শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাবের চৌধুরী

one_minitপ্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে বলতে গেলে কয়েকটি সাম্রাজ্য পুরো বিশ্বকে শাসন করতো। যেমন: গ্রেট বৃটেন- নিউজিল্যান্ডে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ইউরোপের বিশাল অঞ্চল, আরো অনেক দেশসহ, দক্ষিণ আফ্রিকা, আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত ছিল এর বিস্তৃতি।

ফ্রান্স- আলজেরিয়া, মরক্কো, লিবিয়া, বেনিন, ইথিওপিয়া সহ উত্তর আফ্রিকার অনেক দেশ ছিল তাদের রাশিয়ান সাম্রাজ্য- পূর্ব ইউরোপের অনেকটাসহ এশিয়ার উত্তর ভাগের পুরোটাই তাদের দখলে ছিল।

অস্ট্রো-হাঙ্গেরি(বা অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি) সাম্রাজ্য- বর্তমান অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরিসহ বসনিয়া, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভাকিয়া, চেক রিপাবলিক; সার্বিয়া ও রোমানিয়ারর বড় অংশ; ইটালি, মোন্টেনেগ্রো, পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের কিছু অংশ এই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

জার্মান সাম্রাজ্য- দেশ হিসেবেই তারা ছিল তখন যথেষ্ট শক্তিশালী। আফ্রিকা আর প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু ছোট দ্বীপ ছিল তাদের কলোনী।

উসমানি খেলাফত- দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার অংশবিশেষ ছিল এই সাম্রাজ্যের অংশ।

এ সাম্রাজ্যগুলো তাদের মিত্র দেশগুলোকে সাথে নিয়ে ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, প্যাসিফিক আইসল্যান্ড Pacific Islands, চীনা, ভারত মহাসাগর, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলীয় এলাকা জুড়ে ৪বছর, ৩মাস, ২সপ্তাহ ব্যাপী যে যুদ্ধ চালিযে ছিল সে নিষ্ঠুর নৃশংসতার নাম নাম প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। শুরু হয় ২৮ জুলাই ১৯১৪. শেষ হয় ১১ নভেম্বর ১৯১৮.

এক পক্ষে ছিল মিত্র বাহিনী (Allied )। এতে ফ্রান্স, বৃটেন সাম্রাজ্য, রাশিয়া, সার্বিয়া, বেলজিয়াম, জাপান, ইটালি, আমেরিকা, গ্রীক, রুমানিয়া, পর্তুগালসহ আরো অনেক দেশ সরাসরি অংশ নেয়। এর বিপরীতে কেন্দ্রিয় শক্তি( সেন্ট্রাল পাওয়ার )-তে ছিল জার্মান সাম্রাজ্য, অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য, উসমান সাম্রাজ্য ও বুলগেরিয়াস আরো অনেক দেশ।

নব্য ও উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রসার! দেশগুলোর পরস্পর পূর্ব শত্রুতার জের। কাঁচামাল সংগ্রহ এবং তৈরি পণ্য বিক্রির জন্য উপনিবেশ স্থাপনে প্রতিযোগিতা, সাম্রাজ্যাবাদ বিস্তার, পূর্বের সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখা, নতুন শক্তির উত্থান, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যালেন্স অব পাওয়ার ঠিক রাখা ইত্যাদি বিষয় এ বিশ্বযুদ্ধের পেছনে কাজ করেছে।

বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় হলো সেসময় আন্তর্জাতিক ব্যালেন্স অব পাওয়ার ঠিক রাখার জন্য এবং এর মাধ্যমে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রায় সবাই পছন্দমত দেশ ও সাম্রাজ্যের সাথে অনেক আগে থেকে বিভিন্ন আঙ্গিকে মৈত্রি চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল। যুদ্ধটি বিশ্বযুদ্ধে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য অন্যান্য বিষয়ের সাথে এ চুক্তির টানও ছিল বিপুল লক্ষ্যণীয়।

তবে এর সরাসরি সূত্রপাত একটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে। ১৯১৪ সালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্যের হবু সম্রাট, ডিউক ফার্ডিনান্ড সিংহাসনে আরোহনের কিছুদিন আগে সারায়েভো শহরে স্ত্রীসহ সার্বিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদী আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়! এর বিচার নিয়ে সার্বিয়ার সাথে তাদের মনোমালিন্য এক পর্যায়ে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করে।জার্মান অস্ট্রিয়াকে সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়ায়। জার্মানির দুই প্রতিবেশী ফ্রান্স এবং রাশিয়া সার্বিয়ার পেছনে এসে দাঁড়ায়। অস্ট্রিয়ার দ্বারা সার্বিয়া আক্রমনের পরপর জার্মানি-অস্ট্রিয়ার সাথে ফ্রান্স-রাশিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এ কিছুদিন পর সার্বিয়ার পক্ষে এসে রাশিয়া যোগ দিলে পূর্বচুক্তি অনূযায়ী জার্মানির পক্ষে এসে যোগ দেয় উসমানি খেলাফত।

জার্মানি কর্তৃক নিরপেক্ষ বেলজিয়াম আক্রান্ত হলে পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটেন জার্মানির বিপক্ষে যুদ্ধে ঘোষণা করে! ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় বলশেভিক (কম্যুনিস্ট) বিপ্লব সংঘটিত হয়। ফলে রাশিয়া যুদ্ধ ত্যাগ করে নিজের ঘর সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। ইটালীর সাথে জার্মান-অস্ট্রো-হাঙ্গেরির পূ্র্ব মৈত্রী চুক্তি থাকলেও এ দেশটি পরবর্তীতে মিত্রশক্তির সাথে যোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি জাহাজে করে ফ্রান্স ব্রিটেনের জন্য রসদ যাওয়ার সময় জার্মান সাবমেরিন তাদের ডুবিয়ে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ১৯১৭ ছয় এপ্রিল জার্মানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করে পরিপূর্ণরূপে এটিকে বিশ্বযুদ্ধে রূপ দেয়।

১১ নভেম্বর ১৯১৮সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ যুদ্ধ সমাপ্ত হয়। এতে সেন্ট্রাল পাওয়ার বা কেন্দ্রিয় শক্তি পরাজিত হয়। কী পরিমাণ মানুষ মারা গেছে এ নিয়ে নানা সংখ্যা পাওয়া যায়। তবে এটুকু বলা যায় কয়েক কোটি মানুষ নিহত হয়। কয়েক কোটি মানুষ আহত হয়। এবং অসংখ্য মানুষ নিখোঁজ হয়। এ যুদ্ধের শেষে রাশান, জার্মান, অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য ও উসমানি খেলাফত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এর মধ্যে কিছু যায় নতুন সাম্রাজ্যের অধীনে আর অস্ট্রিয়া, চেক স্লোভাকিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া এবং তুরস্ক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে। তিনটি বড় সাম্রাজ্যের পতন হয়। ১. উসমানি সাম্রাজ্য। তুরস্ক ছাড়া বাকি সকল এলাকা ফ্রান্স ও বৃটেন ভাগ করে নিয়ে যায়।

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত হয় লীগ অব নেশন্স। এক বর্তমান জাতিসংঘের ওল্ড ভার্সন বলা যায়। যুদ্ধে পরাজিত জার্মানীকে অস্ত্রহীন করে ২৬৯ বিলিয়ন গোল্ড মার্ক জরিমানা করা হয় এবং ১৮৭২ এর যুদ্ধে জার্মানকর্তৃক দখলকৃত আলসাক লরেন ফ্রান্সকে ফেরত পায়। এ যুদ্ধের সুযোগে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে জার সম্রাটের পতন হয়ে ক্ষমতায় আসে লেনিনের সমাজতন্ত্র। বিশ্ব পরিস্থিতি ও বিশ্ব মানচিত্রে আসে বিপুল পরিবর্তন।

এ যুদ্ধ ছিল পৃথিবীর জন্য এক ভয়াবহ দুর্দিনের কাল। এর আগে এমন আতংক আর দুর্যোগ পৃথিবীর ইতিহাস প্রত্যক্ষ করে নি।

সূত্র : উইকিপিডিয়া-আরবি ও ইংরেজি ভার্সন এবং গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন আরবি বাংলা নেটসাইট।

আরআর

১ম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন। জায়নবাদ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ