মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ইসির নতুন নির্দেশনা ইরান সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম: চীন বান্দরবানে দুর্গম পাহাড়ে অভিযানে কুকি-চিনের ৯ সদস্য গ্রেফতার আজমিরীগঞ্জে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কমিটি গঠন উদীচীর কর্মকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিব্রত: ডিএমপি অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিজ্ঞাপন নীতিমালা শিগগিরই বাস্তবায়ন : তথ্য প্রতিমন্ত্রী ইরানের হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে সহায়তা করা নিয়ে যা বলছে সৌদি মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে বাংলাদেশে শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে যোগদান করলেন মুফতি মকবুল হোসাইন কাসেমী খুলনায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলন নেতার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

ট্রাম্প কি মুসলমানদের জন্য সত্যিই আতঙ্কের?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান
wahiduddin-khanরিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমেরিকা তার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে। আগামী বছর ২০ জানুয়ারি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেট নেতা বারাক ওবামা তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন। হিলারি ক্লিন্টন-ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণাই সম্ভবত দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক আর উত্তাপ ছড়িয়েছে। অভিবাসী এবং স্থানীয় মুসলমানদের নিয়ে করা ট্রাম্পের রুঢ় মন্তব্যগুলো চরম বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এমনকি ট্রাম্প আমেরিকায় মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবিও করেছিলেন। নির্বাচনপূর্ব এসব মন্তব্যকে মুসলমানরা তাদের প্রতি অপমান হিসেবে ধরে নিয়েছেন। নির্বাচনের পর বহু আমেরিকান মুসলমান হতাশা আর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন মুসলমান কলামিস্ট লিখেছেন, এই প্রথম আমেরিকা ইসলামের জন্য আতংকের প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করল।
এ ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আমেরিকান মুসলমানদের জন্য সুখকর নয়। এসব আখেরে আমেরিকায় মুসলমানদের ভাবমূর্তিকেই সংকটে ফেলবে। আমেরিকান মুসলমানদের আবেগী হওয়া উচিত হবে না। এ ক্ষেত্রে বরং ইসলামের চিরপ্রাসঙ্গিক শিক্ষার অনুসরণ করা প্রয়োজন। এ ধরনের ব্যাপারগুলোতে ইসলাম প্রতিক্রিয়া দেখানোকে উৎসাহিত করে না; মুসলমানদের স্বভাবসিদ্ধ চিরন্তন মূলনীতির ওপর অবিচল থাকার নির্দেশ দেয়।
কোরআন মতে, প্রাচীন মিসরে আল্লাহ মুসাকে নবী হিসেবে পাঠান। তখন মিসর একজন স্বৈরাচারী ও অহংকারী ফারাও দ্বারা শাসিত হচ্ছিল। আল্লাহ যখন মুসা এবং তার ভাই হারুনকে ফারাওয়ের কাছে পাঠালেন, তখন তাদের বলে দিলেন, ‘তোমরা উভয়ে ফিরাওনের কাছে যাও, সে তো সীমালংঘন করেছে। তবে তোমরা তার সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলবে; হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে’। সুরা তা-হা, আয়াত: ৪৩ ও ৪৪
কোরআনের এ আয়াত শিক্ষা দেয়, বিশ্বাসীদের উচিত সবার সঙ্গে সদ্বব্যবহার করা এবং সাধারণভাবে নিজেদের পরিচিত করানো। বিশ্বাসীদের উচিত সর্বাবস্থায় ইতিবাচক আচরণ করা। ইসলামের শিক্ষানুযায়ী, বিশ্বাসীদের প্রতিটি কাজই হওয়া উচিত উচ্চতর নৈতিকতায় পরিশুদ্ধ।
প্রাচীন মক্কায় ইসলামের নবী ধর্মবাণী প্রচারে সচেষ্ট হলে দুজন ব্যক্তি, আমর ইবনে হিশাম এবং উমর ইবনে খাত্তাব তার প্রাধানতম শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হন। নবীজি তখন তাদের অভিশাপ দেননি বা তাদের বিরুদ্ধে অপভাষাও ব্যবহার করেননি। বরং তাদের জন্য প্রার্থনা করলেন, ‘হে প্রভু, এ দুজনের যে কোনো জন দ্বারা আপনি ইসলামকে শক্তিশালী করুন’। আমরা জানি, নবীর এই দোয়া উমর ইবনে খাত্তাবের ক্ষেত্রে গৃহীত হয়েছিল। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং এর একজন শক্তিশালী সমর্থক হন। এ দোয়া শুধু দোয়া নয়। একজন বিশ্বাসীর প্রতিপক্ষের আচরণের জবাবও এটিই। একজন মুসলমানের জন্য তার প্রতিপক্ষের প্রতি এভাবেই দোয়া করা উচিত; এমনকি দোয়া কবুল হওয়ার সামান্য আশা না থাকলেও দোয়া করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষাটা হল, প্রতিপক্ষ আবেদনে না দিলেও প্রার্থনার মাধ্যমে একজন বিশ্বাসী ব্যক্তির পক্ষে ইতিবাচকতার মধ্যে বেঁচে থাকা সম্ভব।
আমেরিকান মুসলমানদের জানা উচিত, প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বভাবধর্মজাত, তা সে পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন। আমাদের মনে রাখা জরুরি, সব মুসলিমবিরোধী বক্তব্য, ট্রাম্প যা করেছেন, তা করেছেন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে তিনি এখনও কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। মুসলমানদের উচিত তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা, নিজেদের অনুভূতি তার সঙ্গে ভাগ করা এবং তার মঙ্গল কামনা করা। অর্থাৎ অভিযোগের ভাষায় তার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হওয়া ঠিক হবে না। শুধু মুসলিম সম্প্রদায় বিশেষের সমর্থক হিসেবে নয়, বরং আমেরিকার একজন নাগরিক হিসেবেও ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো উচিত। দশ বারেরও বেশি আমেরিকা সফর এবং দেশটিকে গভীরভাবে পাঠ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমেরিকায় সাধারণভাবে ইসলামফোবিয়ার কোনো প্রমাণ নেই। তাছাড়া আমেরিকা এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে সব ধর্মই রয়েছে। ইসলাম এবং অন্যান্য বিশ্বাস সব ধরনের স্বাধীনতাই ভোগ করে এ শর্তে যে, কেউ সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারবে না। শান্তি বজায় রাখলেই হল।
আধুনিক সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি হল, অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করা। তাই আমেরিকায় অন্যদের মতোই মুসলমানরাও সমান স্বাধীনতা ভোগ করে। এ সুযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। এ মূলনীতিটি বুঝতে পারলে আমেরিকায় মুসলমানরা অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো থাকবে। আমেরিকায় ইসলামফোবিয়ার কিছু নেই। আমেরিকায় কোনো আতংক থেকে থাকলে তা আছে কেবল নাইন-ইলেভেনের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে। মুসলমানরা নিজেদের নেতিবাচক কিছুতে না জড়ালে অন্য সম্প্রদায়ের মতোই সসম্মানে থাকবে। আমেরিকান মুসলমানদের সব সময় কোরআনের এ শিক্ষাকে মনে রাখতে হবে, ‘ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত কর; দেখবে, তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো’ (৪১:৩৪)।
কোরআনের এ শিক্ষার ভিত্তি প্রকৃতির চিরন্তন মৌলনীতি; যা সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য, তা আমেরিকাই হোক অথবা অন্য কোনো দেশ।
স্পিকিংট্রিডটইন থেকে ভাষান্তর : সালেহ ফুয়াদ
মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান : ভারতের পদ্মভূষণ খেতাব ও রাজীব গান্ধী পুরস্কারপ্রাপ্ত ইসলামি চিন্তাবিদ ও দার্শনিক
আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ