ফারুক ফেরদৌস: গত ২৭ সেপ্টেম্বর স্বীকৃতি বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন করার পর স্বীকৃতি বিষয়ক আলোচনা তুঙ্গে ওঠে। চট্টগ্রামে জরুরি বৈঠকে বসে বেফাক। সিদ্ধান্ত হয় ৯ সদস্যের কমিটি প্রত্যাখ্যানের। কিন্তু প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত বেফাক কার্যকর করতে পারছে কি না এ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারণ বেফাক ও বেফাকের বাইরে দেশের প্রায় সব শীর্ষ আলেম এখন স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। আগে স্বীকৃতির কঠোর বিরোধী ছিলেন দেশের শীর্ষ আলেম জামিয়া যাত্রাবাড়ীর প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদিস আল্লামা মাহমুদুল হাসান। তিনি এখন সরকারী স্বীকৃতিকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিবেচনা করছেন। স্বীকৃতির বিষয়ে মতামত জানতে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, দেওবন্দের আট মূলনীতি ও ওলামায়ে কেরামের ঐকমতের ভিত্তিতে স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বীকৃতি প্রয়োজন। আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে কওমি সনদের সরকারী স্বীকৃতি দেয়া হলে সরকারের জন্য ভালো হবে। মাদরাসাগুলোর জন্যও ভালো হবে। দেশ জাতির জন্য ভালো হবে। তিনি স্বীকৃতির জন্য তার ১১ দফা প্রস্তাব উল্লেখ করেন:
১.কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ এফিলিয়েটিং ক্ষমতা সম্পন্ন একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ হবে।
২.দারুল উলূম দেওবন্দের ৮ মূলনীতিই হবে কওমি মাদরাসা পরিচালনার মূলনীতি।
৩.এই কর্তৃপক্ষ নেসাবে তা’লীম বা পাঠ্যসূচি নির্ধারণ করবে। এতে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ থাকবে না।
৪.কওমি শিক্ষা কর্তৃপক্ষ এফিলিয়েটিং অথরিটি হিসাবে কওমি কর্তৃপক্ষ র ছাত্রদেরকে ডিগ্রী ও এম.এ-এর সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।
৫.অন্যান্য বোর্ডসমূহ প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক তথা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত সার্টিফিকেট প্রদান করবে।
৬.যে সমস্ত মাদরাসা বোর্ডের অধিভুক্ত হবে না তারা পূর্বের ন্যায় স্বাধীন থাকবে।
৭.কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ সকল সদস্য হবেন কওমি শিক্ষায় শিক্ষিত শীর্ষস্থানীয় ওলামা মাশায়েখগণ।
৮.সকল বোর্ডের সভাপতি/মহাসচিব পদাধিকার বলে এই কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন।
৯.বোর্ডসমূহের বাহির থেকে ৭ জন শীর্ষস্থানীয় কওমি আলেম এই কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন।
১০.মহিলা কওমি মাদরাসার ১জন প্রতিনিধি এই কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন।
১১.এই কর্তৃপক্ষের সুপারিশে কওমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে।
এই প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করে আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘মুরুব্বীরা চিন্তা ভাবনা করছেন। তারা যেভাবে ভালো মনে করবেন সিদ্ধান্ত নেবেন।’ স্বীকৃতির বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের সব পক্ষ একমত হতে পারবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘হাটহাজারির হুজুর বেফাকের মুরুব্বী, ওলামায়ে কেরামের মুরুব্বী। তিনি আমারও মুরুব্বী। তিনি চিন্তা ভাবনা করছেন। আমরা আশা করি সবাই একমত হবে। সবার ঐকমতের ভিত্তিতে স্বীকৃতি আসবে।’
বেফাকের শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত ৯ সদস্যের কমিটি প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বেফাক একটি বোর্ড, এই বোর্ডের আলেমরা আছেন। অন্য বোর্ডের আলেমরা আছেন। বোর্ডের বাইরেও মাদরাসা আছে। সব বোর্ডের ঐকমতের ভিত্তিতে স্বীকৃতি আসতে হবে।
চট্টগ্রামের বৈঠকে বেফাকের বাইরের কোনো আলেম গিয়েছে কি না জানেন না জানিয়ে আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি যাইনি। আমি দুর্বল মানুষ। আমার কোনো প্রতিনিধিও যায় নি।
এফএফ