাত্ররা। এর বাইরে আমাদের সাবেক ছাত্ররা যদি কোনো বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে চায়, তবে সে স্থানীয় যুব উন্নয়ন অথবা সরকার অনুমোদিত অন্য কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কোর্স করতে পারবে। কোর্স ফি আমাদের মাধ্যমে এটুআই পরিশোধ করবে।
আওয়ার ইসলাম : বাস্তবায়নের রূপরেখা কী হবে?
মাওলানা হুসাইনুল বান্না : ইকরা বাংলাদেশের সহযোগিতায় এটুআই প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করবে। তাদের পক্ষ থেকে ফোকাল্ট পয়েন্টে একজন লোক থাকবে এবং আমাদরে পক্ষ থেকে একজন লোক থাকবে। উভয়ের সমন্বয়ে প্রকল্প পরিচালিত হবে। আমরা মনোনয়ন দিতে পারবো, কিন্তু নিয়োগ চূড়ান্ত করবে তারাই। বেতনও তারা দিবে।
আওয়ার ইসলাম : কবে নাগাদ শুরু হবে এবং কতো দিন চলবে প্রোগ্রামটা?
মাওলানা হুসাইনুল বান্না : আশা করছি, আগামী মার্চ থেকে শুরু হবে। চুক্তি অনুযায়ী এটুআই আমাদেরকে ২০২১ সাল পযন্ত সেবাটা প্রদান করবে।
কোর্সের মেয়াদ হবে ৬ মাস থেকে ১ বছর। কোর্স শেষে কারিগরি বিষয়ে ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।
আওয়ার ইসলাম : কতোগুলো কওমি মাদরাসাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে?
মাওলানা হুসাইনুল বান্না : সুযোগটা অবারিত। কোনো সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয় নি। ওরা চাচ্ছে প্রত্যেকটা কওমি মাদরাসা সুযোগটা গ্রহণ করুক। আমাদের দিয়ে শুরু হলো।
আওয়ার ইসলাম : পরবর্তীতে কোনো প্রতিষ্ঠান সেবা গ্রহণ করতে চাইলে কি আপনাদের মাধ্যমেই গ্রহণ করতে হবে? নাকি স্বাধীনভাবেই সেবা লাভ করতে পারবে?
মাওলানা হুসাইনুল বান্না : বিষয়টি আমি বলতে পারবো না। এতোটুকু বলতে পারি, আমাদের মাধ্যমেই শুরু হবে এবং প্রাথমিক পযায়ে আমাদের মনোনীত প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রাধিকার লাভ করবে। তারা আমাদেরকে বলেছে, তাদের উদ্দেশ্য সারা দেশের কওমি মাদরাসাগুলোকে প্রোগ্রামের অন্তর্ভূক্ত করা।
আরও পড়ুন : কওমি মাদরাসায় কারিগরি প্রশিক্ষণ: এটুআই ও ইকরার চুক্তিসই