শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


দানবের নয় মানবের হোক জয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি শাহাদাত হোসাইন

tasbihবিশ্বে এখন দাবড়ে বেড়াচ্ছে দানবেরা।  কেঁদে মরছে মানবতা। মানবতা  ও মানবাধিকার কী তাও আজ অস্পষ্ট হয়ে ওঠছে স্লোগাননির্ভর মানবতার দৌড়ঝাপ দেখে।  ভুলে যাচ্ছে মহামানবের মানবতার সবক। ফাঁকা আওয়াজে নয়, প্রকৃত মানবতা চর্চার  মাধ্যমেই বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে মানবতা। আর সেই মানবতাই  ইসলামের নবি দুনিয়ার বুকে প্রথম পূর্ণাঙ্গ রূপে  প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন।

ইসলাম জাতি,ধর্ম,বর্ন নির্বিশেষে সকলের জন্য যে, অধিকার রচনা করেছে অন্য কোন জাতি ও ধর্ম তার দৃষ্টান্ত প্রদর্শনে আজও অপারগ।মুহাম্মাদ  স. দুনিয়ার বুকে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মদিনায় গিয়ে প্রথমেই সেখানের সকল ধর্ম ও বর্ণের লোকদের সমন্বয়ে একটি ঐতিহাসিক সনদ রচনা করেন।যার মধ্যে সকল ধর্মের মানুষের জন্য ন্যায্য অধিকার সংরক্ষিত ছিল।

মানবাধিকারের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আসে তা হলো,জীবনের নিরাপত্তা অধিকার ।দুনিয়ার প্রতিটি মানুষের বেচেঁ থাকার অধিকার রয়েছে।ইসলাম দুনিয়ার কোন মানুষকে অন্যের জীবন হরণ করার ঠিকাদারি দেয়নি।মানব জীবনের নিরাপত্তা দিয়ে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হচ্ছে,আল্লাহ তা’আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করোনা।আনআমঃ১৫১

মহানবি (স) ও সাহাবাগণ সারা জীবন এর উপর পূর্ণাঙ্গ অটল ও অনড় ছিলেন। বিনা কারণে কোন মুসলমানকে হত্যা করা যেমন হারাম তেমনিভাবে এমন কোন অমুসলিমকেও হত্যা করা হারাম;যে কোন ইসলামি দেশের প্রচলিত আইন মান্য করে বসবাস করে।রাসূল(স) বলেন,যে ব্যক্তি কোন যিম্মি অমুসলিমকে হত্যা করে,সে আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। আর যে আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গ করে,সে জান্নাতের গন্ধ ও পাবেনা।তিরমিযী।

রাসূল (স) অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধকালীন সময়ও নারী শিশু ও বৃদ্ধের উপর হাত তুলতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন। আর সাহাবাগণ ও তাঁর এই হুকুমকে যথাযথ পালন করেছেন।

জীবনের নিরাপত্তার পরে-ই মানুষের যে অধিকার আসে তা হলো,সম্পদের নিরাপত্তা অধিকার।ইসলাম মানুষের সম্পদের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে ঘোষণা করেছে,তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করো না। আল বাকারাঃ১৮৮

মানুষ বৈধভাবে যে কোন অর্থ সম্পদের মালিক হতে পারে। সে তার সম্পদ বৈধভাবে যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারে।ঋণ দিবে-নিবে,পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করবে।এতে তাকে কোন বাধা প্রদাণ করা হবে না।রাসূল(স) নিজে কখনো অন্যের সম্পদে হকতালাফি করেন নাই আবার কোন অসহায়-মাজলুমের সম্পদ কোন জালেম হরণ করতে চাইলে,রাসূলের নিকট সেই সংবাদ আসলে তিনি তার অধিকার উক্ত জালেম থেকে নিয়ে দিতেন।বর্তমান দুনিয়ায় যারা মানবাধিকারের স্লোগান দেয়। অন্যের জান-মালের নিরাপত্তার অধিকার নিয়ে কথা বলে গভীরে গেলে দেখা যায় যে,তারাই অন্যের সম্পদ লুটপাট করে বসে আছে।সে জন্যই হয়তো প্রবাদে কয়,বেড়ায় ক্ষেত খায়।

এরপরেই হলো মানুষের ইজ্জতের অধিকার।ইসলাম মানুষের এই অধিকারটিও সংরক্ষন করেছে।ইসলামে বলা হয়েছে,কারো অনুপুস্থিতিতে তার দোষ চর্চা করা মন্দনীয়।এর দ্বারা ব্যক্তির মনে কষ্ট লাগে ও ইজ্জতে আঘাত পায় ।তাই এমন কাজ করা শরিয়তে হারাম।ঘোষণা হচ্ছে,তোমরা পরস্পরে একে অন্যের দোষ চর্চা করো না।তোমাদের কেউ কি পছন্দ করবে যে,সে তার মরা ভাইয়ের গোশত খাবে?অথচ তোমরা একে অনেক বড় মন্দ বলে গণ্য করো। হুজরাতঃ১২

অর্থাৎ অন্যের দোষ চর্চা করা,ইজ্জতে আঘাত দেয়া এটা কেমন যেন মরা ভাইয়ের গোশত খাওয়ার ন্যায় ঘৃণিত অপরাধ।হাদিসে রাসূ স. বলেন,কোন মুসলমানের জীবন ও ইজ্জতের উপড় হামলা করা কা’বা ধ্বংস করার চেয়েও বড় অপরাধ।এভাবেই ইসলাম মানুষের ইজ্জতের অধিকার সংরক্ষন করেছে।

মানুষের মৌলিক অধিকারের একটি হলো জীবিকার অধিকার ।জীবন ধারণের জন্য জীবিকার নিরাপত্তা।সকল শ্রেণীর মানুষের জীবিকা নির্বাহে যেন কোন প্রকার সমস্যা দেখা না দেয় গরীব-অসহায় মানুষ যেন ক্ষুদার তাড়নায় মরে না যায় তাই ইসলামে যাকাত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর  যাকাত আদায় করা ফরজ করা হয়েছে। রাসূল স. প্রয়োজ়ন অতিরিক্ত শস্য গুদামজাত করতে ও কাল্পনিক সংকট সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন।পবিত্র কুরআনে মানুষকে জীবিকা উপার্জনের জন্য তাগিদ দিয়ে বলা হয়েছে,আর যখন নামায শেষ হয়ে যায় তখন তোমরা জমিনে বিচরণ করো আর আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ  করো। অর্থাত জীবিকা তালাশ করো।

ধর্মীয় স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার ।তা সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি ইসলাম মানুষকে দিয়েছে।প্রত্যেকটি মানুষ আলাদা আলাদা বিশ্বাস লালন করতে পারে ।এক্ষেত্রে ইসলাম কাউকে অন্যের বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করার অধিকার দেয়নি। কারো উপর জোরপূর্বক অন্য বিশ্বাস চাপিয়ে দেয়া যাবেনা।কুরআনে বলা হচ্ছে,ইসলামে কোন জবরদস্তি নেই। আল বাকারাঃ২৫৬

ইহুদি,খ্রিস্টান,হিন্দু,বৌদ্ধ যে, যে বিশ্বাস-ই লালন করুক তাকে সেই বিশ্বাস হতে বলপ্রয়োগ করে বাধা দেয়া যাবেনা।কারণ এটি তার মৌলিক অধিকার।তবে যে কোন ধর্মের মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া যেতে পারে,ইসলামের যৌক্তিকতা পেশ করা যেতে পারে, ইসলাম যে চিরন্তন সত্য ধর্ম এ বার্তা সবার কাছে পৌছে দিতে পারে। তবে জোরপূর্বক কাউকে ধর্মান্তারিত করা যাবেনা।

মানুষের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার হল,বাক-স্বাধীনতা বা মত প্রকাশের অধিকার।ইসলাম এই অধিকারটিকেও যথাযথভাবে সংরক্ষ্ণ করেছে। তবে বাক স্বাধীনতার নামে ধর্মহীনতার প্রলাপ বকা নিতান্তই মূর্খতা। যে যা করতে বা বলতে চাইবে তাকে তার মন মত সব করার ও বলার স্বাধীনতাকে বাক স্বাধীনতা বোঝালে তাও হবে বড় হাস্যকর ব্যাপার।স্বাধীনতা থাকতে হবে ধর্ম ও সংবিধানের আওতাধীন। যে স্বাধীনতা এর কোন একটিকে খর্ব করে সেটা মূলত স্বাধীনতা নয়।স্বাধীনতার নামে উগ্রতা। ইসলাম উগ্রতাকে পছন্দ করে না। মধ্যপন্থায় থেকে সবার অধিকার সংরক্ষণ করেছে ইসলাম।

এক কথায় ইসলাম দুনিয়ার প্রত্যেকটি মানুষের জন্য তার  ন্যায্য অধিকার নির্ধারণ করেছে। আজ বিশ্বে চোখ বুলালে দেখতে পাই সর্বত্র মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। মানবতা ডুকরে কাঁদছে।আজ যারা হিউম্যান রাইটস এর  কথা বলছে, তারাই নিজেদের স্বার্থের জন্য হাজ়ার হাজার,লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে।তাদের এই ন্যাক্কারজনক খেলা থেকে নারী,শিশু,বৃদ্ধ কেউ রেহাই পাচ্ছেনা।এদের এই ণির্মম খেলা বন্ধ করা দরকার। পক্ষপাতদুষ্ট দানবের নয়, মানবতার জয় হোক এটাই হোক বিশ্বব্যাপী মানবতার স্লোগান।

লেখক: আলেম ও শিক্ষক

ডিএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ