শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

উপমহাদেশের প্রথম মুসলিমা চিকিৎসক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

fast_muslimআব্দুল্লাহ বিন রফিক:  উপমহাদেশের প্রথম বাঙালি মুসলিম নারী চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজীর নবম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে সোমবার। এ উপলক্ষে জোহরা বেগম কাজী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ঢাকায় ও গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে দোয়া মাহফিল ও তার কবর জিয়ারত করা হয়।

ডা. জোহরা বেগম কাজীর (১৯১২-২০০৭) জন্ম ১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের মধ্য প্রদেশের রঞ্জনগাঁওয়ের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তার পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার গোপালপুর গ্রামে প্রখ্যাত কাজী পরিবারে। পিতা ডা. কাজী আবদুস সাত্তার পেশায় একজন চিকিৎসক এবং উপমহাদেশীয় রাজনীতিক হিসেবে বেশ নাম-ডাক ছিলো তার। কাজী আবদুস সাত্তারের জন্ম ১৮৭৫ সালে। ১৮৯৫ সালে মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুল থেকে এলএমএফ এবং ১৯০৯ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি নিজে একজন কোরআনের হাফেজ ছিলেন এবং চিকিৎসা দপ্তরের চাকরি থেকে অবসরগ্রহণের পর চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মসজিদে ইমামতিও করেছেন। জোহরা কাজীর মাতা মোছা. আনজুমান উন নিসা  পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার বিলবিলাস গ্রামে ১৮৮৬ সালে  জন্মগ্রহণ করেন। শেরেবাংলা একে ফজলুল হক ছিলেন তার খালাতো ভাই। আনজুমান উন নিসা বিশিষ্ট সমাজসেবিকা ও রাজনীতি-ঘনিষ্ঠ একজন মানুষ ছিলেন। তিনি রায়পুর পৌরসভার মহিলা কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন।

একজন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে জোহরা বেগম কাজী বাল্যকাল থেকেই প্রথম স্থান অধিকার করে সব পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি ১৯২৯ সালে আলীগড় মুসলিম মহিলা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বাঙালি মুসলমান আলীগোড়িয়ান হিসেবে মেট্রিক পাস করেন। তিনি ১৯৩১ সালে আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দিল্লির হার্ডিঞ্জ মহিলা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৩৫ সালে প্রথম বিভাগে শীর্ষস্থান অধিকার করে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। এ বিরল মেধা কৃতিত্বের জন্য তিনি ব্রিটিশ-ভারতের ভাইস রয় টমাস ফ্রিম্যান (১৮৬৬-১৯৪১) কর্তৃক প্রদত্ত ভাইস রয় পদকে ভূষিত হন।

তিনি দ্বিতীয় বাঙালি মুসলমান নারী, যিনি ১৯৫৫ সালে লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব অবসটেরিসিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্ট থেকে ডিআরসিওজি ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পর তিনি লন্ডন থেকে এফআরসিওজি এবং এমআরসিওজি স্বীকৃতি লাভ করেন। প্রসঙ্গত, এর আগে ১৯৫১ সালে তারই ছোট বোন শিরিন কাজী লন্ডন থেকে প্রথম বাঙালি মুসলমান নারী হিসেবে ডিআরসিওজি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভজেনের আগে জোহরা কাজী ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় ১৩ বছর চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেশ ভাগের পর তিনি  চলে আসেন পূর্ব বাংলায় ।

ডা. জোহরা বেগম কাজীর বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্রময় জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ের শুরু ১৯৪৮ সালে যখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। তৎকালীন মেডিকেল কলেজে পৃথক ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ বিভাগ না থাকায়  তখনকার গর্ভবতী নারীরা হাসপাতালে এসে পুরুষ ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা নিতে অনাগ্রহী ছিলেন। ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুদের যথাযথ চিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটত ফলে মৃত্যুর ঘটনাও ছিল তখন তুলনামূলক বেশি। ডা. জোহরা কাজীর ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ পরিপূর্ণতাপায়।

জোহরা কাজী ১৯৫৫ সালে সরকারি বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ইংল্যান্ডে যান এবং সেখান থেকে অন্যান্য প্রশিক্ষণসহ DRCOG, FCPS, FRCOG ডিগ্রি এবং MRCOG সম্মাননা নিয়ে দেশে ফিরে তার প্রাক্তন কর্মস্থলে প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। সরকারি চাকরি-বাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি হলি ফ্যামিলি রেডক্রস হাসপাতাল এবং কমবাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে (অনারারি কর্নেল পদে) সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে সাম্মানিক অধ্যাপকও ছিলেন বহুদিন।

৩২ বছর বয়সে ১৯৪৪ সালে জোহরা কাজী নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলার হাতিরদিয়ার জমিদার পুত্র খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ রাজুউদ্দিন ভূঁইয়ার (এমপি) সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৬৩ সালে তিনি বিধবা হন। তার নিজের কোনো সন্তান না থাকলেও  ছাত্র-ছাত্রী ও বিভিন্ন শিশুসদন-এতিমখানার শিশুদের তিনি নিজ সন্তানের মতো করে গড়ে তুলেছিলেন। স্বামীর স্মৃতি রক্ষার্থে নরসিংদীতে প্রতিষ্ঠা করেন হাতিরদিয়া হাইস্কুল ও কলেজ।

পৈতৃক নিবাসসূত্রে জোহরা বেগমের জন্ম এবং কর্মজীবনের বেশ কয়েক বছর বাংলার বাইরে অতিবাহিত হলেও তিনি বাংলা পড়তে পারতেন এবং লিখতেও পারতেন। ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু ও আরবির পাশাপাশি সাবলীলভাবে বাংলা ভাষায়ও কথা বলতে পারতেন। তিনি নিজে সাইক্লিস্ট, নামি ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে এক সক্রিয় সক্রিয় কর্মী ছিলেন। দীর্ঘকাল মানবতার সেবায় নিঃস্বার্থ কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ ডা. জোহরা কাজীকে তমঘা-ই-পাকিস্তান (১৯৬৪), বেগম রোকেয়া পদক (২০০৪), একুশে পদক (মরণোত্তর, ২০০৮) এবং বিএমএ স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। জাতীয় জাদুঘর, গাইনোকোলজিস্ট সোসাইটি, নাগরিক সংবর্ধনা পরিষদ, রোটারাক্ট ক্লাব অব বুড়িগঙ্গা, আলীগড় ওল্ড বয়েজ অ্যাসোসিয়েশন এবং মাদারীপুর জেলা সমিতি তাকে বিশেষ সংবর্ধনা প্রদান করে। ২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর জোহরা কাজীর ইন্তিকাল হয়। বনানী গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ