শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
হজযাত্রীর জন্য চালু হচ্ছে হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, থাকবে অ্যাপ কুয়েট শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন- ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ  আইন করে ভারতে মুসলিমদের অধিকার হরণ করা যাবে না: জমিয়ত করাচি-চট্টগ্রাম রুটে নৌযান চলাচলকে স্বাগত জানিয়েছে দুই পক্ষ: পাকিস্তান ২৬ এপ্রিল জমিয়তের কাউন্সিল, প্রাধান্য পেতে পারে তরুণ নেতৃত্ব কওমি সনদ বাস্তবায়ন  করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব: ধর্ম উপদেষ্টা কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতেই কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব: জামায়াত সেক্রেটারি গাজায় গণহত্যা ও ভারতে ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে জমিয়তের বিক্ষোভ ইয়েমেনে মার্কিন হামলায় নিহত অন্তত ৩৮ ভারতীয় মুসলিমরা এখনই না জাগলে অধিকার নয়, পরিচয়ও হারাতে পারে

ইসলামি বীমার বৈশিষ্ট্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

঳ আমানুল্লাহ নোমান

islami-bank_ourislam24-copyমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশের অধিকাংশ মানুষ শরিয়াহ মোতাবেক অর্থনৈতিক লেনদেন করতে চায়। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ইসলামি বীমা ও ব্যাংকিং এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। সেই মোতাবেক দেশে অনেকগুলো ইসলামি ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক ইসলামি ব্যাংকও বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ব্যাংক ও বীমা পরস্পর পরিপূরক এমতাবস্থায় দেশে ইসলামি বীমা প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে ইসলামি বীমা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে সরকার ইসলামি নামকরণ এবং মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলসে শরিয়া কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে দেশে ইসলামি জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০০ সালে জীবন বীমায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড কার্যক্রম শুরু করে। অপরদিকে সাধারণ বীমায় ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে আরও বেশকিছু ইসলামি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ইসলামি শরীয়াহ বিশেষজ্ঞগণ বিদ্যমান প্রচলিত সুদ ভিত্তিক বীমা ব্যবস্থাকে ইসলামীকরণের জন্যে যেসব পরিবর্তনের সুপারিশ করেছেন সেগুলো বীমা গ্রহীতার স্বার্থ সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। ইসলামি শরীয়াহ বিশেষজ্ঞদের এসব সুপারিশ ইসলামি তাকাফুল ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিচিত।

এক. কোম্পানি তার তহবিল শরীয়াহসম্মত উপায়ে বিনিয়োগ করবে। শরীয়াহতে নিষিদ্ধ ও সুদের সংশ্রব রয়েছে এমন কোন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য বা কার্যক্রমে কোন অর্থ বিনিয়োগ বা লেনদেন করা চলবে না। তাকাফুল পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ডের বিধি-বিধানের উৎস হবে শরীয়াহ।

দুই. প্রচলিত বীমা ব্যবসায়ে সৃষ্ট তহবিল বীমা কোম্পানির মালিকানায় থাকে। কিন্তু ইসলামি বীমা কোম্পানিতে পলিসি গ্রহীতাদের অর্থে সৃষ্ট তহবিল তাদেরই মালিকানায় থাকে। বীমা গ্রহীতাগণকে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মতোই বিবেচনা করা হয় যেন তারা কোম্পানির মুনাফা বা নীট উদ্বৃত্তের অংশীদার হতে পারেন।

তিন. কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টর-এ বীমা গ্রহীতাগণের পক্ষ হতে পর্যাপ্ত প্রতিনিধি থাকবে। তারা কোম্পানির নীতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে সকল হিসাব পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা রাখবে।

চার. কোন নির্দিষ্ট বছরে বীমা গ্রহীতাগণ যে প্রিমিয়াম প্রদান করেছেন তাতে যদি কোম্পানিতে তাদের অংশের লোকসান পূরণ না হয় তাহলে তারা অতিরিক্ত অর্থ প্রদানে বাধ্য থাকবেন।

পাঁচ. বীমা প্রতিষ্ঠানটির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবেই একটি শরিয়াহ সুপারভাইজারী বোর্ড থাকবে। এই বোর্ড শরিয়াহর আলোকে প্রতিটি কাজ তদারক এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবেন।

ছয়. ইসলামি তাকাফুল ব্যবস্থায় নোমিনী বা মনোনীত ব্যক্তি ট্রাস্টি বা অছি হিসাবে কাজ করবে। প্রাপ্ত অর্থ শরীয়াহ সম্মত ওয়ারিশদরে মধ্যে বন্টন করে দেওয়া তারই দায়িত্ব।

সাত. বীমা কোম্পানি দুটি পৃথক ও সুস্পষ্ট হিসাব রক্ষা করবে: (ক) শেয়ারহোল্ডারদের হিসাব ও (খ) পলিসি গ্রহীতাদের হিসাব। পলিসি গ্রহীতাদের হিসাবে তাদের জমাকৃত প্রিমিয়াম, চাঁদা এবং তাদের তহবিল বিনিয়োগ করার ফলে অর্জিত মুনাফায় তাদের যে অংশ সবই জমা হবে।

পলিসি গ্রহীতাদের হিসাব থেকে সার্ভিস চার্জ ও দাবি পূরণের পর উদ্বৃত্ত হতে প্রয়োজনীয় রিজার্ভ আলাদা রেখে অবশিষ্ট অর্থ তাদের মধ্যেই পুনঃবন্টিত হবে। যদি কখনো কোন ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে তা সাধারণ রিজার্ভ তহবিল হতে পূরণ করা হবে। অবশ্য যদি সাধারণ রিজার্ভ তহবিল ঘাটতি পূরণের জন্যে যথেষ্ট বিবেচিত না হয় তাহলে শেয়ারহোল্ডারদের রিজার্ভ ও মূলধন হতে তা করযে হাসানা আকারে গ্রহণ করা হবে। ভবিষ্যতে পলিসি গ্রহীতাদের হিসাবে উদ্বৃত্ত হলে তা থেকে প্রথমেই এই করযে হাসানা পরিশোধিত হবে। শেয়ারহোল্ডারগণ কোনক্রমেই পলিসি গ্রহীতাদের তহবিল বা উদ্বৃত্ত গ্রহণ করতে পারবে না। শেয়ার মূলধন বিনিয়োগ হতে উপার্জিত আয় শেয়ারহোল্ডারদের একাউন্টেই দেখানো হবে এবং চলতি ব্যয় ও অন্যান্য দাবী পরিশোধের পর উদ্বৃত্ত অর্থ তাদের মধ্যেই বন্টিত হবে।

আট. একটি যাকাত বা সাদাকাহ তহবিল গটিত হতে হবে। শেয়ার মূলধন, রিজার্ভ ও মুনাফা হতে প্রতি বছর ২.৫% হারে গ্রহণ করে এই তহবিলে জমা করা হবে। পলিসি গ্রহীতাদের সম্মতি সাপেক্ষে তাদের হিসাবের নীট উদ্বৃত্ত হতেও বার্ষিক ২.৫% হারে যাকাত আদায় করে এই তহবিলে জমা দেওয়া যেতে পারে। তহবিলটি কোম্পানীর বোর্ড অব ডিরেক্টরসের গৃহীত উপবিধি অনুসারে বোর্ড ট্রাষ্টি দ্বারা পরিচালিত হবে।

এসব কার্যাবলীর মাধ্যমে ইসলামী বীমা পরিচালিত হয় বিধায় ইসলামী বীমা সার্বজনীন এবং কল্যাণকর।

আরআর

 


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ