শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


বাড্ডার বইমেলায় উপচেপড়া ভিড়, প্রকাশকদের মুখে হাসি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ 
বিশেষ প্রতিনিধ

maktaba_ajhar

মাকতাবাতুল আযহার, মাকতাবাতুল ইসলাম ও মাকতাবাতুল আতিকের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর বাড্ডায় চলছে পক্ষকালব্যাপী কিতাবমেলা। গত ১৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ২৭ তারিখ পর্যন্ত। মেলা চলাকালীন সময়ে প্রতি বৃহঃস্পতিবার (১৩, ২০ ও ২৭) তারিখে নতুন ১০ টি করে বইয়ের 'মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা' হবে। মোড়ক উন্মোচনে থাকবেন দেশের খ্যাতিমান লেখক, সাহিত্যিক, কলামিষ্ট, সম্পাদক, সাংবাদিক ও প্রকাশকগণ।

লেখকের অটোগ্রাফসহ বিশেষ ছাড়ে বই সংগ্রহের সুযোগও থাকবে এসব অনুষ্ঠানের দিনসমূহে। মেলায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন আইটেমের কিতাব থাকছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলক অনেক ছাড়ে এসব কিতাব গ্রাহকের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। মেলায় ইসলামি কিতাব ও বইয়ের সংখ্যাই বেশি। আগত দর্শনার্থীদের মাঝে সাধারণ মানুষের ভিড়ও পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে মাদরাসা শিক্ষার্থী ও আলেম-উলামার উপস্থিতি ব্যাপক থাকলে সাধারণ মানুষদের মেলায় দেখা যায়নি।

শনিবার বিকেলে কিতাবমেলা ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, প্রকাশিত নতুন বইয়ের প্রতি পাঠকের চাহিদা বেশি। নতুন বই কেনার জন্য এসেছেন অনেকেই। বারিধারা মাদরাসা থেকে মেলায় এসেছেন আব্দুল ওয়াদুদ। তিনি জানালেন, আমি প্রায় পুরাতন সব বই সংগ্রহ করেছি। নতুন কিছু বই এসেছে। এগুলো সংগ্রহ করতে এসেছি।

একই কথা জানালেন মালিবাগ জামিয়ার তাকমিল জামাতের ছাত্র মুহসিনুদ্দীন। কুমিল্লা কাসিমুল উলুম মাদরাসা থেকে এসেছে তামীম আহমদ। তার বক্তব্য ছিলো ভিন্ন রকম। আওয়ার ইসলামের প্রতিবেদককে পেয়ে তিনি বলেন, দূরের গ্রাহকদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যেমন একটু বসতে দেয়া বা তাদের সাথে আলাদাভাবে কথা বলা ইত্যাদি। নাস্তার ব্যবস্থা হয়তো কর্তৃপক্ষের করা দরকার। না হয় কিছু হোটেল বসানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

মেলায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে প্রায় ৪০০০ আরবি কিতাব। উর্দু কিতাবের সংখ্যা প্রায় ১০০০। এছাড়া বাংলা বইয়ের সংখ্যাও ১০০০ বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে ৬০০০ আইটেমের ৫৫ হাজার খণ্ডের কিতাবাদির বিশাল সমারোহ। আয়োজক প্রকাশকগণ আলাদাভাবেও তাদের প্রকাশিত কিতাবের উপর বিশেষ ছাড় দিয়েছেন।

maktaba_ajhar2

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মাকতাবাতুল আযহারের বিশেষ অফার হচ্ছে- আট খণ্ডে প্রকাশিত 'অর্থনীতি সিরিজ' এর মুদ্রিত মূল্য ২০৪০ টাকা। মেলা উপলক্ষে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৮০০ টাকায়। ৩২ খণ্ডে প্রকাশিত খুতুবাতে জুলফিকার এর মুদ্রিত মূল্য ৭২১০ টাকা। মেলায় পাচ্ছেন মাত্র ২৭০০ টাকায়। যাইনুল আবেদীন এর ১১ টি বইয়ের মুদ্রিত মূল্য ১৮০০ টাকা, মেলায় ৭২০ টাকা। শরীফ মুহাম্মদের ৮ টি বইয়ের মুদ্রিত মূল্য ৮৪০ টাকা। মেলায় পাচ্ছেন মাত্র ৩৫০ টাকায়। ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভীর ৫ টি বইয়ের মুদ্রিত মূল্য ১০৪০ টাকা, মেলায় পাচ্ছেন মাত্র ৪২০ টাকায়।

মাকতাবাতুল ইসলামের বিশেষ অফার ৩ খণ্ডে প্রকাশিত তাকি উসমানীর সফরনামা "দেশ-দেশান্তরে" মুদ্রিত মূল্য ৯৯০ টাক, মেলায় পাচ্ছেন মাত্র ৩৯০ টাকায়। ১১ খণ্ডে প্রকাশিত নবী রাসূলের নির্ভরযোগ্য জীবনীগ্রন্থ 'কাসাসুল কুরআন' এর মুদ্রিত মূল্য ২০৭০ টাকা, মেলায় ৮৮০ টাকায়। গল্প সিরিজের ৯ টি বইয়ের মুদ্রিত মূল্য ১৪৫০ টাকা, মেলায় মাত্র ৫৮০ টাকায়।

মাকতাবাতুল আতিকের বিশেষ অফার ৪৫০০ টাকা পূর্বমূল্যের "ফাতহুল মুলহিম মা'আ তাকমীলা" মেলায় মাত্র ৩০০০ টাকায়। ৩৫০০ টাকা পূর্বমূল্যের "মিরকাত শরহে মিশকাত" মেলায় পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২১০০ টাকায়। ৪৫০০ টাকা পূর্বমূল্যের "ফাতহুল কাদীর" মেলায় পাচ্ছেন মাত্র ৩২০০ টাকায়। ১৫০০ টাকা পূর্বমূল্যের "ফাতওয়ায়ে উসমানী" মেলায় পাচ্ছেন ১১০০ টাকায়। এছাড়া সকল বাংলা বইয়ে রয়েছে ৬৫% এর বিশেষ ছাড়।

[caption id="attachment_15147" align="aligncenter" width="500"]obadullah2 মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আযহারী [/caption]

এদিকে কিতাবমেলার শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখে আয়োজকগণ খুশি। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন তারা। মাকতাবাতুল আযহার এর সত্ত্বাধিকারী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আযহারী জানান, গত বছর সালসাবিল প্রকাশনী থেকে শরীফ মুহাম্মদ ভাইয়ের ছয়টি বই প্রকাশিত হয়। তখন একটি অনুষ্ঠান হয়েছিলো। এবছর আমরা সেটা ফলো করে আয়োজন করি বইমেলার। আলহামদুলিল্লাহ, বেশ ভালো সাড়া পড়েছে। প্রতিদিন দর্শক ও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। তিনি জানান, আমি যতটা আশা করেছিলাম তার চেয়েও বেশি বিক্রি হচ্ছে।

মাকতাবাতুল ইসলাম প্রকাশনীর মাওলানা আহমদ গালিব পক্ষকালব্যাপী বইমেলা সম্পর্কে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আমরা অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। বিক্রিও হচ্ছে বেশ ভালো। দৈনিক প্রায় একলাখ থেকে দেড়লাখ টাকার মতো বিক্রি হচ্ছে। দর্শনার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে কারো পছন্দ হলে বই কিনে নিচ্ছে। আমরা পোস্টারে যে সকল বইয়ে ছাড়ের কথা বলেছিলাম তা ছাড়া অন্যান্য প্রকাশনীর কিতাবেও আমরা সর্বোচ্চ ছাড় দেয়ার ব্যবস্থা করছি।

galib

মাকতাবাতুল আতিকের সত্তাধিকারী মাওলানা কেফায়াতুল্লাহ বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমরা আমাদের বই বিক্রির যে নির্ধারিত সময় রয়েছে তার থেকে বেশি সাড়া পাচ্ছি। ঢাকার আশপাশ ছাড়াও অনেক দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থী আসছেন। এর মাঝে নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লা বি.বাড়ীয়ার অনেক বইপ্রেমী ছুটে আসছেন। আমাদের আজকের বিক্রি হয়েছে প্রায় লাখের মতো। এভাবে প্রতিদিনই এরকম বিক্রি হচ্ছে।

[caption id="attachment_15150" align="aligncenter" width="500"]kefayatullah মাওলানা কেফায়াতুল্লাহ[/caption]

আগামী ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠানের শেষ দিন বেশ কিছু বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হবে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে মাকতাবাতুল আতিক প্রকাশিত ‘আমরা হানাফী কেনো?’ মুফতি আবু সাঈদ লিখিত বইটির সম্পাদনা করেছেন মুফতি জাবের কাসেমী। মাকতাবাতুল ইসলাম প্রকাশিত  'কেয়ামাত' নামক একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন হবে। বইটি অনুবাদ করেছেন রায়হান খাইরুল্লাহ।

অনুষ্ঠানের ব্যাপক সাড়ার পরও কিছু বিষয় নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে বলেছেন, এত অল্প পরিসরে বিশাল আয়োজন মানানসই নয়। তবে অনেকের আশাবাদ মেলার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়লে পরিধিও বাড়বে।

আরআর 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ