দিদার শফিক: আজ বাদ ফজর আম বয়ানের মাধ্যমে টঙ্গীর মাঠে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। সমবেত হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লাখ লাখ মুসল্লি। বিশ্ব ইজতেমা দাওয়াত ও তাবলিগের এক উজ্জ্বল নমুনা। উম্মতের কাছে দীন পৌঁছানো ও নিজেকে আমলে পরিশুদ্ধ করার এক বাস্তব ও উদ্ভাসিত দৃষ্টান্ত বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমার গুরুত্ব, প্রভাব ও তাতে অংশ গ্রহণের উপকারিতা ও দায়বদ্ধতার বিষয়ে কথা হয় শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদের সঙ্গে।
ইজতেমার প্রভাব কী জানতে চাইলে মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, ইজতেমার প্রভাব ব্যাপক ও বিস্তর।ইজতেমার প্রভাব পড়ে সর্বশ্রেণির মুসলমানের উপর। মুসলমানদের মাধ্যমে অমুসলিমদের উপরও এর বিরাট প্রভাব পড়ে। ইজতেমা মূলত দাওয়াত ও তাবলিগের একটি পূর্ণমাত্রার সমন্বিত রূপ। তাবলিগ নবি সা. এর কাজ। তার অবর্তমানে এ দায়িত্ব বর্তায় উম্মতের উপর। এধারা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে হবে। দাওয়াত ও তাবলিগ তথা ইসলামের বিধান ওআদর্শের প্রচার-প্রসার, কার্যত বাস্তবায়নের রূপরেখা না থাকলে নবি সা.এর এ কাজ থেমে যাবে। এ কাজকে অব্যাহত রাখতে ইজতেমার বিরাট প্রভাব রয়েছে।
তবে তাবলিগের বিভিন্ন শাখা আছে। দীনি প্রোগ্রাম, ওয়াজ-নসিহত, তালিম-তায়াল্লুমসহ আরো অনেক কিছু। সবগুলোই তাবলিগ। তবে মানুষের কাছে বড় পরিসরে সহজে দীন পৌঁছে দেওয়ার উত্তম পদ্ধতি হল ইলিয়াস রহ. এর সূচনা করা এ দাওয়াত ও তাবলিগের পদ্ধতি। তাবলিগের কাজের পদ্ধতিটা শুধু নতুন, কাজ একই। নবি ও তার সাহাবিদের কাজ যেমন অন্য দীনি কাজগুলো তেমনি তাবলিগ ও দাওয়াতের কাজও। মৌলিকভাবে ইজতেমা বিশ্ব মুসলিমেদের একটি মিলনমেলা। এর মাধ্যমে মুসলমানদের পরস্পরের একতা,ভ্রাতৃত্ব ও দায়িত্ব পালনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ইজতেমা বিরাট প্রভাবসৃষ্টিকারী জনসমাবেশ।
ইজতেমায় আলেমদের অংশ গ্রহণ করাকে কীভাবে মূল্যায়ণ করবেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে হক্কানি আলেমদের মূল ও গোড়া হল দারুল উলুম দেওবন্দ। কুসংস্কার-অন্যায়ের প্রতিবাদ ও বান্দাকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সে দেওবন্দের ছাত্র শায়খ ইলিয়াস রহ.। দাওয়াত ও তাবলিগের প্রবর্তক তিনি।দাওয়াত ও তাবলিগ দেওবন্দেরই একটি অঙ্গ। এর সাথে একতা পোষণ করা ও অংশ গ্রহণকে আরো জোরালো করা আলেমদের জন্য খুবই জরুরি। একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার- তাবলিগটা কার? কে করবে তাবলিগ? তাবলিগ তো আলেমদেরই কাজ।
আলেমদের জন্য ইজতেমার বিশেষ ফায়দা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাওয়াতে তাবলিগ ও তালিম যে এক ও অভিন্ন কাজ। একটা আরেকটার সম্পূরক। এটা বুঝে ইজতেমায় অংশ গ্রহণ করা। ইজতেমায় অংশগ্রহণ করলে এ অনুভূতি আরো উন্নত ও শাণিত হয়।
তাবলিগ জামাতের কিছু মুরব্বি আছেন আলেম নন, কিন্তু তারা এ কাজে লেগে থেকে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। তাদের কথা,বয়ান মাঝেমধ্যে কুরআন-হাদিসের পরিপন্থী হয়ে যায়। আলেমরা ইজতেমায় তাবলিগে অংশগ্রহণ করলে তাবলিগের মুরব্বিদের পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ পান। তাদের সঠিক পথে চালিত করার সুযোগ আসে। এটা তাদের সাথে না মিশলে হবে না। বা্ইরে থেকে কোন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ হয় না। ভুল হলে শুধরে দেওয়া আলেমদের দায়িত্ব। এ দায়িত্বটা তখনই আদায় হবে যখন দাওয়াত ও তাবরিগের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে।
ছাত্ররা ইজতেমা থেকে কী শিখবে জানতে চাইলে মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, ছাত্ররা তো আগামী দিনের জাতির রাহবার। ইজতেমা থেকে তাদের অনেক কিছু শেখার আছে। তবে ইজতেমা থেকে বিশেষভাবে তারা উম্মতের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর দায়িত্বজ্ঞান লাভ করবে। নিজেরা দীন শিখে, ইলম শিখে নিজেদের সমাজের মানুষকে দীন বোঝাতে হবে। এটা কুরআনে বর্ণিত কর্মসূচি। ইজতেমার সমাবেশ, পরিবেশ ও কার্যক্রম দেখে ছাত্ররা এ কর্মসূচির অনুশীলন করবে।
এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নিবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ আমার জুমার দায়িত্ব ছিল । তাই সকালে যেতে পারিনি। কোন এক ফাঁকে যাব ইনশা আল্লাহ। এছাড়া ইজতেমা দুই পর্বে হয় তো আমি যে অঞ্চলে আছি সে অঞ্চল দ্বিতীয় পর্বে যাবে।
আরআর