আওয়ার ইসলাম: গত ২৭ সেপ্টেম্বর স্বীকৃতি বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন করার পর স্বীকৃতি নিয়ে কওমি সমাজে ব্যাপক আলোচনা পর্যালোচনা শুরু হয়। বেফাক চট্টগ্রামে জরুরি বৈঠক করে ৯ সদস্যের কমিটিকে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়। বিষয়টা নিয়ে সরকারি ৯ সদস্যের কমিশন এবং বেফাক বিভিন্ন স্থানে তাদের আলোচনা- ও তাদের পক্ষে সবগুলো কওমি মাদরাসা বোর্ড একীভূত করার সফর শুরু করেছে। সময়ের এ স্থানটিতে এসে স্বীকৃতি বিষয়ে বেশ তাৎপর্যপূণ মতামত তুলে ধরেছেন-কওমি সনদের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য রাজপথের আস্থার ঠিকানা শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর সন্তান ঢাকার মুহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসাতুত তারবিয়া আল ইসলামিয়ার পরিচালক চিন্তাশীল আলেম মাওলানা মামুনুল হক। অাওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুবের সঙ্গে এই মতামত দেন মাওলানা মামুনুল হক।
মতামতটি গ্রন্থনা করেছেন অাওয়ার ইসলামের নিজস্ব প্রতিবেদক আমিন আশরাফ
আওয়ার ইসলাম: কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি হলে তার অথরিটি বা পরিচালানা পদ্ধতিটি কেমন হবে বা কেমন হওয়া বলে আপনি মনে করেন?
মামুনুল হক: সম্প্রতি কওমি মাদরাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে কেউ নানা শঙ্কায় আছেন, আবার কেউ এ নিয়ে বেশ উল্লসিতও। সারাদেশে কওমি মাদরাসাগুলোর চিন্তাশীল ছাত্র শিক্ষকরা এ বিষয়টা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্নে সময় পার করছেন। তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার মূল কারণটা হচ্ছে- কারা কওমি মাদরাসা পরিচালনা করবে? আর কারাই বা এ পরিচালন কমিটি গঠন করবে? কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ গঠন করার ক্ষমতাটা যদি সরকারের বাগডোরে থেকে যায়, তাহলে তো সেটাই হবে, যা নিয়ে আমরা বেশ উদ্বেগে আছি। এখন যেমন সরকার তার আস্থাভাজন ব্যক্তিদের দিয়েই এ কমিশন গঠন করেছে। ঠিক তেমনিভাবে সরকার পরিবর্তন হয়ে কখনো যদি আবার ভাগ্যচক্রে বিএনপি জামাত বা অন্য কোনো দল বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসে, তখন স্বাভাবিকভাবে তারা চাইবে, রাতারাতি তাদের আস্থাভাজনদের দিয়ে সেই কর্তৃপক্ষ বা কমিশনে দ্রুত রদবদল আনতে। তখন আস্থাভাজন লোকদের মাধ্যমে কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করবে। ফলে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে তাদের আস্থাভাজনরা হবে কওমি মাদরাসা পরিচালন কমিটি। আবার জামাত বা বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের কাছের লোকেরাই হবে কওমি কর্তৃপক্ষ। মোটকথা সময়ে সময়ে আমার মতো কওমি মাদরাসার সাধারণ শিক্ষক ও ছাত্ররা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছেলেখেলার বস্তুতে পরিণত হবে।
আওয়ার ইসলাম : কওমি মাদরাসার সাধারণ শিক্ষক ও ছাত্ররা যাতে রাজনৈতিক দলের ছেলেখেলার বস্তুতে পরিণত না হয় এ ব্যাপারে আপনার প্রস্তাব কী?
মামুনুল হক : এ পরিস্থিতে উত্তরণের একটিই মাত্র পথ তা হচ্ছে- কওমি মাদরাসার নেতা কওমি মাদরাসার দয়িত্বশীলদের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। এখন যে সমস্ত কওমি মাদরাসার জাতীয় ও আঞ্চলিক বোর্ড রয়েছে, বেফাকুল মাদারিসিলি আরাবিয়া, ইত্তেহাদুল মাদারিস, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম, তানজিমুল মাদারিস, যে বোর্ডের কথাই বলি না কেন, সকল কওমি মাদরাসার বোর্ডগুলোর দায়িত্বশীল নির্বাচিত হওয়ার যে প্রক্রিয়া রয়েছে, যেমন- প্রত্যেকটি বোর্ডের মজলিসে শূরা রয়েছে, সেই শুরার সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতেই প্রত্যেকটি বোর্ডের দায়িত্বশীল নির্বাচিত হন। তেমনিভাবে সকল বোর্ডের সমন্বয়ে বাংলাদেশের সকল কওমি মাদরাসা, বিশেষ করে দাওরায়ে হাদীস মাদরাসার দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে শুরা গঠন করে শুরার সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে কওমি মাদরাসার দায়িত্বশীল এবং নেতা নির্বাচিত হতে হবে। অর্থ্যাৎ কওমির নেতা কওমিরাই নির্বাচন করবে। এ পদ্ধতিতে ছাড়া অন্যকোনো মাধ্যমে যদি কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত হয়, তাহলে কওমি মাদরাসার নেতৃত্ব সব সময় সরকারের আস্থাভাজনে পরিণত হবে এবং রাজনৈতিককরণের অশুভ একটি রাস্তা খোলে যাবে। যা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন এবং খুবই আতঙ্কে আছি।
আওয়ার ইসলাম: তারা মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন, এই কমিশন মেনে নিতে খুব একটি অসুবিধা নেই। এখন যে প্রক্রিয়া চলছে সেটা গ্রহণযোগ্য, তবে নেতা নির্বাচনের দায়িত্বটা কওমি মাদরাসা পালন করবে?
মামুনুল হক: এই প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য সেটা সম্পূর্ণ বলা যাবে না। এই প্রক্রিয়াটা সবার আস্থাভাজন হওয়া, সবার সমন্বয়ে হওয়া, সকলের মতের ভিত্তিতে হওয়া বাঞ্চনীয়, সেটা হতেই হবে। তবে মূল আশঙ্কার বিষয়টি হচ্ছে, একজন সাধারণ কওমির শিক্ষক বা ছাত্র হিসাবে আমি বলবো, আমাদের দায়িত্বশীল কে নির্বাচন করবে কে? আমরা না কর্তৃপক্ষ? নির্বাচনের দায়িত্বটা যেন কওমি মাদরাসার থাকে। আর এ জায়টাতেই আজ কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি নিয়ে বিভেদের মূল সুত্র। সরকার নির্বাচন করে দিচ্ছে অমুককে। অমুক চেয়ারম্যান আর অমুক মহাসচিব। আমরা আমাদের চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব নির্বাচন করতে পারছি না।
আওয়ার ইসলাম: এখন যে ৯ সদস্যের কমিটি হলো-
মামুনুল হক: সেটা তো সরকার গঠন করেছে। সরকার যাকে চাইবে সে চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নির্বাচিত করবে। এতে কওমি মাদরাসার ছাত্র বা শিক্ষকের মতামতের কোনো প্রতিফলন ঘটলো না। এভাবে আস্তে আস্তে সকল কওমি মাদরাসাগুলো সরকারের ইচ্ছে ও তামাশার বস্তুতে পরিণত হবে।
আওয়ার ইসলাম: আওয়ার ইসলামকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মামুনুল হক: ধন্যবাদ আপনাকেও।
এইচএ