শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


টিভি টকশো `শিক্ষার হেফাজতে' মুফতি ফয়জুল্লাহর ঝড়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

fajullah

পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন। ঝড় উঠেছে চায়ের কাপে। দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ ও অভিভাবক উল্লসিত হলেও নড়ে বসেছে এক শ্রেণীর ‍সুশীল! তারা বিপুল বিতর্কের অবতারণা করেছে দেশের মিডিয়াগুলোতে। স্যোসাল মিডিয়া থেকে শুরু করে টেলিভিশন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে সে তর্ক ও বিতর্ক। গতকাল ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ মঙ্গলবার রাতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতে আয়োজিত টিভি টকশোতে অংশগ্রহণ করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। টকশোতে আরও অংশ গ্রহণ করেন, অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সঞ্জীব দ্রং নেতা । আলোচনায় মুফতি ফয়জুল্লাহ পরিবর্তনের পক্ষে ইসলামপ্রিয় মানুষের অবস্থান ও যুক্তি ব্যাখ্যা করেন। তার বক্তব্যের চুম্বুকাংশ তুলে ধরা হলো।

তিনি বলেন, পঞ্চম শ্রেণিতে হুমায়ুন আজাদের ‘বই’ নামক একটি কবিতা ছিল। তাতে বলা হয়,  যে বই তোমাকে দেখায় ভয়, সেগুলি কোন বই-ই নয়। সে বই তুমি পড়বে না ‘ এখানে কুরআনকে বোঝানো হয়েছে। শুধু কুরআন নয়; প্রকারান্তে সব ধর্মীয় গ্রন্থকে অপমান করা হয়েছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে যুক্ত করা হয়েছিল ‘লাল গরুটা’ নামক ছোট গল্প । এখানে মুসলিম শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছিল গরু হচ্ছে মায়ের মত। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদ শিক্ষা দেয়া হয়েছিল। আমার এসব বই পড়বো না এবং আমাদের ছেলেদের এসব বই পড়াবো না।

লালন শাহর দর্শন, রমেশ সেনগুপ্তের মানব দর্শন এবং এস এ আবেদ আলীদের মত লেখকের লেখা কেন বাদ দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নর উত্তরে এসব কথা বলেন তিনি।
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, আমাদের বইয়ে আগে হজে যাওয়ার কথা ছিল। সেটা বাদ দিয়ে রাঁচি ভ্রমণের প্রবন্ধ যুক্ত করা হয়েছিল। ৭ম শ্রেণিতে যুক্ত করা হয়েছিল হৃদয় নামক একটি কবিতা। যেখানে হিন্দু দেবিদের প্রশংসা করা হয়েছিল। আমাদের ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা বাদ দিয়ে কেন আমাদের এই সব পড়তে হবে? ৭ম শ্রেণিতে লালু নামক গল্পে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছিল হিন্দুদের পাঁঠা বলির নিয়ম-কানুন। মুসলমানের সন্তানদের কেন পাঁঠা বলির নিয়ম কানুন শিক্ষা দেয়া হচ্ছিল? পাঁঠা বলি দেয়া এটা কোন মুসলমানের সংস্কৃতি নয়। ৮ম শ্রেণিতে পড়ানো হচ্ছিল হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়নের সংক্ষিপ্ত রূপ।
তিনি সরকারকে ধন্যবাদ বলেন, ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে পড়ানো হচ্ছিল লালনের গান, সময় গেলে সাধন হবে না। এ গানের সাথে জড়িয়ে আছে বিকৃত যৌনাচারের কাহিনী। একটা বিকৃত যৌনাচারের গল্প আমাদের সন্তানদের পড়ার জন্য বাধ্য করা হচ্ছিল। যা কোনভাবেই আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতির সাথে যায় না। সরকারের এই সব বাদ দেয়া উচিত ছিল, তারা বাদ দিয়েছে। এই কারণে তাদের সাধুবাদ দেয়া প্রয়োজন।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব ও হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিবের মুফতি ফয়জুল্লাহ আরো বলেন, বদ্ধ ঘরে বসে বাংলাদেশ চেনা অনেক মুশকিল। গ্রামে-গঞ্জে, নগরে বন্দরে পৌঁছতে হবে। জানতে হবে বাংলাদেশের মানুষ কি চান? বাংলাদেশের সব মানুষ অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ, আল্লাহভীরু। তারা কখনো ধর্মের উপর আঘাত সহ্য করতে পারেন না।

যারা ৮৫ বা ৯৫ কিংবা ১৮৫ জনের কথা বলেন তারা হচ্ছে শুধু তারাই। তাদের সাথে বাংলাদেশের কোন মানুষের সম্পর্ক আছে এটা আমি মনে করি না। সুতরাং তাদের বক্তব্য বা বিবৃতিকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন আছে আমার মনে হয় না। আমি মনে করি একটি রাজনৈতিক সরকার, নির্বাচিত সরকার তাদের গণমানুষের চিন্তা করা উচিত। গণমানুষের মতামতের উপর শ্রদ্ধা জানানো উচিত এবং গণমানুষ কি চান সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত আর সরকার সেইভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয় এবং ধর্মবিদ্বেষও নয়। ধর্ম নিরপেক্ষের কথা বলে ধর্ম বিদ্বেষ বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না। ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে যদি হয় সকল ধর্মের স্বাধীনতা তাহলে চলতে পারে। আর ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে যদি হয় ধর্মহীনতা তাহলে বাংলাদেশের মানুষ এটা গ্রহণ করবে না।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ