শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


৮৫ বছর পর আজান হলো তুরস্কের বিখ্যাত আয়া সুফিয়া মসজিদে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফারুক ফেরদৌস

aya-sufiaতুরস্কের সরকার ৮৫ বছর পর বিখ্যাত জামে মসজিদ আয়া সুফিয়ায় আজান ও নামাযের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলো।

৯১৬ বছর আয়া সুফিয়া ক্যাথলিক চার্চ ছিলো। মুসলমানরা বিজয় করার পর ৪১৮ বছর আয়া সুফিয়া মসজিদ ছিলো। সুলতান ফাতেহ কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর প্রথম একে মসজিদ ঘোষণা করেন এবং এর উপর একটি উঁচু মিনার নির্মাণ করেন। সুলতান দ্বিতীয় বায়েজিদের শাসনকালে এর উপর আরেকটি সুউচ্চ মিনার নির্মাণ করেন। এখন আয়া সুফিয়ায় চারটি মিনার।

চারশো’ একাশি বছর মুসলমানরা এখানে নামায পড়েছে, আজান দিয়েছে। কিন্তু ১৯৩৪ সনে কামাল আতাতুর্ক আয়া সুফিয়ায় আজান ও নামায নিষিদ্ধ করে এটাকে জাদুঘরে রূপান্তর করেন। ১৯৯১ সনে আয়া সুফিয়ার পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় এবং মসজিদটির দরজা আয়া সুফিয়ার দিকে খুলে দেয়া হয়। মানুষ ওখানে নামায পড়তে থাকে।

news-1477057585-4573অন্যদিকে রজব তাইয়্যেব এরদোগান ক্ষমতায় আসার পর তিনিই পুরনো মসজিদ আয়া সুফিয়াকে পুনরায় মসজিদে রূপান্তরের দাবিকে এগিয়ে নিয়ে যান। ২০১৪ সনে আনাতোলিয়ান ইয়ুথ এসোসিয়েশন আয়া সুফিয়াকে মসজিদে পুন:রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। এর শ্লোগান ছিলো ‘জায়নামাজ নিয়ে আয়া সুফিয়ায় চলো।’ এই আন্দোলনের সময় আয়া সুফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের দাবিতে ১৫ মিলিয়ন মানুষ সাক্ষর করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন যে আয়া সুফিয়ার ব্যাপারে সরকার চিন্তাভাবনা করবে।

এরদোগানের এবারের সরকার নিজের আয়া সুফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারলো । আয়া সুফিয়ায় ইমাম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য আয়া সুফিয়ার চার মিনারে আজান ধ্বনিত হচ্ছে। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের পর মুসলিম বিশ্ব যেমন আনন্দিত, পশ্চিমা বিশ্বেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

তুরস্কের শহর ইস্তাম্বুলের সুলতান আহমদ জামে মসজিদের কাছে ঐতিহাসিক ইমারত আয়া সুফিয়া অবস্থিত। এই ইমারতটি বিখ্যাত খৃষ্টান রাজা কনস্টান্টিন নির্মাণ করার পর বাইজান্টাইন খৃষ্টান বাদশা প্রথম জাস্টনিন ৫৩২ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয়বার নির্মাণ করেন। পাঁচ বছর লাগাতার এর নির্মাণ কাজ চলে। নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার পর ৫৩৭ খৃষ্টাব্দে যথাযথ একে চার্চের মর্যাদা দিয়ে জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। আয়া সুফিয়া পৃথিবীতে স্থাপত্যশিল্পের এক বিস্ময়। এখানে রোমত ও তুর্কী স্থাপত্যশিল্পীরা নিজ নিজ সময়ে কীর্তির সাক্ষর রেখে পৃথিবীকে চমকিত করেছেন। আজও প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক স্থাপত্যশিল্পের এই বিস্ময় দেখতে আসে।

news-1477057585-7530

আয়া সুফিয়ার উপর বেশ কয়েকটি কঠিন সময় এসেছে। ক্রুসেড যুদ্ধের সময় খৃষ্টানদেরই বিভিন্ন ফেরকার যোদ্ধারা এর যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। সর্বশেষ ১৩৪৬ সনে একে পুনর্নির্মাণ করা হয়। এরপর উসমানী খিলাফতকালে বারবার এর সৌন্দর্যবর্ধন হতে থাকে।

সূত্র: ডেইলি পাকিস্তান

এফএফ


সম্পর্কিত খবর