আওয়ার ইসলাম: ১৯৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামে আলেমরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এই প্রজন্মের তরুণ মাদরাসা শিক্ষার্থী ও আলেমদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বাইরে রাখা যৌক্তিক হবে না।
১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে দেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র ও আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের উদ্যোগে আয়োজিত বিজয় উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
মোকতাদির চৌধুরী নিজেকে মাওলানা আজাদ ও মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানীর ভাবশিষ্য দাবি করে বলেন, মহানবী সা. এর জীবনের অন্যতম শিক্ষা হলো দেশকে ভালোবাসা। তিনি একজন দেশপ্রেমী মানুষ ছিলেন। এ সময়ের আলেমরাও দেশ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চর্চা করছে এবং করবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশকে ভালোবাসবে এটাই প্রত্যাশা করি।
তিনি বলেন, তিনি বলেন, হুজুর সা. শুধু মুসলিমের নেতা না সমগ্র সৃষ্টির নেতা। কিন্তু আমরা অজ্ঞতার কারণে তাকে ক্ষুদ্র একটা গন্ডিতে আবদ্ধ করি। এটি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে ইসলামের সংঘাত নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো মানুষকে বিকশিত করা।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, মহান নবী সা. একজন দেশপ্রেমিক ছিলেন। তিনি শান্তির ধর্ম নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন। আজ তথাকথিত ইসলামের নাম ধারীরা বেহেশতের লোভ দেখিয়ে মানুষ হত্যা করছে। যা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনার সঙ্গে মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মহানবী শুধু মুসলমানদের নবী নয় তিনি সব ধর্ম সব মত সব প্রাণীর নবী।
আওয়ার ইসলাম সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুবের উপস্থাপনায় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক ড. মুশতাক আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, কবি আসাদ চৌধুরী, বায়তুল আমিন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হাম্মাদুল্লাহ রাহমানী, জামিয়া নূরিয়া কামরাঙ্গিরচর মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, কাওরান বাজার আম্বরশাহ মসজিদের খতিব মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান আতিকী, বুনইয়ান আবাসন লি. এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রশিদ আহমদ ফেরদৌস, রাহবার মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা সাইফুল ইসলাম, টিভি উপস্থাপক গাজী মুহাম্মদ সানাউল্লাহ, জামিয়া মাহমুদিয়া মেরাদিয়া ঢাকা’র শিক্ষাসচিব মাওলানা নূরুল আলম ইসহাকী, মাকতাবাতুত তাকীর স্বত্বাধিকারী আবদুল্লাহ জুলকারনাইন প্রমুখ।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. ও হামদর্দ এর সহযোগিতায় বিজয় উৎসবে ১০ তরুণকে ‘ক্ষুদে দেশ গবেষক সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। এরা হলেন, ১. মো. তাজনুর ইসলাম ২. আতহার আলী ৩. ঠাকুর প্রসাদ রায় ৪. বশির ইবনে জাফর ৫. কাউসার আহমদ ৬. সাইফল্লাহ মাহমুদ ৭. মো. আজিনুর রহমান লিমন ৮. আবদুল্লাহ আল আমিন ৯. মো. শামীম হোসেন ১০. মো. মিনহাজ উদ্দীন।
অনুষ্ঠানে মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. কে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বলে আখ্যায়িত করার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, হাফেজ্জি হুজুরের আহ্বানে হাজারও মানুষ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিল। তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানীদের রেজুলেশন বইয়ে স্বাক্ষর করেননি। ইতিহাস কলঙ্কিত না করে সুস্থভাবে চর্চার অনুরোধ জানান তিনি।
আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক রোকন রাইয়ানের শুভেচ্ছা বক্তব্যে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ বলেন, ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম ফতোয়া জারি করেছিলেন উপমহাদেশের শীর্ষ আলেমরা। আলেমরাই ইংরেজ খেদাও আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্যকে উদয়ের পথে সহযোগিতা করেছেন। বিজয় উৎসবের এই প্রেরণা তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বুনইয়ান আবাসন লি. এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর প্রধান পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌস বলেন, আমাদের স্বাধীনতা ও সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা আজ অপসংস্কৃতিতে ছয়লাব হয়ে যাচ্ছে। অথচ মানুষ সুস্থভাবে বেচে থাকার মাধ্যম হলো সুস্থ সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি ও সুস্থ চেতনাকে লালন ও বিকশিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ইসলামের দাওয়াতকে সর্বত্র পৌঁছে দেয়ার অন্যতম মাধ্যম মিডিয়া। এই মিডিয়াকে যদি ভালোভাবে গ্রহণ করা যায় তবে সুস্থ সমাজ ও সংস্কৃতির একটা পথ আমরা তৈরি করতো পারবো। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মন মানসিকতাও পরিবর্তন করে একটি সুন্দর দেশ গড়তে পারবো ইনশাআল্লাহ।
আরআর