শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


আমেরিকার আকাশে যৌনতার দুর্গন্ধ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

trump6আশরাফ আলী

আমেরিকায় প্রতিদিনই একটি করে বোমা ফুটছে। দিন যত যাচ্ছে বোমার ওজন ততো ভারি হচ্ছে। আকার ততো বৃহৎ হচ্ছে। আঘাত তত তীব্র হচ্ছে। এ বোমা যৌনতার। ঘৃণার। লজ্জার। সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা দুজনের একজন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বোমা ফুটছে তাকে ঘিরেই। তার সাথে চলন্ত সিঁড়িতে উঠার সময় দশ বছর বয়সী এক মেয়ে লাঞ্ছিত হয়। বিমানে তার পাশের সিটে বসা নারী অভিযোগ করেন নানা অঙ্গে হাত বুলানোর। সবে পরিচয় হওয়া এক নারী অভিযোগ করেন তার নিতম্ব চেপে ধরার। তার দৃষ্টিতে ত্রিশ বছরের নারী উপভোগের। আর পয়ত্রিশ বছরের নারী পরিত্যাগের।

তার আছে চৌদ্দ বছর বয়সে কুমারত্ব হরানোর গৌরব (!)। একসাথে তিন নারীকে উপভোগের সাফল্যও (!) আছে ঝুলিতে। বিবাহিত এক নারীকে ধর্ষণে ব্যর্থ হওয়ার কাহিনিও বলেছেন অকপটে। (১০.১০.১৬ ইত্তেফাক)

আরো বিস্ময়কর ও পিলে চমকে যাওয়ার মতো তথ্য হলো- তিনি নিজ মেয়ের দেহ ও বিভিন্ন অঙ্গ নিয়ে অশ্লীল কথা বলতে আনন্দ পান।সাংবাদিকদেরও এমন আলোচনার আহবান জানান। মেয়ের পরিচয় দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান- ‘আমার মেয়ে ইভাঙ্কা অর্পূব যৌন আবেদনময়ী নারী’। (১০.১০.১৬ যুগান্তর)

উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত এমন নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী জাহেলি যুগের পর পৃখিবী বুঝি এই প্রথম দেখলো। তাও আবার কথিত সভ্যতার দেশে।

এ ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার অন্যতম আয়োজক। কী আঁতকে উঠেছেন পাঠক? ট্রাম্প যখন আয়োজক তখন প্রতিযোগিতার নামে কী হয় সহজেই অনুমান করতে পারছেন। না পাঠক আপনাকে কষ্ট করে অনুমান করতে হবে না। ট্রাম্পই অকপটে দম্ভ করে বলেছেন- ‘তিনি স্বাভাবিকভাবেই সুন্দরী নারীদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের দেখলেই তিনি চুমু দেওয়া শুরু করেন। অনেকটা চুম্বকের মতো।’ আরো বলেছেন- ‘তারকা নারীদের নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যায়’। (১০.১০.১৬ ইত্তেফাক)

তাহলে কি এই সুন্দরী তারকারাও ট্রাম্প দ্বারা...। আশ্চর্যের বিষয় হলো তারপরও সেভাবে কমছে না তার নারী ভোটার। কারণ হিসাবে এক নারী জানালেন- আমরা তো আর্দশ স্বামী নির্বাচনে নামিনি।

এ তো গেলো একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর কথা । এবার বলি একজন প্রেসিডেন্টের কথা। যিনি প্রায় দেড় যুগ আগে প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি প্রার্থী না হয়েও আলোচিত। কারণ সেই একটাই- যৌনতার দুর্গন্ধ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রেরে ইতিহাসে সবচেয়ে সমালোচিত নারী কেলেঙ্কারির নায়ক। কারণ প্রেসিডেন্ট বলে কথা। প্রায় দেড় যুগ আগে এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন কিন্তু তা এখনো আমেরিকার আকাশে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ায়। ১৯৯৫-এ প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন হোয়াইট হাউসের এক কর্মচারী মনিকা লিউনিসের প্রেমে পড়েন। ১৯৯৮ সালে যৌন সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বিল ক্লিনটন। হিলারি ক্লিনটনের স্বামী। এই যে শুরু এভাবে যোগ হয়েছে আরো অনেক নারী। দিন দিন এ তালিকা আরো র্দীঘ হয়। সেদিন ট্রাম্প তার দ্বিতীয় বিতর্কে হাজির করেন এমন চার নারী। তারা সাংবাদিক সম্মেলন করে দম্ভ ভরে ঘোষণা দিয়েছেন তাদের নির্যাতনের কথা। যৌন হয়রানীর কথা। কত নির্লজ্জ হলে একজন নারী তার ধর্ষণের কথা, লাঞ্ছনার কথা সংবাদ সম্মেলন করে জানাতে পারেন।

আমাদের দেশের মেয়েরা তো কেউ এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে লজ্জায় লাল হয়ে যান। কান্নায় ভেঙে পড়েন। গৃহকোণে বন্দী হয়ে থাকেন। সাংবাদিকরাও তার প্রকৃত নাম দেন না । তার ছবি ছাপান না। যথাসম্ভব তাকে আড়ালে রেখে শুধু সংবাদটুকু ছেপে অপরাধের জানান দেন।

তো ডোনাল্ড চেষ্টা করেছেন এটা প্রমাণ করার জন্য খাদক কেবল সে নয়, আরো আছে। পাগল কেবল সে নয়, আরো পাগল আছে। শুধু তাই নয় ট্রাম্প ক্লিনটনের ছবি দিয়ে দশ হাজার গেঞ্জি তৈরী করেছেন। ছবির পাশে লেখা ধর্ষণ। (১০.১০.১৬ প্রথম আলো)

এ হলো আমেরিকা। এ হলো কথিত সভ্যতার সূতিকাগার। নারী স্বাধীনতার দেশে এ হলো নারী নির্যাতনের চিত্র। তারপরও তারাই সভ্যতার শিক্ষক। তারাই নারী স্বাধীনতার নায়ক। তারাই নারীর মর্যাদা এবং অধিকারের রক্ষক। হে বোন, তুমি কি এমন স্বাধীনতাই চাও?

ashraf.ali05595@gmail.com

আরআর

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ