শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

আরাকান : সেই সালতানাত, এই গণকবর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুসা আল হাফিজ

rohinga3মিয়ানমারে আরাকান মুসলমানের কান্না শুনতে পাচ্ছেন? বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে তাদের বুকচাপড়ানোর শব্দ।রাখাইন বা মগদস্যু আর সেনাবর্বরতায় কবর রচিত হচ্ছে মানবাধিকারের,উৎপীড়নের আগুনে জ্বলছে গ্রামের পর গ্রাম। আরাকানের সবুজ নিসর্গে বইছে রক্তস্রোত।জনপদগুলোতে বেড়ে গেছে শকুনের সংখ্যা।পচাগলা দুর্গন্ধ তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে লাশের দিকে।

নাফ নদিতে মানুষের লাশ,পথের পাশে মানুষের লাশ,ঝোপের আড়ালে মানুষের লাশ।কুকুর কামড়াচ্ছে মানুষের লাশ,শেয়াল টানছে মানুষের লাশ। লাশগুলো বিকৃত, ধড় বিচ্ছিন্ন দেহ থেকে। নাড়িভূড়ি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, মেরুদণ্ড কেটে নেয়া হয়েছে,চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। আগুনে পোড়ানো লাশ।কয়লা হয়ে যাওয়া লাশ। এ লাশ নারীর।আহা, নারী! এ লাশ শিশুর। আহা,শিশু! এ লাশ প্রেমিক যুবকের,প্রেমময়ী যুবতির।ওরা ধর্ষণ করেছে এবং হত্যা করেছে।ওরা হাত - পা বেধেছে এবং ফেলে দিয়েছে সাগরে।ওরা গ্রাম ঘেরাও করেছে এবং আগুন জ্বালিয়ে শেষ করে দিয়েছে গোটা গ্রাম। মাটিতে শুধু রয়ে গেছে ভষ্ম,বাতাসে উৎকট দুর্গন্ধ।

যারা মরছে,তারা রোহিঙ্গা। কেউ নেই তাদের পাশে।তাদের জীবন ভাসছে মৃত্যুর তরঙ্গে,অনিশ্চয়তার নৌকায়।তাদের জীবন রোদন করছে দূর্যোগের ভেতর। কতোটা দূর্যোগে তারা? সমুদ্রে ভাসমান আশ্রয়হীন নৌকাগুলো দেখুন,ঘর ছেড়ে পলাতক ঠিকানাহীন মানুষগুলোর চেহারা দেখুন,সীমান্তের কাঁটাতারে মুখ ঘষতে থাকা নিষ্পাপ,শিশুদের বিপন্নতা দেখুন।ক্ষুধা- পিপাসায় কাতর নারী- শিশুদের বহর গুচ্ছ গুচ্ছ বিপন্নতার ছবি হয়ে মৃত্যু থেকে পালাতে ছুটছে।তাদের উদাস দৃষ্টি এবং ভাষাহীন চেহারা যেন বিদ্রুপ করছে বিশ্ববিবেকের প্রতি।

কোথায় মানবাধিকারের বড় বড় গলাবাজ? কোথায় মুসলিম ভ্রাতৃত্বের নামে গড়ে উঠা ওআইসি? কোথায় আরবের পেট্রোডলারওয়ালা শেখ- আমিরের দল? এমনকি সৌদি আরবের কণ্ঠস্বরও তো শুনা গেলো না।সে আটকে আছে ইয়ামান সংকটে।ইরান শিয়াবাদ ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। তুরস্ক ব্যস্ত সিরিয়া নিয়ে।পাকিস্তান সন্ত্রস্ত ভারতের হুমকিতে।

জাতিসংঘ কী করছে? পূর্বতিমুরের স্পৃহা এখন গেলো কই? দক্ষিণ সুদানের আবেগ এখন কোথায়? বামিয়ানে এক মূর্তির জন্য যা করেছেন, বার্মায় মানবতার জন্য তা করছেন না কেন? আমেরিকা-ব্রিটেন বা ইউরোপিয় ইউনিয়ন তো মানবাধিকার ইস্যুতে খুবই সোচ্চার! মানবতার এই দুঃসময়ে তারা কই? রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশকে শুধু আশ্রয় প্রদানের চাপ দিয়ে সব দায়িত্ব তাদের শেষ?

অথচ কী ভয়াল গণহত্যা সেখানে চলমান! বাংলাদেশের টেকনাফ কিংবা শাহপরির দ্বীপে দাঁড়ালেই দেখা যাচ্ছে দূর্যোগ! দেখা যাচ্ছে দাউদাউ আগুনে পুড়তে থাকা রোহিঙ্গাপল্লী। দেখা যাচ্ছে মানুষকে জীবন্ত দগ্ধকরণ।বাতাসে শুনা যাচ্ছে তাদের চিৎকার,বার্মিজ সেনাদের গুলির শব্দ আর পলায়ণপর মানুষকে ধাওয়া করা মগদের উল্লাস।
রোহিঙ্গারা হারিয়ছে সব ধরণের অধিকার।তারা হয়ে আছে নিজদেশে পরবাসী। তারা বন্চিত নাগরিক অধিকার থেকে।১৯৮২ সালে মিয়ানমারের সরকার নাগরিকত্ব আইন করে তাদের নাগরিক স্বীকৃতি দেয়নি।তিন ধরণের নাগরিকের মধ্যে রাখা হয়নি তাদের। তাদেরকে নিছক বসবাসকারী বলা হয়েছে।অথচ রোহিঙ্গারা এক হাজার বছর ধরে এখানকার অধিবাসী!

সেই অষ্টম শতক থেকে আরাকানে তাদের অধিবাস।তাদের নাম থেকই সেকালে আরাকানের নাম হয়েছিলো রোহিং।বাঙালী,পার্সিয়ান, তুর্কি,মোঘল, আরব, পাঠানরা সমুদ্রের পার্শ্ববর্তি এ অন্চলে বসতি স্থাপন করেন।আরাকান রাজ ইঙ্গিচন্দ্রের রাজত্বকালে (৭৮৮-৮১৩)কয়েকটি আরবীয় বাণিজ্যবহর রামব্রি দ্বীপের কাছে বিধ্বস্ত হয়।যাত্রীরা পার্শ্ববর্তি দ্বীপে আশ্রয় নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন কিছু ডাক্তার, সৈনিক ও সংগীতজ্ঞ। প্রত্যেকেই জ্ঞান ও আচরণে উজ্জ্বল।স্থানীয়রা তাদের আচরণে মুগ্ধ হয়।রাজা তাদেরকে গ্রহণ করেন অতিথি হিসেবে।তাদেরকে সেখানে বসবাসের অনুরোধ জানান।

সেই থেকে শুরু। ( তারপর কী, বলবো? বলতে ইচ্ছে করছে না। কারণ আমি আরেকটি স্পেনের ইতিহাস লেখার বেদনা বহন করতে পারছি না)

লেখক: কবি ও চিন্তক

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ