বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


আল্লাহ করিম মসজিদের ২০ কোটি টাকা আত্মসাত: সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন রাইয়ান

allah_karim_mosjidআত্মসাত, দুর্নীতি ও মসজিদের ২০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে রাজধানী মোহাম্মদপুরের আল্লাহ করিম জামে মসজিদের সাবেক যুগ্মসম্পাদক আবদুল কাদেরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

মসজিদের নিচ তলায় গড়ে ওঠা মার্কেটে ১০৪ টি দোকান বরাদ্ধ, ১১ বছরে ১৩৩ মাসের দোকানের ভাড়া, দান-অনুদানের হিসাবের টাকাসহ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে।

আত্মসাত, দুর্নীতি ও মসজিদের ২০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ করে গত ১৬ নভেম্বর মুহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

মামলার এজহারে বলা হয়, ওয়াকফ এস্টেটের অনুমতি ছাড়া আবদুল কাদেররা যোগসাজস করে মসজিদের নিচতলার ১০৪ টি দোকান ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে, অথচ ওয়াকফ এস্টেটের বিধি অনুযায়ী মোটেও কোন দোকান ৫ বছরের অধিক বরাদ্ধ দেওয়ার এখতিয়ার নেই।

মামলার এজহারে একই সঙ্গে ১০৪ টি দোকন বরাদ্ধ বাবদ পাওয়া- এক কোটি ষাট লাখ সত্তর হাজার টাকা এবং গত ১১ বছরে ১৩৩ মাসের দোকানের ভাড়া থেকে পাওয়া মোট- ষোলকোটি পয়ষট্রিলাখ টাকা মসজিদে ফাণ্ডে জমা হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার বাদি মো. জহির হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, আমরা মামলা করেছি, প্রশাসনকে সব তথ্য দিয়েছি, অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার কামনা করছি।

সাবেক যুগ্মসম্পাদক আবদুল কাদের ও তার লোকেরা ২০ কোটি টাকার গ্রহণের যে অভিযোগ করছেন এর কী ভিত্তি আছে, জানতে চাইলে মামলার বাদি মো. জহির হোসেন বলেন, সাবেক কমিটির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এবং তাদের কাগজপত্রেই এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা অনুসন্ধান করে বের করিনি। এমন কি সাবেক কমিটির সভাপতিসহ কয়েকজন তাদের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগও করে আসছেন বারবার।

এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, আল্লাহর ঘর মসজিদের সম্পত্তি ও দোকন বরাদ্ধে রয়েছে চরম অনিয়ম ও স্বজন-প্রীতি।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদুল ইসলাম, যুগ্মসম্পাদক আবদুল কাদের এই দুইজনের পরিবারেই বরাদ্ধ আছে ২৬ টি দোকান।

আল্লাহ করিম মসজিদের ব্যবসায়িক পরিচালনা কমিটির সভাপতি মু. আজিজুল হক দুজনের পরিবারের নামে-বেনামে ২৬ দোকান বরাদ্ধের অভিযোগ সত্য উল্লেখ্য করে বলেন, খুবই তুচ্ছভাবে মাত্র দেড়শ টাকার স্টাম্পে লিখে দোকান বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। ১০২ দোকান বরাদ্ধের কাগজে সাক্ষর করেছেন, যুগ্মসম্পাদক আবদুল কাদের। আর আবদুল কাদেরের নিজ নামে বরাদ্ধ দুটি দোকানের কাগজে সাক্ষর করেছেন সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদুল ইসলাম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদুল ইসলাম, তার স্ত্রী, ছেলে- মেয়ে, মেয়ের জামাই, শ্যালক, শ্যালিকার নামে মোট ১৫টি এবং আবদুল কাদের, তার স্ত্রী, মেয়ে, ভাই, বেয়াই, বেয়াইনের নামে মোট ১১ টি দোকান বরাদ্ধ নিয়েছে।

দোকান বরাদ্ধের এই প্রক্রিয়া কতটা বৈধ জানতে চাইলে ব্যবসায়িক পরিচালনা কমিটির সভাপতি মু. আজিজুল হক বলেন, মোটেও বৈধ নয়। কেননা সম্পত্তিটা ওয়াকফ এস্টেটের। আর এইভাবে বরাদ্ধ দেওয়া বা বেচার প্রক্রিয়া ওয়াকফ আইনে সমর্থন করে না। তিনিও আল্লাহরঘর মসজিদের সম্পত্তি নিয়ে এই অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ বিচার কামনা করেন।

মুহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জামাল উদ্দিন মীরের কাছে মামলার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, মামলা হয়েছে, পুলিশ আংশিক তদন্ত করেছে, বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে দেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগের সততা কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, আংশিক তদন্ত করে চূড়ান্ত মতামত দেওয়া যাবে না। তবে অভিযোগের প্রাথমিক সততা পাওয়া গেছে।

মামলার মূল আসামি আবদুল কাদেরের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন ২০ কোটি টাকা আত্মসাতকারী এই আসামি। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদুল ইসলামের সঙ্গে বারবার ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

এইচএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ