শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


বিরুদ্ধ মত দমনে জান্তার আইন ব্যবহার করছে সু চির সরকার!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

suchi3আওয়ার ইসলাম: বিরুদ্ধ মত দমনে মিয়ানমারের জান্তা সরকার টেলিযোগাযোগ আইনে একটি বিশেষ ধারা যুক্ত করেছিল। ‘৬৬ডি ধারা’ নামের কুখ্যাত আইনটি দিয়ে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির বহু নেতা-কর্মীকে জেলে ঢোকানো হয়েছিল।

এই আইন বাতিলে সু চির দল আন্দোলনও করেছিল। কিন্তু সু চি ক্ষমতায় আসার পর সেই আইনই এখন তাঁর সরকার বিরোধী মত রুদ্ধ করতে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মিয়ানমারে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য শাস্তি দেওয়াটা ছিল অনেক দশক ধরে চলা সাধারণ ঘটনা। শাস্তির ধরনও ছিল নিশ্চিত—দীর্ঘদিন কারাবরণ।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বে নতুন সরকার আসার পর ধারণা করা হয়েছিল যে জান্তা সরকারের সময়কার অন্ধকার যুগ হয়তো শেষ হতে চলেছে। কিন্তু না; গত শুক্রবার ইয়াঙ্গুনের আদালতে মা চাও নামের ৩২ বছরের এক নারী সাক্ষী হয়ে রইলেন সেই পুরোনো দৃশ্যের। তাঁর স্বামী মেয়াও ইয়ান নাউং থেইন নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক বন্দীদের একজন। ইয়ান নাউংকে পুলিশ ভ্যান থেকে নামিয়ে ঢোকানো হলো আদালত ভবনে।

ইয়ান নাউং ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় গবেষণা কমিটির সেক্রেটারি। তিনিই এখন মানহানির অভিযোগে ফৌজদারি বিচারের সম্মুখীন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফকে অপমান করেছেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতন নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছিলেন তিনি। ফলাফল, যা হওয়ার তা-ই। গত নভেম্বরের শুরুতে তাঁকে জামিন না দিয়ে কারাগারে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্ত্রী মা চাও সরকারের এই আচরণে ক্ষুব্ধ। তাঁর কণ্ঠে বেরিয়ে আসছিল সে কথাই। তিনি বলছিলেন, ‘এটা (ফেসবুকে মন্তব্য) কোনো অপমান নয়; এটা কেবলই বাস্তবভিত্তিক সমালোচনা। এটা বাক্‌স্বাধীনতা।’ সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শাসনাধীনে একই রকম অভিযোগে গ্রেপ্তার করা কয়েক ডজন ব্যক্তিরই একজন চাওয়ের স্বামী ইয়ান নাউং।

অনেকের আশা ছিল, বিস্তৃত পরিসর ও নিপীড়নমূলক আইনের অধীন যাকে-তাকে মামলায় ফাঁসানো ও বিচারের ঘটনার সু চির গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে দ্রুত অবসান ঘটবে। কেননা, সু চির দলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্য অতীতে এই আইনের অধীনেই রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে কারাগারে থেকেছেন।

পেন ইন্টারন্যাশনালের মিয়ানমার শাখা বলেছে, গত এপ্রিল থেকে অন্তত ৩৮ জনকে মিয়ানমারের টেলিযোগাযোগ আইনের কুখ্যাত ৬৬ডি ধারায় অনলাইনে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। দেশটির সেনা-সমর্থিত বিগত সরকার ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিকাশমান টেলিকম খাতে নিয়ন্ত্রণ জোরালো করার চেষ্টায় ওই আইন প্রণয়ন করে।

সু চির সরকার ক্ষমতায় এলেও মানবাধিকার নিয়ে মাত্র গত ১০ মাসেই আন্তর্জাতিক সমালোচনার সম্মুখীন তারা। বর্তমান সরকার আইনটি প্রত্যাহার বা সংস্কার করা দূরের কথা, বরং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন সদস্য নিজেরাই বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা করেছেন।

এই মামলা এখন এত সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে যে একে ফেসবুকে তামাশার আইন হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। যেমন আইনটি সংস্কারে প্রচার চালানো ব্যক্তিদের একজন কবি ও মানবাধিকারকর্মী মং সংখা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এখন যদি কেউ আমাদের উত্ত৵ক্ত করে, তবে আমরা বলি, আমি তোমার বিরুদ্ধে ৬৬ডি-এর মামলা ঠুকে দেব।’

মং সংখা ফেসবুকে এ পোস্ট দিলেও এরই মধ্যে গত বছর তিনি ছয় মাস জেল খেটে বেরিয়েছেন। কারণ, সেনা-সমর্থিত সরকারের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিদ্রূপাত্মক কবিতা ছেড়েছিলেন তিনি।প্রথম আলো

ডিএস


সম্পর্কিত খবর