শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


বাধা না এলে লংমার্চ নিয়ে আমরা মিয়ানমার পর্যন্তই যাবো: মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

۞  রোকন রাইয়ান
আওয়ার ইসলাম

musaddek_billah2

গত ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অমানসিক নিপিড়নে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলছে হাহাকার। এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে কোনো ইটের খণ্ড নেই যা পোড়ানো হয়নি। কোনো খুঁটি নেই যা কয়লা হওয়ার বাকি।

মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধদের পাশাপাশি এসব করছে সেনাবাহিনীর লোকরাই। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে এমন তথ্য এলেও সেখানে এখনো চরছে জ্বালাও পোড়াও। গুলিতে হত্যা করা হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিমদের। নারীদের করা হচ্ছে গণধর্ষণ।

বিদেশি গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ, ওআইসি উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কেউ  হামলা বন্ধে এগিয়ে আসেনি। ফলে মিয়ানমারের উগ্র সেনারা সেখানে নির্বিচারে হামলাকে তীব্র থেকে তীব্রতর করছে।

বাংলাদেশে নভেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন বিষয়টি নিয়ে সৌচ্চার। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিরও আহ্বান করেছিল হেফাজতে ইসলাম ঢাকা। যদিও পুলিশের বাধায় সেটি সফল হয়নি। তবে একটি প্রতিনিধি দল দূতাবাসে গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছেন।

[caption id="" align="alignnone" width="960"]Image may contain: 8 people, people standing and beard প্রশাসনের সঙ্গে লংমার্চ বিষয়ে আলোচনায় নেতারা[/caption]

এমন পরিস্থিতির মুখে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দেয়। আগামীকাল ১৮ নভেম্বর এ লংমার্চ ঢাকার কাজলা থেকে সকাল ৯টায় শুরু হওয়ার কথা।

দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, একটি বৃহৎ ও ঐতিহাসিক লংমার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কাল। ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর দুই দিন ব্যাপী এ লংমার্চে কয়েক হাজার গাড়িতে করে টেকনাফের দিকে রওনা করবে নেতাকর্মীরা।

লংমার্চ উপলক্ষ্যে দলটির প্রচারণা লক্ষণীয়। অনলাইন অফলাইন দুই খানেই চলেছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পোস্টারিং, মাইকিংসহ লিফলেট বিতরণ, ব্যক্তি পর্যায়ের যোগাযোগ ও কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় প্রতিটি শাখায়।

লংমার্চের প্রচারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে লংমার্চের সিলসম্বলিত গেঞ্জি ও মাথার বেল্ট তৈরি করা হয়েছে। এসব ছবি পোস্ট করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

প্রস্তুতি দেখে নেতাকর্মীদের দাবির সত্যতা পাওয়া যায়- একটি ঐতিহাসিক লংমার্চ হতে চলেছে ১৮ ডিসেম্বর। কিন্তু এই লংমার্চ কি মিয়ানমারের ওই সমস্ত মানুষদের কোনো ফায়দা দেবে যারা ঘর হারিয়েছেন। যাদের সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে চোখের সামনে? কিংবা মিয়ানমারই কি ফিরে আসবে জাতিগত এই নিপিড়ন থেকে?

Image may contain: 1 person, standing

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং লংমার্চ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীর সঙ্গে। যিনি নেপথ্যে থেকে লংমার্চ বাস্তবায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন।

কালকের এই লংমার্চ হবে ঐতিহাসিক ও বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণকারী এমন দাবি করে তিনি বলেন, আরাকানের মুসলমানরা মজলুম। আমাদের পাশেই তারা অমানবিক অকথ্য নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের শান্তি ও অধিকারের জন্যই আমাদের এই লংমার্চ।

এই লংমার্চে মূলত কাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান মিয়ানমার না বাংলাদেশ- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, সারা মুসলিম উম্মাহকে জানাতে চাই মিয়ানমারে কী হচ্ছে। এই লংমার্চ আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি ও মিয়ানমারের উপর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই। পাশাপাশি বাংলাদেশের সরকারকেও আমরা জানাতে চাই পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশ হিসেবে আমাদের করণীয় রয়েছে, লাখো মানুষ তাদের পাশে আছে থাকতে চায়, সে অনুযায়ী তাদের সংরক্ষণ করুন।

এই লংমার্চে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি সম্ভব কিনা এ বিষয়ে সাইয়েদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ বলেন, অবশ্যই সম্ভব। আমরা একটি ঐতিহাসিক লংমার্চ করছি যাতে হাজারো মানুষ সমর্থন দিয়ে শরীক হবে ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া অতীতে যতগুলো এ ধরনের লংমার্চ হয়েছে সবই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে। আমরা টিপাইমুখ অভিমুখে লংমার্চ করেছিলাম এর আগে। যা সর্বত্র সারা ফেলেছিল।

আপনাদের বক্তব্য বিবৃতিতে ইদানিং মুসলিম জাতিসঙ্ঘের কথা উল্লেখ করছেন, কার কাছে এবং কেন এই দাবি করছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আব্বাজান মরহুম পীর মাওলানা ফজলুল করীম রহ. এই দাবি প্রথম করেছেন। সারা বিশ্বে ইহুদি বা অন্যান্য ধর্মবালম্বীরা যখন নির্যাতিত হয় সঙ্গে সঙ্গে নাক গলায় জাতিসংঘ। কিভাবে দ্রুত সমাধান করা যায় এ জন্য উঠে পড়ে লাগে কিন্তু মুসলিমরা নির্যাতিত হলে তাদের কোনো উচ্চবাচ্য থাকে না। কাশ্মীরে দেখুন, সিরিয়ায় দেখুন মুসলিমরা কিভাবে নির্যাতিত হচ্ছে রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে কিন্তু জাতিসংঘ এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালভাবে কোনো বক্তব্যও দেয়নি। এ জন্যই মুসলিম বিশ্বের প্রতি এই দাবি যেন আলাদা মুসলিম সংঘ করা হয় যা মুসলিমদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে।

[caption id="attachment_21306" align="alignnone" width="813"]isa লংমার্চ উপলক্ষে তৈরি হয়েছে এমন গেঞ্জি ও বেল্ট[/caption]

এর আগে বক্তৃতায় ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীমসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ঈমানদার জনতা প্রয়োজনে নাফ নদী পাড় হয়ে মিয়ানমার যাবে? এই লংমার্চ আসলে কতদূর পর্যন্ত যাবে, টেকনাফ না মিয়ানমার? জানতে চাইলে মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, আমাদের টার্গেট মিয়ানমার পর্যন্ত যাওয়া এবং আমাদের নেতাকর্মীরা সেভাবেই প্রস্তুত হচ্ছেন। সেটা সম্ভব হবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার বাধা না এলে।

সরকার বাধা দেবে কিনা  এ বিষয়ে তিনি বলেন, এর আগে মৌখিকভাবে আমরা প্রশাসনের কাছে অনুমোদন চেয়েছি তারা নিষেধ করেননি। কিন্তু এখন প্রস্তুতি দেখে তারা ভরকে গেছেন। সারাদিন কয়েকবার তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত অনুমোদন পেয়েছি এবং আশা করি কোনো সমস্যা নয় শান্তিপূর্ণভাবে আমরা প্রতিবাদ হিসেবে এই লংমার্চ সফল করব।

তিনি ঈমানদার মুসলিমদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা মানবতার খাতিরে এই লংমার্চে অংশ নিন। শান্তিপূর্ণভাবে লংমার্চ পালন করুন।

এআর

লংমার্চ শুরু ও পথসভার সূচি দেখতে এখানে ক্লিক করুন


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ