বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


শাদমান ইবনে শহীদ-এর ৫ কবিতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

sadman

আজকেরমুখোমুখি

কবেকার সেই অদেখা মুহূর্তের অবসান

অস্থিরতায় কাটানো সময়, তবু

ঝরে গেছে শূন্যপথ;

কোল্ড কফির কাপে ছিলো একেকটা তৃপ্ত চুমক

ওপাশে লাল কোকের ক্যানে লাগানো গোলাপদানা

এ যেন মোহময় অস্ফুট ইঙ্গিতময় ব্যাকরণ!

মুখোমুখির আরেক অংশে দেখেছি

টেবিলের নিরবতা ভেদ করেনি তখনো বাইরের বৃষ্টি-

তাড়াহুড়ো করে গ্লাস ঠেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভুলে যাওয়া হয়েছে রিক্সা ডেকে দেয়ার রেওয়াজ

হয়তো তোমায় দেখতে দেখতে,

তবে দেখা হয়েছে

বৃষ্টিতে কাগজে মোড়ানো হুডতোলা রিক্সার ছুটে চলা শহুরে কালো পিচঢালা পথে।

এরকম সন্ধার ছবি কল্পচিত্রে এঁকেছি বহুবার

এবার বাস্তবচিত্রে তুমি এঁকে দেখালে বৃষ্টিস্নাত সন্ধার জলছবি।

হে বৃষ্টিস্নাত সন্ধা!

তুমি বারবার ফিরে এসো

এসো ফিরে বারবার তুমি বৃষ্টিস্নাত সন্ধা হয়ে

জলছবি আঁকা হবে তোমায় নিয়ে

তুমি প্রতি বিকেলের পর চলে এসো জলছবি হতে।

 

বৃষ্টিস্নাত সন্ধার জলছবি

তুমি যে একজন ভাল অভিনয়শিল্পী

এটা আমার অন্তত জানা ছিলোনা

তুমি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললে,কিভাবে?

বললাম,

দ্যাখো, কেউ কি এত সুন্দর করে, গোছগাছ করে, এমন কৃত্রিম হাসি,নিখুঁতভাবে হাসতে পারে?

তুমি কি মনে করো কেউ এটা চাইলেই পারে?

না না, পারে না;

এরকম হাসি হাসতে পারার জন্য আলাদা যোগ্যতা লাগে

এ যোগ্যতাটা আসলে মানুষের অজান্তেই চলে আসে।

আমি বলার আগে তুমিও এটা জানতে না।

আচ্ছা!

শেষমেশ তোমাকে একটা কথা বলি, পুরো তুমিই তো একজন অনন্যা। প্রতিভাঘর।

এই সুন্দর হাসিটা যদিও তোমার মন থেকে আসা নয়,

হোক না অভিনীত হাসি বা লোকে যাকে কৃত্রিম হাসি বলে, সেটা ধরেও যদি হাসো খুব স্বাভাবিকভাবে।অবচেতনে।

তখনও কিন্তু একটা বিষয় তুমি জানো না, জানা থাকে না তোমার,

এই হাসিটাই যে হয়ে যায় হাজারো অন্তর কেটে ফেলার তলোয়ার,

এ ব্যাপারে কখনো খেয়াল ছিলোনা তোমার।

আহা! যদি তুমি জানতে!

তাহলে হয়তো ভুলভাল হলেও অকৃত্রিম এক হাসি হাসতে,

আর জানান দিতে প্রতিটা মানুষই যে এক একজন অভিনেতা।

 

৩.

যদি তুমি জানতে!

পুকুরপাড়ে দাড়িয়ে

দেখছি নিঃশব্দ আলোর ঢেউ, আমার আশেপাশে নেই কেউ

মাঘের ঠিক মধ্যরাত। কনকনে শীতল বাতাস

শরীরকে কাবু করে ফেলছে

একটু দূরে কিছু অশরীরী ছায়া ঘন হয়ে আসছে, ঘন হয়ে আসছে

আমার দিকেই ধেয়ে আসতে আসতে একবারে পাশ থেকেই ডাকলো পরিতৃপ্ত দুটি আত্মা

রাতের পুকুর দেখা শেষ হবার আগেই।

শেষ করা গেল না রাতভর পুকুর দেখার শখ।

ওরা এখানে ধোঁয়ার টানে এসছিল।

 

৪.

অশরীরী

'বর্ণ' সেই ছোটবেলায় বর্ণের সাথে পরিচয়

বইয়ের পাতায় পড়েছি কত

ছুঁয়ে দিয়েছি বর্ণের গায়

তখন তো ভাবিনি একতৃতীয়াংশ জীবন বাদে দেখা পাবো এক মায়াবতী 'বর্ণে'র

যদিও এখনো বাতচিত হয়নি কোনো

তবু তো দেখা হয় প্রহর প্রহরে

এ 'বর্ণ' পড়তে পারছিনা ঠিকঠাক

আগেকার ছোটবেলায় পড়া সেই বর্ণমালায় তো এ মায়া চোখে পরেনি

এ 'বর্ণ' যে জগতের মায়ারথ

অনন্য,

শ্রীধারী এক ষোড়শী না হয় অষ্টাদশী

এ নিয়ে কোন খেয়াল নেই

আমি ছেলেবেলার বর্ণমালা ভুলে ডুবেছি মায়াবতী 'বর্ণে'....

 

৫.

এমন একটা দিন

এমন একটা দিন আমার জীবনেও এলো,

এমন একটা দিন নাকি সবার জীবনেই আসে ?

এমন একটা দিন আসার আগে এর আচরণটা ঠিক জানা থাকে না। অনন্ত আমার জানা ছিলোনা।

এমন একটা দিন এলো, রাত-দুপুর, সকাল-সন্ধে বেহুঁশের মত কেটে গেল

কি যেন ছিলো, কি যেন নেই,

অস্ফুট কোন ভাষা কি জমে ছিলো ঠোঁটের ফাঁকে?

কখনো ফস্কে বের হয়ে যাবে না তো?

এমন একটা দিনের কথা ভাববার আগেই চলে এলো;

এ আশা কখনো কেউ করে না হয়তো! করিনি আমিও।

রাতদুপুর, সন্ধা গড়ালো, পুরো একটা দিন চলে গেল-

এতগুলো বই জমা করে একখানা হাতে নিলাম, খুব প্রিয় বইটা, যেটা পড়ে আমি কাঁদি।

এমন একটা দিন এলো, যখন খুব পছন্দের বইটাও হাতে নিয়ে একপাতা উল্টাতেই বিষাদ মনে হলো।

ফেলে রেখে, রুদ্রের প্রেমকবিতার এক লাইনেই বিতৃষ্ণা ধরে গেল, এটাও থুয়ে দিলাম।

চুপচাপ, খুব চুপচাপ শুয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ।

অল্পকিছু সময় পার করলাম।

লাইট অফ। পুরো অন্ধাকার রুম, অমাবস্যারাতের মতন।

আমি চুপচাপ কিছু ভাববার চেষ্টা করলাম, নাহ, কিছুতেই কিছু হলো না

কিছুই ভাবতেই পারলাম না।

ইশ! এমন একটা দিন চলেই এলো!

আহা! এত তাড়াতাড়িই অপেক্ষা করছিলো এমন একটা দিনের! নির্বিকার।

জেএম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ