শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ ।। ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫


পবিত্র হারামাইন শরিফাইন ও শিয়া সম্প্রদায়ের চক্রান্ত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

haramain4-copyমুহাম্মাদ লুতফেরাব্বী

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হজ ও পবিত্র ভূমি কাবা সম্পর্কে রাফেজি শিয়াদের আকিদা :

১. ‘ইমাম হোসাইন রা. এর কবর জিয়ারত করা বিশটি হজের সমতুল্য; বরং বিশটি ওমরা ও হজ থেকে উত্তম।’

২. একবার জনৈক রাফেজি তার ইমামকে বলল, আমি উনিশটি হজ ও উনিশটি ওমরা করেছি। তার এ কথা শুনে শ্লেষমিশ্রিত কণ্ঠে ইমাম বললেন, তুমি আরো একটা হজ ও ওমরা করো; তাহলে একবার ইমাম হোসাইন রা. এর কবর জিয়ারত করার সওয়াব পাবে।

৩. ইমাম জাফর বলেন, আল্লাহ তায়ালা কাবা শরিফের মাটির কাছে এই মর্মে ওহি পাঠালেন, কারবালার তুলনায় তোমার সম্মান সমুদ্রের পানিতে ডুবানো সুঁইয়ের আগায় লেগে থাকা পানির ন্যায়। যদি কারবালা না থাকত তাহলে তোমাকে সৃষ্টি করতাম না, তাই তুমি কারবালার ক্ষুদ্র অবহেলিত লেজ হয়ে থাকো। অন্যথায় তোমার স্থান হবে জাহান্নাম। (নাউযুবিল্লাহ)

উল্লেখিত আক্বিদার কারণে শিয়াদের সব সময়ের প্রচেষ্টা ছিল হজের মওসুমে বিভিন্ন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে হাজিদের মনে ভীতি তৈরি করা। যাতে করে হারামাইনের প্রতি মানুষের অনীহা বৃদ্ধি পায়।

অভিশপ্ত কারামেতা সম্প্রদায়

অতীত ও বর্তমান হিজরি তৃতীয় শতকের শেষদিকে পুরা মুসলিম উম্মাহর মাঝে ধর্মীয়-সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির এক সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে শিয়াদের মাঝে তিনটি গ্রুপ করা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে জঘন্য ছিল বাহরাইনের কারামেতা সম্প্রদায়। শিয়া পরিচয়ের আড়ালে এরা ছিল চরম ইসলামবিদ্বেষী মুরতাদ জনগোষ্ঠী। হাফেজ যাহাবি ও ইবনে কাসির রহ. তাদের জিন্দিক হিসাবে অবিহিত করেছেন। তাদের তৎকালীন নেতা আবু সাঈদ জানাবির পুত্র আবু তাহের কারমাতি দলের দায়িত্ব নেয়ার পর তার প্রধান টার্গেট বানায় হজ ও হাজিদের কাফেলাগুলোকে। এক্ষেত্রে তার প্রধান লক্ষ্য ছিল দুটি- এক, হজের বিধানকে রহিত করা। (কারণ তারা হজকে মূর্তিপুজা ও জাহেলি যুগের নিদর্শন বলে মনে করত) দুই, হাজিদের রসদ-সম্পদ লুণ্ঠন করা।

ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞ

১. ৩১২ হিজরি মুহাররম মাসে আবু তাহের কারমাতি তার দলবল নিয়ে হজফেরত হাজিদের পথরোধ করে তাদের উপর হামলা চালায়। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে এবং নারী-শিশুদের বন্দি করে। এছাড়াও হাজিদের মাল-সম্পদ লুণ্ঠন করে যার মূল্য প্রায় দশ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা সমপরিমাণ বলে ধারণা করা হয়। নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও লুটতরাজের পর অবশিষ্ট লোকদের খ্যাদ্য-পানীয় বিহীন মরুভূমিতে ফেলে রেখে যায়।

২. ৩১৭ হিজরি ৮ জিলহজ হাজিরা যখন মিনায় গমনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সেই মুহূর্তে আবু তাহের কারমাতি ৭০০ জনের বাহিনী নিয়ে হারাম শরিফে আক্রমণ চালায়। মদ্যপ অবস্থায় ঘোড়ার পিঠে চড়ে ক্বাবা প্রাঙ্গনে আসে এবং বাইতুল্লাহর দরজায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ঘোষণা দেয়- ‘কাফের ও মূর্তিপূজারীদের হত্যা করো, কাবার স্তম্ভগূলো ভেঙ্গে দাও, হাজরে আসওয়াদকে তুলে ফেল।’ তার হায়েনা বাহিনী ছয়দিন ধরে মক্কার অলিতে গলিতে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়।

বর্ণনামতে, এই নিষ্ঠুর গণহত্যায় প্রাণ দেন প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ। তারা জমজম কূপ সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে ফেলে ও তিন হাজার লাশের স্তুপ ফেলে কূপ বন্ধ করে দেয়। এই হত্যাযজ্ঞ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি; বরং কাবা শরিফের গেলাফ ছিঁড়ে ফেলে ও হাজরে আসওয়াদ খুলে তাদের আস্তানা বাহরাইনের 'হাজর' নামক শহরে নিয়ে যায়। (প্রায় বাইশ বছর জবরদখল করে রাখার পর আবু তাহের যুদ্ধবিরতির শর্তে হাজরে আসওয়াদ ফিরিয়ে দেয়)। ইসলামের ইতিহাসে প্রথমবারের মত হজের কার্যক্রম বন্ধ থাকে সে বছর। আরাফাহর ময়দানে কোন হাজি উকুফ করতে পারেননি। ইহরামের শুভ্র পোশাকে আসা আল্লাহর মেহমানদের লাশ গোশল-জানাযা ছাড়াই স্তুপাকারে মাটিতে পুতে দেয় রাফেজি হায়েনারা।

৩১৭ হিজরি ৮ জিলহজ হাজিরা যখন মিনায় গমনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সেই মুহূর্তে আবু তাহের কারমাতি ৭০০ জনের বাহিনী নিয়ে হারাম শরিফে আক্রমণ চালায়। মদ্যপ অবস্থায় ঘোড়ার পিঠে চড়ে ক্বাবা প্রাঙ্গনে আসে এবং বাইতুল্লাহর দরজায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ঘোষণা দেয়- ‘কাফের ও মূর্তিপূজারীদের হত্যা করো, কাবার স্তম্ভগূলো ভেঙ্গে দাও, হাজরে আসওয়াদকে তুলে ফেল।’ তার হায়েনা বাহিনী ছয়দিন ধরে মক্কার অলিতে গলিতে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়।

৩. ৪১৪ হিজরি সনে একজন মিশরি শিয়া মতালম্বী তরবারি দিয়ে হাজরে আসওয়াদ ভাঙ্গার চেষ্টা করলে লোকজন তাকে ধরে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। পরে প্রকাশ পায়, সে মক্কায় ফিতনা ও বিশৃঙ্খলা ঘটানোর জন্য আগমনকারী একশজনের দলের সদস্য। এই কথা জানাজানি হওয়ায় লোকজন তাদের অধিকংশকে খুঁজে বের করে হত্যা করে। এই ফেতনাকারীরা মিশরীয় হওয়ায় সবাই সাধারণ মিশরীয় হাজিদের উপর চটে যায়, এবং কাবাপ্রাঙ্গণে আবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বহু মানুষের প্রাণ যায়। মর্মান্তিক এই ঘটনার পিছনেও এই কুখ্যাত রাফেজি শিয়াদের হাত ছিল।
৪. এছাড়াও ফাতেমি শাসনামলে মক্কার আমীররা বিভিন্নভাবে হাজিদের জানমালের ক্ষতি করত। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, ক্ষমতার দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতার শিকার হতেন বাইতুল্লাহর মুসাফিরগণ। সাম্প্রতিককালে পবিত্র ভূমিতে ঘটা বিভিন্ন দুর্ঘটনার পিছনেও এই শিয়াদের সংশ্লিষ্টতার কথা শোনা যায়। ১৯৮৭ সনে অস্ত্রহাতে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে ৪০২জন হাজির মৃত্যু, ১৯৮৯ সনে বোমা বিস্ফোরণ, ১৯৯৪ সনে সাফার দুর্ঘটনা, ২০১৫ সনে মিনার দুর্ঘটনায় ইরানি শিয়াদের সংশ্লিষ্টতার নানা প্রমাণ বিশ্ব মিডিয়ায় পাওয়া গেছে।

ভবিষ্যতের ভয়ংকর পরিকল্পনা

শিয়াদের কিতাবসমূহে হারামাইন শরিফাইন সম্পর্কে যেসব উক্তি ও ভবিষ্যদ্বাণী পাওয়া যায় তা দেখলে গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়। তাদের আকিদামতে প্রতিশ্রুত শেষ ইমাম আত্মপ্রকাশের পর এসব ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়ন করবেন।

১. মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববি ভেঙ্গে ফেলা: ‘কায়েম (প্রতিশ্রুত শেষ ইমাম) মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীকে ভেঙ্গে তার মূল কাঠামোতে বানাবেন।’ প্রসিদ্ধ শিয়া আলেম হুসাইন খুরাসানী বলেন, ‘শিয়া সম্প্রদায় অধীর আগ্রহে সেই দিনের অপেক্ষায় রয়েছে যেদিন আল্লাহ তাদের হাতে পবিত্র ভূমির বিজয় দান করবেন...।’

২. রওযা শরিফ ভেঙ্গে দুই খলিফার দেহাবশেষ বের করা: ‘... আমি ইয়াসরিবে এসে হুজরা ভেঙ্গে সেই নরম লাশ দুটো বের করব, এবং বাকী'র সামনে শূল স্থাপন করে তাদের ঝুলিয়ে নিচে আগুন জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিব...।’

৩. হাজরে আসওয়াদ খুলে নিয়ে যাওয়া: ‘হে কূফাবাসী! আল্লাহ্‌ তায়ালা তোমাদের যে সম্মান দিয়েছেন তা অন্য কাউকে দেননি। তোমাদের মসজিদই হলো আদম, নূহ, ইদরিস ও ইবরাহিম আ. এর মসজিদ। এবং অচিরেই সেখানে হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করা হবে।’ এখানে শিয়াদের কিছু আকিদার উল্লেখ করা হলো। এছাড়াও দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অনেক ভয়ঙ্কর আকিদা ও ষড়যন্ত্র রয়েছে। এবিষয়ে মুসলমানদের সতর্ক করা এখন সময়ের দাবি।

তথ্যসূত্রঃ ১- সিয়ারু আ'লামিন নুবালা, ইমাম যাহাবি রহ., (আবু তাহের কারমাতীর জীবনী) ২. আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইমাম ইবনে কাসীর রহ., (৩১২ থেকে ৩৩৯ হিজরি সনের ঘটনাবলী) ৩. বিহারুল আনওয়ার, মাজালেসি ৪. তাহজিবুল আহকাম + গীবাহ, তুসী ৫- ওসায়েলুস শিয়া, হুর আমেলী।

লেখক : এমফিল গবেষক, আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিসর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ