۞ আফিফা মারজানা
১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের রাওয়াল পিন্ডিতে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ছোটভাইয়ের কেনা শখের গিটারে টুংটাং করতে করতে একসময় নিজেই হয়ে গান গিটারিস্ট ও গায়ক। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ফাঁকে ফাঁকে স্থানীয় ক্যাম্পাসগুলোতে গেয়ে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন।
অসাধারণ গায়কি নিয়ে সুদর্শন জুনাইদ ক্রমে হয়ে ওঠেন গায়ক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন ডিজাইনার , গীতিকার। অভিনয়ের খাতায়ও নাম লেখান তিনি। সৎ ও আদর্শবান পিতার সন্তান হওয়ায় ছোটবেলার আর্থিক অনটন ও কষ্ট ভুলতে ডুবে যান অর্থ, খ্যাতি ও ভোগ বিলাসের দুনিয়ায়।
তাঁর, ‘মেরা দিল বদল দে, ইলাহি তেরি চৌখাট পর, ইয়ে সুবহে মাদিনা, মুহাম্মাদ কা রওজা, মিঠা মিঠা পেয়ারা পেয়ারাসহ অনেক গান রাসূলপ্রেমী মানুষের মুখে মুখে ফেরে। প্রেমিক হৃদয়কে আকুল ও তৃপ্ত করে। জুনাইদ জামশেদ বলেন- ‘আমি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দারুল উলুম জাকারিয়া মাদরাসায় গেলাম। সেখানে প্রতিটি ছাত্রের মুখে মুখে আমার গজল উচ্চারিত হচ্ছে। আমি অভিভূত হয়ে গেলাম।’
২০০৮ সালে জুনায়েদ জামশেদ বাংলাদেশ সফরে আসেন। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র) কনসার্টে নাত পরিবেশন করেন। তখন তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘নবী মোর পরশমণি’ গানটি গেয়ে শ্রোতাদের চমকে দেন।
এর আগে ২০০৫ সালে প্রথমবারের মত বাংলাদেশে আসেন প্রিয়বন্ধু বিখ্যাত ক্রিকেটার সাঈদ আনোয়ারের সাথে দাওয়াতি সফরে। হ্যাঁ, তিনি শুধু একজন গায়কই ছিলেন না, সেই সাথে তিনি একজন নিরলস ও মুখলিস দায়ীও ছিলেন। বরং তিনি একজন দায়ীই ছিলেন। গান ও তাবলীগের মেহনত দিয়ে তিনি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন হকের দাওয়াত। তাঁর দাওয়াত পাকিস্তানের তরুণদের ভেতর ও শোবিজ অঙ্গনে বেশ প্রভাব ফেলে।
হাজারো মানুষ খুঁজে পায় পথের দিশা ও ফিরে আসে সঠিক পথে। সেই সাঈদ আনওয়ারেরই তাবলীগী সফরের নুসরতে চিত্রাল যান তিনি। দশদিনের নির্ধারিত সফর শেষে আরও দুইদিন থাকেন। আজ বিকেলে ইসলামাবাদ ফেরার পথে বিমান দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে ইলাহির চৌখাটে ফিরে যান প্রিয় জুনাইদ জামশেদ। সাথে ছিলেন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী নেহা জুনাইদ। যিনি তাঁকে দীনের পথে ফিরে আসতে ও অটল থাকতে একই পথে হেঁটেছেন। যাঁর সম্পর্কে জুনাইদ বলেন- ‘বস্তুত আমার এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর অবদান অনেক বেশি। তার সহযোগিতা ও সমর্থন না পেলে আমার এই রাস্তায় আসা কষ্টকর হয়ে যেত। সে-ই আমাকে আমার জগতে ফিরে যেতে নিরুৎসাহিত করেছে। আল্লাহর উপর ভরসা করার তাগিদ দিয়েছে। তার অবদান এই জীবনে ভুলার নয়। আল্লাহ্ পাক তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।প্রকৃত বন্ধু তারাই যারা সবসময় বন্ধুর কল্যাণ কামনা করেন এবং বন্ধুকে সৎপথে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। অনুরূপভাবে আদর্শ স্ত্রী তারাই যারা স্বীয় স্বামীকে অন্যায় ও হারাম থেকে বাঁচানোর জন্য এবং গুনাহের পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা ও সহযোগিতা করেন এবং এ কারণে যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট হাসিমুখে বরণ করে নেন। আমার হিদায়াতের পথে আসায় আমার সেই দ্বীনি সাহায্যকারী বন্ধু ও আমার সহযোগিনী স্ত্রীর ত্যাগ আমার জীবনের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
শুধু জীবনে নয় মরনেও তাঁকে সঙ্গ দিলেন তাঁর প্রিয়তমা! আল্লাহ তাঁদের সকল ভুল ক্ষমা করুন। প্রিয় জুনাইদ জামশেদকে জান্নাতের মাহফিলের মধ্যমণি বানিয়ে দিন সুরের পাখি করে। আমীন।
আরআর
আরো পড়ুন: থেমে গেল হৃদয় শীতল করা সুর