বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


আল্লাহ পাক দুনিয়াতে দুইটা শয়তান পাঠিয়েছেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পলাশ রহমান
 

markin_voteবাংলা সাহিত্যের যাদুকর হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিন  আগামী ১৩ নভেম্বর। প্রয়াত এই লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই লেখার সূচনা করছি তার একটা উক্তি দিয়ে। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ পাক দুনিয়াতে দুইটা শয়তান পাঠিয়েছেন- এক. ইবলিশ শয়তান, দুই. মার্কিন সরকার। তার এই তাৎপর্যপূর্ণ কথাটা আজ খুব বেশি মনে পড়ছে। সকল জল্পনা কল্পনা, মাপ পরিমাণ, ব্যর্থ করে দিয়ে মার্কিনিরা একজন সাক্ষাত শয়তানকে (সমালোচকদের মতে) তাদের দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের অনেকেই আহত হয়েছেন। আহতদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল হিলারি ক্লিনটন নির্বাচিত হবেন, কিন্তু তা হয়নি। পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত না হওয়াতে মনে হচ্ছে তারা মারাত্মক ‘ছ্যাকা’ খেয়েছেন। মার্কিন নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে পর্যন্ত আমাদের দেশের মিডিয়াগুলোও জোয়ারের মতো হিলারি মুখর ছিল। কিন্তু কেনো? আবেগ ছাড়া আমি যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ খুঁজে পাই না। বাংলাদেশের মানুষ কেনো হিলারি মুখর হতে যাবে? তাদের কী লাভ? হিলারি নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের কী উপকার হতো? বর্তমান সরকারকে সরিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় এনে দিতো? নাকি সোনা জহরতে দেশটা মুড়ে দিতো?

বিশ্বাসের জায়গাটা যদি হয় বর্তমান সরকারকে সরিয়ে হিলারি বিএনপিকে ক্ষমতায় এনে দিতো, তবে একটা বিষয় কিন্তু পরিস্কার হয়ে যায়- ভেতরে ভেতরে বাংলাদেশের মানুষ এবং মিডিয়াগুলো বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তারা এই সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।

হিলারি মুখর হওয়ার আরো একটা কারণ হতে পারে- ট্রাম্প মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। আমি মনে করি এখানে একটু ভুল বোঝাবুঝি আছে, মুসলিমবিরোধী বক্তব্য আর আমেরিকায় অবৈধভাবে বসবাসকারী মুসলিমদের বিরুদ্ধে বক্তব্য কিন্তু এক কথা নয়। তাছাড়া ট্রাম্প যদি মুসলিমবিরোধী হয়েও থাকেন তার মনে এই নয় যে হিলারি মুসলিমবান্ধব। সুতরাং ধর্মীয় আবেগের কারণে যারা হিলারি মুখর ছিলেন তারা তাদের হিসাবটা পূণর্বিবেচনা করে দেখতে পারেন।

আমেরিকায় আমাদের দেশের অনেক মানুষ অভিবাসন জীবন যাপন করছেন। অভিবাসন নীতিতে ট্রাম্পের শক্ত মনোভাবও আমাদের দেশের মানুষকে হিলারি মুখর করে তুলতে পারে। কিন্তু একটা বিষয় এখানে ভেবে দেখা দরকার, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিতে শক্ত মনোভাব আপনার আমার কাছে খারাপ লাগলেও মার্কিনিদের কাছে খারাপ লাগার কথা না। কারণ এই মনোভাবের মধ্যে লুকিয়ে আছে তার দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ।

আমি মনে করি এগুলোর কোনোটাই মূল কারণ নয়, আসল কারন হলো হিলারি একজন নারী। আমাদের অতিআবেগী মানুষগুলো, বিশেষ করে মিডিয়াগুলো সব সময়ই নারীদের প্রতি একটু এরশাদ এরশাদ মনোভাব দেখাতে পছন্দ করে। তারা মুখে যা' বলুক না কেনো, যে কোনো নারী ইস্যুতে তারা সত্য মিথ্যা, বাস্তবতা অবাস্তবতা বিবেচনার আগেই গদোগদো হয়ে পড়ে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট নারী যদি সুন্দরী হন তবে তো কথাই নেই। প্রমাণ চান? বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের আলোচিত নারী চিরিত্রগুলো এবং মিডিয়ার আচারণ একটু ঘেঁটে দেখুন।

অনেকে মনে করেন বিশ্ব মিডিয়াগুলোর প্রায় সবই হয়তো হিলারির পক্ষে ছিল। সব জরিপেই তারা হিলারির জয় দেখিয়েছে। সত্য ঘটনা তা নয়, আমাদের দেশের মিডিয়াগুলো যেহেতু হিলারি মুখর ছিল তারা খুটে খুটে হিলারির পক্ষের খবরগুলো তুলে ধরেছে। তারা হয়তো বিবেচনায় আনেনি, বিশ্ব মিডিয়ায় যারা জরিপ করে হিলারিকে জিতিয়ে রেখেছিল তারা সবাই হিলারির পক্ষের নাও হতে পারে। হিলারিকে অতিতুষ্ট করে রেখে মূলত ট্রাম্পকে জেতানোর কৌশলও যে হতে পারে তা হয়তো তারা ভেবে দেখেনি।

হিলারিকে কেনো ভোট দেবে মার্কিনিরা? তার ভূবনকাড়া হাসি দেখে? এতটা আবেগী তারা নয়। আজ যে উন্নত আমেরিকা আমরা দেখি, তাদের যে মোড়লি দেখি, এই পর্যায়ে আসতে তাদের বহু কাঠখড় পুড়াতে হয়েছে। সুতরাং নিজেদের ভালো মন্দো, অধিকার অনাধিকার তারা আবেগ দিয়ে নয়, বাস্তবতা দিয়ে বিবেচনা করতে জানে।

হিলারি বিল ক্লিনটনের স্ত্রী। তাকে নির্বাচিত করা মানে ক্লিনটনকে আবার ক্ষমতায় বসানো। যা মার্কিনিদের সরকার নীতির সাথে যায় না। যাবত কালে মাত্র একজন ব্যক্তি তিন বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট (১৮৮২-১৯৪৫) আর কেউ হতে পারেনি। মার্কিনিরা চায়নি আমেরিকায় রাজতন্ত্র বা পরিবারতন্ত্র কায়েম হোক। এর পক্ষে তারা আইন করে নেয় নিজেদের গরজেই।

[caption id="attachment_17064" align="alignright" width="468"]desh1 প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ফেসবুক পেইজে আসুন[/caption]

হিলারি পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন, ওই পেশায় তিনি উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতা দেখাতে পারেন নি। হিলারি বারাক ওবামার পররাষ্ট্র (কর্ম) সচিব ছিলেন, অপারদর্শিতার কারণে তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, সেখানেও তার উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতা নেই, বরং আইএসের সাথে সংশ্লিষ্টতাসহ বেশ কিছু ভয়ঙ্কর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। যেগুলোর কোনো বিশ্বাসযোগ্য উত্তর তিনি তুলে ধরতে পারেন নি ভোটারদের সামনে।

পক্ষান্তরে ট্রাম্প একজন সফল মানুষ। নিউইয়ার্কে তার জন্ম। একজন সফল ব্যবসায়ী। অগাধ অর্থ সম্পদের মালিক। যা আমেরিকানদের কাছে কোনো অপরাধ নয়, বরং যোগ্যতার মাপকাঠি। আমেরিকানরা মনে করেন যে নিজের ভাগ্য বদল করতে পারে না সে কি করে দেশের ভাগ্য বদল করবে? আমেরিকা জুড়ে ট্রাম্পের পরিচিতি হলোসেলফ-মেইড ম্যান যা মার্কিনিদের কাছে খুবই শ্রদ্ধার।

ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় বার বার আমেরিকান জাতীয়তাবাদের কথা বলেছেন, হিলারি বলেন নি। ট্রাম্প বেশ কিছু নতুন আইডিয়া তুলে ধরতে পেরেছেন। যা ইউরোপ আমেরিকানদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তরুণ যুবক ভোটাররা সব সময় নতুন কিছু খোঁজে। যেখানে নতুন কিছু দেখে সেখানেই তারা ভিড় করে। হিলারি তেমন কিছু দেখাতে পারেন নি। তিনি ঘুরে ফিরে তার সাবেক প্রেসিডেন্ট স্বামী এবং বারাক ওবামার আইডিয়াগুলো নাড়াচাড়া করেছেন।

ট্রাম্পকে যতোই উগ্রভাবে উপস্থাপন করা হোক না কেনো, বাস্তবতা হয়তো তা নয়। কারন তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী, কোনো কিছু করার আগে লাভ ক্ষতির হিসাবটা করবেন, বুঝবেন সবার আগে। তাছাড়া লেখাপড়া করেছেন সেনা স্কুলে। দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্কেও তার ধারণা কম নয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার লেখাপড়ার ঝুলি অনেক ভারি। সুতরাং নির্বাচনী বক্তব্য দিয়ে সব কিছুর ওজন করা যায় না, ঠিক হয় না।

তিনি ইউরোপীয়দের আশ্বস্ত করতে পেরেছিলেন, ইউরোপীয় বিষয়গুলোয় তার সরকার নাক গলাবে না। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে রাশিয়ার পুতিনের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। পুতিনের সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হন। যারা বলছেন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়া মানে নতুন করে বিশ্ব যুদ্ধের রণডঙ্কা বেজে ওঠা, তারা কোন যুক্তিতে বলছেন আমি জানি না। তাদের যুক্তি বা তথ্য উপাত্ত যদি হয় ট্রাম্পের নির্বাচনী বক্তব্য তাহলে বলার কিছু নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিসাব নিকাশ বলে- ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়াতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা হ্রাস পেয়েছে বা কিছুটা হলেও দুরে সরে গেছে। রাশিয়ার পুতিনসহ ইউরোপের সাথে তার সখ্যতা এমনই বার্তা দেয়।

তবে হ্যাঁ, আরববিশ্বসহ যে সব দেশে যুদ্ধ হচ্ছে, হয়েছে, যাদের শাসন, দমন করা দরকার বলে আমেরিকা মনে করে সে সব বিষয়ে তাদের নীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন খুব তাড়াতাড়ি আশা করা যায় না। কারন আমেরিকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় যে' আসুক না কেনো তাদের পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়। এটাই তাদের সরকার নীতি, দেশপ্রেম। সুতরাং হিলারি বা ট্রাম্পে আমাদের বিশেষ কোনো লাভ ক্ষতি আছে বলে মনে হয় না। আমাদের উচিৎ আমেরিকার ক্ষমতায় যে' আসুক তার সাথে সুসম্পর্ক রেখে নিজেদের কাজ চালিয়ে যাওয়া।

যারা হিলারির হার মেনে নিতে পারছেন না তাদের আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই যাদুকর সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের কথা- আল্লাহ পাক দুনিয়াতে দুইটা শয়তান পাঠিয়েছেন- এক. ইবলিশ শয়তান, দুই. মার্কিন সরকার।

লেখক: প্রডিউসার, রেডিও বেইস ইতালি

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ