শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে সরকার ও আলেম সমাজ মুখোমুখি : সংকট উত্তরণে তরুণ আলেমদের ভাবনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

torun-alimআমিন ইকবাল : বর্তমান সময়ে আলোচিত একটি বিষয় ‘কওমি শিক্ষাসনদের সরকারি স্বীকৃতি’। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে স্বীকৃতির আলোচনা নতুন করে শুরু হয়। ইতোমধ্যে কওমি মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় ও কওমি মাদরাসা শিক্ষাসনদের সরকারি স্বীকৃতির লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। ৯ সদস্যেও এই কমিটির আহ্বায়ক জামিয়া ইকরার মহাপরিচালক মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসউদ, সদস্য সচিব গহরডাঙ্গার মাওলানা রুহুল আমিন। তবে কমিটি কমিটি ঘোষণার মাত্র দুই দিনের মধ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছে, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড - বেফাকসহ দেশের শীর্ষ আলেমরা।

কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে যেখানে স্বীকৃতি বিষয়ে সম্ভাবনার সূর্য উদয় হলো, সেখানে অন্ধকার নেমে এসেছে এই প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে। ফলে বাহ্যত সরকার ও শীর্ষ আলেমগণ স্বীকৃতি নিয়ে অনেকটা মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য গঠনমূলক মতামত জানিয়েছেন তরুণ আলেম ও লেখকগণ।
লাখো শিক্ষার্থীর হৃদয়ের আকুতি বোঝার চেষ্টা করুন
জহির উদ্দিন বাবর
যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, ঢাকা টাইমস

কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি নিয়ে আলেমরা দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সরকার দিতে চাইলেও আলেমদের একটি বড় অংশ এর বিরোধিতা করছেন। তারাও স্বীকৃতি চান, তবে স্বীকৃতিটা কার নেতৃত্বে সেটা নিয়েই এখন মূলত মতবিরোধ। কওমিপড়ুয়া লাখ লাখ শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি সনদের স্বীকৃতি। যারা স্বীকৃতি পাবেন তাদের কাছে কে দিলো সেটা মুখ্য বিষয় নয়, স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে স্বীকৃতি পাওয়াটাই মুখ্য। তাই ‘কর্তৃত্বের টানাটানি’ আর ‘হঠকারিতা’ বাদ দিয়ে সবার উচিত লাখো তরুণের হৃদয়ের আকুতি বোঝা। নতুন প্রজন্মের হৃদয়ের কথা বুঝতে না পারলে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না।

বেফাককে সিদ্ধান্তহীনতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে
মাসউদুল কাদির
যুগ্ম সম্পাদক, মাসিক পাথেয়

আশ্চর্য হলেও সত্য, বিভিন্ন সময় বেফাকের নানারকম বক্তব্য আমরা পেয়েছি। স্বীকৃতি নিয়ে বেফাক মহাসচিবের গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিগুলো বিষাদময়। আলোচনার পথকে কণ্টকাকীর্ণ করা হয়েছে। মূলত আলেম সমাজের সঙ্গে সরকারের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। যারা স্বীকৃতি চাচ্ছিলেন, সেসব আলেমগণ তো সনদ নিতে এখনো আগ্রহী।

তাই সবার আগে বেফাককে স্বীকৃতি বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর ওই সিদ্ধান্তে অটল অবিচল থাকতে হবে। অনেকের দ্বিমুখিপ্রবণ আচরণের কারণে এদেশের মাদরাসা শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আজ স্বীকৃতি চাই, কাল চাই না, পরে আবার এই হলে চাই- ‘বিচার মানি তালগাছ আমার’ এই প্রক্রিয়ায় তো সমাধান নেই। আগে তো স্বীকৃতি সহজতর করণকে সহযোগিতা করতে হবে। একবার স্বীকৃতি হলে পরে বেফাকসহ যেকোনো বোর্ডও দাবিতে অবিচল থাকতে পারে-আমাদেরকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। সেটা তখন সম্ভবও হতে পারে। অমুক তমুকের কারণে বিরোধিতা কেবল মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।

বৃহত্তর কওমি সমাজের সম্মতি সাপেক্ষে স্বীকৃতি চাই
সৈয়দ শামসুল হুদা
সম্পাদক, নুরবিডি ডটকম

কওমি মাদ্রাসা বাংলাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখে চলেছে। আদর্শ নাগরিক তৈরি, সুন্দর সমাজ গঠনে কওমি মাদ্রাসাসমূহের ভূমিকা অপরিসীম। যেহেতু বর্তমানে কওমি মাদ্রাসা, এর ফারেগীনদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, ফারেগীনদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি দিনদিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং সরকারের শিক্ষা বিভাগের সাথে এর একটি সমন্বয় গড়ে উঠা সময়ের দাবী। সুতরাং যেই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে কওমি শিক্ষার স্বীকৃতি প্রয়োজন, তাদের বৃহত্তর অংশের চাওয়া-পাওয়াকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড সরকারের সাথে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টির জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা আমি মনে করি সঠিক। হঠাৎ করে প্রজ্ঞাপন জারিটা কওমি মাদ্রাসার বৃহত্তর সমাজকে আশান্বিত করতে সক্ষম হয়নি বলেই আমার কাছে মনে হয়।

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ