শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া আল্লামা আহমদ শফীর বিশেষ চিঠি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

hathajari

আওয়ার ইসলাম

[আজ (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীর চিঠি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে আল্লামা আহমদ শফীর পাঠানো চিঠি পড়ে শোনান মাওলানা আনাস মাদানী। আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো ]

 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)এর সভাপতি
আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী’র মহাপরিচালক
শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দা.বা.) এর

বিশেষ চিঠি

বরাবর-
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ঢাকা।

বিষয় : কওমী মাদরাসার শিক্ষা সনদের মান প্রদান প্রসঙ্গে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।
আশাকরি মহান আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আল্লাহ আপনাকে ও আমাদের সকলকে তাঁর সন্তুষ্টি ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করুন।

আপনার সরকার বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাসমূহের সনদের সরকারি স্বীকৃতির যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অবশ্যই ইতিবাচক এবং অভিনন্দযোগ্য। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এ সম্পর্কে কিছু বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা খুব জরুরি মনে করছি।

আমরা আপনাকে জানাতে চাই, আমরা কওমী মাদরাসা সনদের সরকারি মান চাই, তবে তা নিঃশর্ত হতে হবে। শর্ত এবং সরকারি কোন প্রকারের নিয়ন্ত্রণ ব্যতিরেকে দাওরায়ে হাদীসের (টাইটেল) সনদের মান নির্ধারণের দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা আপনার সামনে ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দের উদাহরণ পেশ করতে চাই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
এ কথা নিশ্চয়ই আপনি জানেন, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার পর ভারত উপমহাদেশের উলামায়ে কেরাম ও মুসলমানদের উপর যে বিপর্যয় নেমে আসে, তা থেকে উত্তরণের জন্য ১৮৬৬ সালে দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দেওবন্দ মাদ্রাসা ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে সারা দুনিয়ায় সর্বমহলে একটি বহুল পরিচিত নাম। হযরত মাওলানা কাসেম নানুতুভী (রাহ.) ঐতিহ্যবাহী এই দ্বীনি বিদ্যাপিঠ প্রতিষ্ঠা করেন। সূচনাকাল থেকে অদ্যাবধি এই প্রতিষ্ঠান দ্বীন ও ইসলামের বহুমুখী খিদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছে। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের হাত থেকে এই উপমহাদেশ মুক্ত হওয়ার পেছনে দারুল উলূম দেওবন্দের অবদান অবিস্মরণীয়।

১৯৭১ সালে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দেওবন্দের তৎকালীন প্রধান পৃষ্ঠপোষক হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী (রহ.)এর অবদানের জন্য আপনি ২০১৩ সালের ১লা অক্টোবর তাঁকে মরণত্তোর পদক ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করেন। যুগে যুগে সকল ভ্রান্ত মতবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে দেওবন্দের আলেমগণ সবসময়ই সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন।

আপনি জানেন, বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসাসমূহও ভারতের সেই দেওবন্দ মাদরাসার অনুসারি। দেওবন্দের মতোই এসব প্রতিষ্ঠান ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা, ইসলামি সভ্যতা, সংস্কৃতি, ঈমান-আকিদা, আমল-আখলাক ও নৈতিক চিন্তাধারা পরিগঠনে মৌলিক ভূমিকা পালন করে থাকে। এসব বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো, পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর পরিপূর্ণ বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে আল্লাহওয়ালা, সৎ, দেশদরদী ও আদর্শ নাগরিক তৈরি করা।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কওমী মাদরাসাসমূহের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, সমাজ সংস্কার ও ইসলামের মহান বার্তা সর্বস্তরের জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। যে কারণে দলমত-শ্রেণী-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সমাজের প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মানুষের সঙ্গে কওমী মাদরাসাগুলোর আত্মার সম্পর্ক বিদ্যমান। এ প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বজনীন, দলীয় রাজনীতিমুক্ত এবং স্বায়ত্বশাসিত। বাস্তব কারণেই কওমী মাদরাসাসমূহ পথনির্দেশিকা হিসেবে দারুল উলূম দেওবন্দের ‘অষ্ট মূলনীতি’ অনুসরণ করে চলে। এ মূলনীতিগুলোর অন্যতম হলো, এসব প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা ও মৌলিকত্ব অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে ‘সরকারি সাহায্য গ্রহণ না করা ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকা’। তবে এটা কোনো অর্থেই রাষ্ট্র বা সরকারের প্রতিপক্ষ হওয়া নয়। বরং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে কোনো ত্যাগ স্বীকার ও সংবিধানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে (যতক্ষণ পর্যন্ত তা কুরআন-সুন্নাহবিরোধী না হয়) কওমী মাদরাসা কখনও পিছপা হয়নি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
ইতিহাস ও ঐতিহ্যমন্ডিত এই দারুল উলূম দেওবন্দের শিক্ষা সনদের সরকারী মান ও মূল্যায়ন বৃটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলসহ বর্তমান ভারতে বিদ্যমান থাকলেও বাংলাদেশে তা কার্যকর নেই। অথচ সময় ও বাস্তবতার তাগিদে কওমী মাদরাসা পড়–য়া আলেমদের কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণ, তাদের মেধা-প্রতিভার মূল্যায়ন এবং সর্বোপরি দেশ ও জাতির আরো বৃহৎ পরিসরে সেবাপ্রদানের সুযোগ উন্মুক্ত করার স্বার্থে কওমী সনদের সরকারি মান নির্ধারণের প্রয়োজন রয়েছে। এটি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে বহু বছর আগ থেকেই আছে। ভারত সরকার কোনো প্রকার শর্ত, নিয়ন্ত্রণ ও দাপ্তরিক ছাড়াই দারুল উলূম দেওবন্দের সনদের (নির্ধারিত বিষয় ও ক্ষেত্রে) রাষ্ট্রীয় মান এবং সাধারণ শিক্ষার সমমান প্রদান করেছে। ফলে দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের (কওমী মাদরাসার) সনদধারী শিক্ষার্থীগণ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও চাকুরীর সুযোগ পাচ্ছে। ভারতের সড়ক, রেল ইত্যাদি জনপরিবহনে দারুল উলূম দেওবন্দের কার্ডধারী শিক্ষার্থীরা অর্ধেক ভাড়া প্রদানসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো সুবিধা ভোগ করে থাকে।

আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে, ১৯০৯ সালে কলকাতা আলিয়া মাদরাসায় যখন টাইটেল খোলা হয়। তখন সেখানে এমন অনেককে মুহাদ্দিস পদে নিয়োগ দেয়া হয়, যারা দেওবন্দ অথবা দেওবন্দী ধারার কওমী মাদরাসা থেকে সনদপ্রাপ্ত। যেমন- মাওলানা ইসহাক বর্ধমানী, মাওলানা ইয়াহইয়া, মাওলানা আব্দুল হামিদ চট্টগ্রাম। পরবর্তীতে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ইসলামিয়াত বিভাগে হযরত মাওলানা জফর আহমাদ উসমানী ও মাওলানা ইসহাক বর্ধমানীকে (বদলী করে) অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাঁরা উভয়ই দারুল উলূম দেওবন্দের সনদধারী ছিলেন। এমনিভাবে হায়দরাবাদ উসামানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শাইখুল হিন্দ মাহমূদ হাসান দেওবন্দী (রাহ.)এর স্নেহধন্য বিশেষ ছাত্র দেওবন্দের সনদপ্রাপ্ত মাওলানা মানাজির হাসান গিলানীকে প্রধান অধ্যাপক পদে নিযুক্ত করা হয়। চট্টগ্রাম আলিয়া মাদরাসা এবং সিলেট আলিয়া মাদরাসায়ও দেওবন্দের সনদপ্রাপ্ত আলেমরা শিক্ষকতা করেছেন।

পাকিস্তান আমলেও ১৯৫৪ সালে ঢাকা আলিয়ায় হেড মুহাদ্দিস পদে নিয়োগ পান দেওবন্দের সনদপ্রাপ্ত আলেম। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের খতীব মাওলানা উবাইদুল হক সাহেব এবং অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন তাঁরই ভ্রাতা দেওবন্দের সনদপ্রাপ্ত আলেম মাওলানা আবদুল হক। কিশোরগঞ্জ হায়বতনগর আলিয়া, পাবনা আলিয়াসহ দেশের বহু আলিয়া মাদরাসায়ও দেওবন্দের সনদপ্রাপ্ত অনেক আলেম কর্মরত ছিলেন। তন্মধ্যে মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক, মাওলানা নূরুদ্দীন গওহরপুরী প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দের শিক্ষা সনদের মান, মর্যাদা ও মূল্যায়ন বৃটিশ ও পাকিস্তান উভয় শাসনামলেই ছিল এবং এখনো আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ট দেশ ভারতে কোনরূপ সরকারী নিয়ন্ত্রণ ও দাপ্তরিক সম্পর্ক ছাড়াই তা কার্যকর আছে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশেও কয়েক বছর পর্যন্ত এই ধারা চালু ছিল। এ হিসেবে আমি বলতে চাই, যেহেতু এ দেশের কওমী মাদরাসাগুলো চিন্তা-চেতনা ও নীতি-আদর্শে সেই দেওবন্দকেই আবহমানকাল থেকে অনুসরণ করে পরিচালিত হয়ে আসছে এবং এই মাদরাসাগুলোর শিক্ষা কারিকুলাম ও শিক্ষা ব্যবস্থা দেওবন্দের আদলেই সুবিন্যস্ত ও নিয়ন্ত্রিত, সেহেতু দেওবন্দের আট মূলনীতি শতভাগ অক্ষুন্ন ও অটুট রেখে বৃটিশ ও পাকিস্তান আমল এবং বর্তমান ভারত সরকারের উল্লিখিত নমূনা অনুসরণ করে আমরা আপনার কাছে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণমুক্ত কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদের সরকারী মান চাই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
আমরা আপনার জ্ঞাতার্থে বিনীতভাবে আবেদন করতে চাই যে, দেওবন্দের ৮ মূলনীতির ৭ নম্বর মূলনীতি হলো ‘এর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় সরকারের অংশীদারিত্ব ক্ষতিকর’। সুতরাং সরকারের কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে আমাদেরকে আমাদের শিক্ষা সনদের মান দিলে, তা এই মূলনীতির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। আমাদের পূর্ব পুরুষদের কঠোর সাধনা, অবর্ণনীয় ত্যাগ এবং চোখের পানির ফসলই হচ্ছে এ সব কওমী মাদরাসা। খেয়ে না খেয়ে যে কোন মূল্যে এগুলোকে আগলে রেখে রক্ষা করাই ছিল তাঁদের মিশন। ধৈর্য্য, সহনশীলতা, নেক আমলের মানসিকতা, দেশপ্রেম, পিতা-মাতার আনুগত্য, মুুরুব্বী ও গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, পারিবারিক ও সামজিক মূল্যবোধের প্রশিক্ষণ, মানব সেবা, সুশৃঙ্খল জাতি গঠনে আদর্শিক ও নৈতিক শিক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সর্বোপরি আত্মার উৎকর্ষ সাধন করে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলাই হচ্ছে কওমী মাদরাসা শিক্ষাধারার মূল সৌন্দর্য। শিক্ষা ও দীক্ষার এক অপূর্ব সমন্বয় পরিলক্ষিত হয় কওমী শিক্ষাব্যবস্থায়। সে কারণেই আমরা চাই, আমাদের এসব স্বকীয়তা যেন কোন প্রকার সরকারী নিয়ন্ত্রণের ফলে কোনভাবে বিন্দুমাত্রও নষ্ট না হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
আমি জানি, আপনি ব্যক্তিগত জীবনে ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি যতœবান এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ লালন করেন। দাওয়াত-তাবলীগ, ইসলামি শিক্ষা ও তাহযীব-তামাদ্দুনের ব্যাপারে আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও আন্তরিকতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। কিন্তু আপনার সরকারের কিছু বিপথগামী ও ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তি হয়তো আপনার অগোচরে সাধারণ শিক্ষার পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন এবং ইসলামি ভাবধারা বিধ্বংসী সিলেবাস বাস্তবায়ন করে চলেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সন্তানদের ওপর তারা নাস্তিক্যবাদি ও হিন্দুত্ববাদী পাঠ্যক্রম চাপিয়ে দিয়েছে।

যার ফলে দেশের কোটি কোটি মুসলমান অভিভাবক তাদের সন্তানদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও নৈতিকতা বজায় রাখার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। আমরা এ বিষয়টিতে আপনার ব্যক্তিগত তদারকি ও হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
আপনাকে বিনয়ের সঙ্গে একটি জরুরী বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কওমী মাদরাসাসমূহ বাস্তবে কোন দুনিয়াবী স্বার্থে প্রতিনিধিত্ব করে না। এসব মাদরাসার উদ্দেশ্য হলো, শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন এবং মুসলমানদের সন্তানদেরকে কুরআন হাদীসের শিক্ষায় নৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।

কওমি মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষাক্রমসহ সকল কার্যক্রমই উন্মুক্ত। সরকারী, বেসরকারী যে কেউ যে কোন সময় অবলোকন করতে পারেন। দেওবন্দী নীতি-আদর্শের কঠোর অনুসরণের ফলে কওমি মাদ্রাসাসমূহ রাজনৈতিক কারণে সরকার বিরোধী যে কোন আন্দোলন ও তৎপরতা থেকে সবসময় দূরে থাকে এবং ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক কারণে সরকারবিরোধী কোন কিছুতে জড়িত হওয়ার আশংকা নেই। কওমি মাদ্রাসাসমূহ সকলপ্রকার উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার ঘোরতর বিরোধী। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের সাথে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতার কোন ঘটনা নেই। কওমি মাদ্রাসার ক্যাম্পাসে কখনোই বিশৃঙ্খল আচরণ বা ছাত্র সংঘাতের নজির নেই। কওমি মাদ্রাসাসমূহ সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সদকা, যাকাত ও অনুদানের অর্থ গ্রহণ করে লাখ লাখ গরীব, এতিম, নিঃস্ব ও অবহেলিত পরিবারের শিশু-কিশোরদের ভরণ-পোষণের ব্যয়ভার গ্রহণ করে ধর্মীয় ও আদর্শিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি নিরক্ষরমুক্ত দেশ গঠনে বিশাল ভূমিকা ও অবদান রেখে চলেছে।

সুতরাং কোনভাবেই যেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য ও আদর্শচ্যুত হওয়ার আশংকা না জাগে, কওমি মাদ্রাসার সুশৃঙ্খল পরিবেশে যেন বজায় থাকে, সেই লক্ষ্যে কওমী মাদ্রাসা সনদের সরকারী মান প্রদানের বিষয়ে দেশের সিংহভাগ কওমি মাদ্রাসার প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মাধ্যমে বৃহত্তর আলিমসমাজের মতামতকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন। আলেম সমাজে যাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই এমন কারও মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে কওমী সনদের স্বীকৃতির মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেবেন না।

এ পর্যায়ে আপনার নিকট আমাদের নিবেদন হচ্ছে-
বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে যেভাবে দারুল উলূম দেওবন্দের দাওরায়ে হাদীসের সনদকে এম.এ.এর মান দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছিল এবং বর্তমানেও ভারতে যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে, ঠিক সেভাবে এবং সে আদলে আপনি যদি অনুগ্রহপূর্বক আমাদের কওমী মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদীসের সনদকে ইসলামিয়াত ও আরবী সাহিত্যে এম.এ-এর মর্যাদা দিয়ে মূল্যায়ন করার পাশাপাশি ধর্মীয় ক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরামের কাজের পরিধি অবারিত করতে সম্মত হন, তাহলে আমরা স্বানন্দে তা গ্রহণ করতে আগ্রহী। সেমতে আমাদের প্রস্তাবনা নিম্নরূপ-

১। ভারতে দারুল উলূম দেওবন্দ যেভাবে নিজ স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা নিয়ে স্বাধীনভাবে চলছে, বাংলদেশের কওমী
মাদরাসাসমূহও সেভাবে চলবে।
২। বর্তমান নিজস্ব ধারায় কওমী মাদরাসার প্রতিষ্ঠা, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা-দীক্ষা ও সিলেবাস ইত্যাদি
সম্পূর্ণরূপে বহাল রেখে কওমী সনদের সরকারী মান বা মর্যাদা দেওয়া যেতে পারে। মাদ্রাসার স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য,
স্বাধীন শিক্ষাক্রম পরিচালনা ও স্বকীয়তা বিনষ্ট করে সনদের সরকারী মর্যাদা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়।
৩। প্রস্তাবিত কওমী মাদ্রাসা শিক্ষানীতি-২০১২ এবং তদালোকে তৈরিকৃত কওমী মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩
বাতিল করতে হবে। কারণ এ জাতীয় কর্তৃপক্ষ বা আইন কওমী মাদ্রাসার ঐতিহ্যবাহী ধারাপরিপন্থী। এর ফলে
দেড়শত বছর থেকে চলে আসা কওমী মাদ্রাসা তার চিরায়ত স্বকীয়তা হারাবে বলে আমি আশংকা করি।
৪। কওমী মাদ্রাসাসমূহকে সরকারী অনুদান, এমপিওভুক্তি ও নিবন্ধনসহ নিয়ন্ত্রণমূলক যে কোন রকম পদক্ষেপ
থেকে বিরত রাখতে হবে।
৫। কওমী আলেমদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ঐকমত্য ছাড়া কওমী সনদসহ কওমী মাদরাসার ব্যাপারে যে কোন সিদ্ধান্ত
গ্রহণ না করার জন্যে অনুরোধ জানাচ্ছি।

পরিশেষে আপনার সুস্বাস্থ্য ও সর্বাঙ্গীন কল্যাণ কামনা করছি।
(আহমদ শফী)
সভাপতি- বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাকুল মাদারিস)।
মহাপরিচালক- আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
তারিখ- ১৯ নভেম্বর, ২০১৬ খ্রীস্টাব্দ।

আরআর

আল্লামা শফীর নেতৃত্বে ঐক্যের আহবান জানালেন প্রধানমন্ত্রী

কে হচ্ছেন দেশ গবেষক, অংশ নিন আপনিও


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ