শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

আমাকে আহমদ শফী সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয় না -ফরীদ উদ্দীন মাসউদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। একজন লেখক, সাহিত্যিক, চিন্ত্যক। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রায়ই সাহসী পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝড় তোলেন, যা আলোচনার পাশাপাশি প্রায়শই বিতর্কও সৃষ্টি করে। এ থেকে মনে হতে পারে বাঙালি আদতেই একটা ‘বিতর্কপ্রিয় জাতি’। আসলে তা নয় বরং বাঙালি বিনা-বিশ্লেষণে কোনো কিছুই মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। বাঙালি একটি জ্ঞানপ্রিয় জাতি। তাদের জ্ঞান ও চিন্তার খোরাক যোগাতে সময়ে সময়ে যে ক’জন মানুষ উদিত হন, এদেরই একজন তিনি। তার বক্তব্যে চিন্তা ও ভাবগাম্ভীর্যের একটা ছাপ থাকে। প্রশ্নের মুখে কখনো অনর্গল বলে যান, আবার কখনো কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। একান্তে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের সিনিয়র রিপোর্টার জাকির মাহদিন

জাকির মাহদিন : মাদরাসা শিক্ষার স্বীকৃতি দিতে সম্প্রতি সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সেটা আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে বেফাক প্রত্যাখ্যান করেছে। এটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : হযরত আল্লামা আহমদ শফীকে সবাই শ্রদ্ধা করেন। আমিও অবশ্যই অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। আমি এটা প্রায়ই বলি এবং অন্তর থেকেই বলি, আল্লামা আহমদ শফীর পায়ের সমতুল্য আমার মাথাও না। তিনি শায়খুল ইসলাম হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর সংসর্গে ছিলেন। আমার বিশ্বাস, মাদানী রহ. এর সংসর্গে যারা ছিলেন তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা আখেরাতে অপমান করবেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই সেদিন বেফাকের কোনো মিটিং হয়েছে কি না। কারণ বেফাকের শুরা এবং আমেলার সব সদস্য মিলিয়ে প্রায় দেড়শত জন সদস্য। এদের ক’জন উপস্থিত হয়েছেন, কোরাম পূর্ণ হয়েছে কি না, এটাকে মিটিং বলা যাবে কি না, নিয়মমাফিক পূর্ব-নোটিশ দেয়া হয়েছে কি না, অনেক প্রশ্ন। আমার মাদরাসাও বেফাক সংশিষ্ট। আমার মনে হয় এটা আহমদ শফী সাহেবের নাম ব্যবহার করে কয়েকজন চিহ্নিত ব্যক্তি এই ‘কথিত প্রত্যাখ্যান’ চাপিয়ে দিয়েছেন।

জাকির মাহদিন : আহমদ শফী সাহেব মিটিংয়ের আগেই শিক্ষামন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে অবহিত এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো সবার সঙ্গে পরামর্শক্রমে তিনি নিজেই নেন- এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত নন?

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : এটা কেবল আমার প্রশ্ন না, সারা বাংলাদেশের আলেমসমাজই বলছেন হুজুর অনেক সময় যেসব কথা বলেন তা আমাদের কাছে বিকৃত ও পরিবর্তিত করে উপস্থাপন করা হয়। তাই আসলে তিনি কী বলেছেন আমরা বুঝতে পারি না।
জাকির মাহদিন : হুজুরের বয়স কি এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা, যে কারণে তিনি চারপাশের লোকজনকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ, মাদরাসা পরিচালনা এবং বেফাকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তগুলোতে দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে পারেন না?

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : হযরতের বয়স নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। কারণ আমি শুনেছি তিনি এখনো বুখারি শরিফের দরস দেন। তবে প্রশাসনিক বিষয়ে তার বয়সজনিত শারীরিক অক্ষমতাগুলো সম্ভবত প্রভাব ফেলে।

প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই সেদিন বেফাকের কোনো মিটিং হয়েছে কি না। কারণ বেফাকের শুরা এবং আমেলার সব সদস্য মিলিয়ে প্রায় দেড়শত জন সদস্য। এদের ক’জন উপস্থিত হয়েছেন, কোরাম পূর্ণ হয়েছে কি না, এটাকে মিটিং বলা যাবে কি না, নিয়মমাফিক পূর্ব-নোটিশ দেয়া হয়েছে কি না, অনেক প্রশ্ন।

জাকির মাহদিন : ২০১৩ এর খসড়া বা প্রজ্ঞাপন কমিটিতে আহমদ শফী সাহেব চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু এবার হুট করে তাকে বাদ দিয়ে আপনি সর্বোচ্চ পদে বসলেন। যদি সত্যিই আপনি তাকে এতটা সম্মান-শ্রদ্ধা করেন তাহলে তাকে কমিটিতে রাখেননি কেন? অথবা এখনো কি এটা সংশোধনের সুযোগ আছে?

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : হুজুরের প্রতি শ্রদ্ধাবশতই কমিটিতে তার নাম লেখা হয়নি। তিনি মূল কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে এখনো বহাল আছেন। এ প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে এটা সেই মূল কমিটিরই ধারাবাহিকতা। মানে এটা একটা উপ-কমিটি। তাই এতে কাউকে চেয়ারম্যান করা হয়নি বরং আমাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। সুতরাং এটা যে কেউ বোঝতে পারবেন যে সব ধরনের কমিটিতে যদি তাকে চেয়ারম্যান করা হয় তবে সেটা তার প্রতি অবমাননা। কোনো সম্মানিত ব্যক্তিকে শুধু আলঙ্কারিক পদ দিয়ে তার ইমেজকে চারপাশের লোকেরা ব্যবহার করা প্রকারান্তরে সেই ব্যক্তিকে অপমানিত করা।

জাকির মাহদিন : বেফাকের যে দুজনকে রাখা হয়েছে সেটা কি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা করে?
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : জি, আমি নিজে তাদের জানিয়েছি এবং তারা আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে তারা আমাদের সাথে আছেন। এ বিষয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।

জাকির মাহদিন : স্বীকৃতি-প্রশ্নে শতকরা আশিভাগ মাদরাসা নিয়ন্ত্রণ করা বেফাকের সম্পৃক্ততা যদি চানই তবে কেন আপনাদের পছন্দের লোক নিলেন?

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : প্রথমত আমি এ কথার প্রতিবাদ করছি যে শতকরা আশিভাগ মাদরাসা বেফাক নিয়ন্ত্রণ করে। সর্বশেষ ধারণানুযায়ী বাংলাদেশে কওমি মাদরাসার সংখ্যা প্রায় বিশ হাজারের মতো। বেফাক বলছে তাদের সঙ্গে আছে পাঁচ-ছয় হাজার, তাহলে এর বাইরে আছে আরও পনের হাজার মাদরাসা। সুতরাং সেই পাঁচ-ছয় হাজার মাদরাসা কিভাবে আশিভাগ হয়? দ্বিতীয়ত, পূর্বের কমিটিতেও এ দুজন বেফাকের প্রতিনিধি হিসেবেই আছেন। তাই এখানে আমাদের পছন্দ-অপছন্দ বলে কিছু নেই।

জাকির মাহদিন : আপনি আলেম সমাজের একজন বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে বাংলাদেশের আলেম সমাজের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি আল্লামা আহমদ শফীর সঙ্গে সরাসরি নিয়মিত যোগাযোগ, পরামর্শ, বৈঠক ইত্যাদি করেন?

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : তিনি প্রায়শই অসুস্থ থাকেন। তাই তার সঙ্গে ঘন ঘন যোগাযোগ হয় না। মাঝে মধ্যে আমি তার সঙ্গে আলাপ করতে চেষ্টা করি।

জাকির মাহদিন : বিশেষ পরিস্থিতিগুলোতে। এই যেমন স্বীকৃতি প্রসঙ্গে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারি। এর বিভিন্ন দিক এবং প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে তিনি অবগত কি না তা নিশ্চিত হতে? নাকি তার সঙ্গে কথা বলার আপনি প্রয়োজনবোধ করেন না?

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : আমি অবশ্যই তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও পরামর্শের প্রয়োজনবোধ করি। বিশেষ পরিস্থিতিতে আরো বেশি। সম্প্রতি আমি যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমাকে জানানো হল তিনি অসুস্থ। একজন অসুস্থ মানুষকে আর কত কষ্ট দেয়া যায়?

জাকির মাহদিন : তার কাছে সরাসরি চলে যেতে সমস্যা কি? অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখা তো সুন্নত।

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : আমি আপনার সঙ্গে একমত। এ জন্যই আমি আগে একবার গিয়েছিও। কিন্তু আমাকে সকাল থেকে প্রায় আসর পর্যন্ত তার পাশের রুমে বসিয়ে রেখে শেষ পর্যন্ত বলা হল তিনি এত অসুস্থ যে কারও সঙ্গে সাক্ষাতের মতো পরিস্থিতিতে নেই। এটা এতই দুঃখজনক যে আমি কাউকে বলতে চাইনি।

আমি এ কথার প্রতিবাদ করছি যে শতকরা আশিভাগ মাদরাসা বেফাক নিয়ন্ত্রণ করে। সর্বশেষ ধারণানুযায়ী বাংলাদেশে কওমি মাদরাসার সংখ্যা প্রায় বিশ হাজারের মতো। বেফাক বলছে তাদের সঙ্গে আছে পাঁচ-ছয় হাজার, তাহলে এর বাইরে আছে আরও পনের হাজার মাদরাসা।

জাকির মাহদিন : যুগ যুগ ধরে লাখ লাখ কওমি মদরাসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দের যে চাওয়া- রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি- এটা এখন অনেকটাই বাস্তবায়নের পথে। শেষ মুহূর্তে যেন এটা বাধাপ্রাপ্ত না হয় সেজন্য শফী সাহেবের সঙ্গে সরাসরি বসার কোনো ব্যবস্থা করা আসলেই আপনার পক্ষে সম্ভব না?

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : আমি নিজেও চেষ্টা করছি এবং আপনাকে অনুরোধ করব, আপনি অথবা যে কেউ এ ধরনের একটা ব্যবস্থা করতে পারলে আমি তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

জাকির মাহদিন : আমরা আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে চাচ্ছি ‘কওমি সনদের স্বীকৃতি : উদ্যোগ, সমন্বয় ও বাস্তবায়ন’ শিরোনামে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করতে। যেখানে দল-মত নির্বিশেষে দেশের শীর্ষ আলেমগণ উপস্থিত থাকবেন। এ ব্যাপারে আপনার কি ভূমিকা থাকতে পারে?

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : এটা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। আমি এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

আরো পড়ুন : আল্লামা আহমদ শফীর পায়ের সমতুল্য আমার মাথাও না -ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ