দিদার শফিক: চলতি মাসের ১৩ তারিখ শুরু হবে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। টঙ্গীর তুরাগ তীরের ১৬০ একরের এ ইজতেমা ময়দানে ২৫ লাখের বেশি মুসল্লির সমাগম হয়।আখেরি মোনাজাতে এ সংখ্যা বেড়ে হয় দ্বিগুণ। ইজতেমা লাখো মানুষের মনন ও চেতনাকে শাণিত করে। ঝিমিয়ে পড়া ঈমানকে জাগ্রত করে তোলে। ইজতেমা সমাজ জীবনে ইতিবাচক নানান প্রভাব ফেলে। ইজতেমা থেকে কীভাবে বেশি বেশি উপকৃত হওয়া যায় এ ব্যাপারে কথা হয় অমুসলিমদের মাঝে দীনের দাওয়াত প্রচারে প্রসিদ্ধি লাভ করা ইসলামী দাওয়াহ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এর পরিচালক মুফতি যুবায়ের আহমদের সঙ্গে।
বিশ্ব ইজতেমা সমাজজীবনে কী প্রভাব ফেলে জানতে চাইলে মুফতি যুবায়ের আহমদ বলেন, মুসলমানদের বড় একটি অংশ ইসলাম সম্পর্কে, ঈমান-আমল সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখে না। এদের অনেকেই দীন শেখার সুযোগ পায়নি। ইজতেমা উপলক্ষে ইজতেমার আগে স্থানীয় জোড়ে বেশ আগ্রহের সাথে তাদের অংশ গ্রহণের সুযোগ হয়। ইজতেমার মাঠেও সালে, চিল্লায় যাওয়ার তাসকিল হয়। এ তাসকিলে অনেক জামাত বের হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে তারা নিজেরাও আমলের পরিবেশে থাকে অন্যদেরকেও ঈমান ও আমল শেখানোর পরিবেশ ও সুযোগ তৈরি করে দেয়। ফলে সমাজে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ইজতেমার মাঠ থেকে নবির মুহাব্বত এবং আমলের দৃঢ়তা ও পরিশুদ্ধতার সবক পায় লাখো মানুষ। ইজতেমা থেকে ফিরে এসে বে-নামাজি নামাজি হয়ে যায়। দাড়ি কাটতে অভ্যস্থ ব্যক্তি দাড়ি রাখে। মোট কথা বিশ্ব ইজতেমা সমাজজীবনে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তলাবা-উলামা ও সাধারণ মানুষ ইজতেমা থেকে কীভাবে উপকৃত হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে মুফতি যুবায়ের আহমদ বলেন, ইজতেমার মাঠে আলেম-উলামা ও ছাত্রসমাজের উদ্দেশে মুরব্বিরা বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। মুরব্বিদের সেই দিকনির্দেশনা আলেম-উলামা ও ছাত্রদের জন্য বিশেষ উপকারী। ইজতেমা থেকে আলেম ও মাদ্রাসার ছাত্ররা দাওয়াতি ফিকির নিজের মাঝে ধারণ করা এবং উম্মতের জন্য দিলে দরদ তৈরি করার মাধ্যমে বেশ উপকৃত হয়।
সাধারণ মানুষ ইজতেমা থেকে দীনের সঠিক বোঝ পায়। ঈমান ও আমলের প্রেরণা পায়। এখানে একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইজতেমার মাঠে শুধু বয়ান শোনার জন্য যাওয়াটা যেন মূখ্য না হয়। যা শুনবে তা যেন আমলে পরিণত করতে পারে সে নিয়তে শোনা। তাহলে ইজতেমা থেকে ব্যাপক পরিসরে উপকৃত হওয়া সম্ভব হবে।
ইজতেমায় শুধু আখেরি মোনাজাতে অংশ গ্রহণের ব্যাপারে তিনি বলেন, লাখ-লাখ মানুষের সমাবেশে, আলেম-ওলামা ও বুজুর্গদের আল্লাহর কাছে মিনতি করার ধরন দেখে ও আরজি শুনে অনেক মানুষের মন নরম হয়। হৃদয় বিগলিত হয়। ফলে নিজেকে আল্লাহর সমীপে সঁপে দেওয়ার একটি বার্তা গেথে যায় হৃদয়ের গভীরে। কান্নাকাটি করে নিজের অক্ষমতাকে আল্লাহর কাছে প্রকাশ করার একটি পরিবেশে অংশ গ্রহণ করা অবশ্যই ফায়েদাজনক। তবে এটাকে বাড়াবাড়ি পর্যায়ের গুরুত্ব দেওয়া আবার ঠিক নয়। মোনাজাতে অংশগ্রহণ করাকে জরুরি মনে করা বিদয়াত। জরুরি মনে না করে ফায়দা হাসিলের নিয়তে অংশ গ্রহণ করতে পারে। বয়ানে থাকার আলাদা ফায়দা তো আছেই। ইলম ও আমলের সারনির্যাস থাকে বয়ানে। যা জীবনের পাথেয় হতে পারে।
ইজতেমা থেকে বড় প্রাপ্তি কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলেম-উলামা ও দীনদার মানুষের সাথে তিন দিন কাটানোর ফলে মনের ভেতর এক ধরনের ভাবাবেগ তৈরি হয়। যাকে ভাবান্তর বলা হয়। ইসলামের একটি স্বচ্ছ চিত্র ফুটে ওঠে এই তিন দিনের মাঠে। তা দেখে ঈমান ও আমলের একটি জীবন্ত প্রেরণায় সবাই অনুপ্রাণিত হয়। জীবনের মূল উদ্দেশ্য কী তা সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারনা লাভ হয়।
আরআর