শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


জরিপে দেখা যাচ্ছে স্বীকৃতির জন্য শিক্ষার্থীরা উতলা হয়ে আছে: মাওলানা আনওয়ার শাহ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

 

anoar-shahকওমী মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থার স্বীকৃতি বাস্তবায়নের লক্ষে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কমিটির একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে। সদ্য ঘোষিত এ কমিটি’র ৯ জন সদস্যের অন্যতম সদস্য কিশোরগঞ্জ জামিয়া ইমদাদিয়ার মুহতামিম মাওলানা আযহার আলী আনওয়ার শাহ। আজ  চট্টগ্রামে দারুল উলূম হাটাহাজারী মাদ্রাসা মহাপরিচালকের কার্যালয়ে  জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বেফাক। সে বৈঠকে যোগদান উপলক্ষে সফরের পূর্ব মুহূর্তে ৯ সদস্যের কমিটি ও স্বীকৃতি বিষয়ে তিনি তার মন্তব্য তোলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- আমিন আশরাফ

আওয়ার ইসলাম: মিটিতে আপনি  আছেন, জেনে ভালো লাগলো,  আপনি এই বিষয়ে কী ভাবছেন?

মাওলানা আনওয়ার শাহ: এ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো কাগজপত্র  আমার কাছে আসেনি। তবে আমার ভাবনা এটাই,  সরকার আমাদের কারিকুলামে কোনো প্রকারের হস্তক্ষেপ না করে। আমরা আগের মতোই স্বাধীনভাবে আমাদের কাজ  করে যাবো। আর দাওরায়ে হাদীসের যে সনদ আছে সেটা যেন মার্স্টাসের মান পায় ধর্মবেত্তা হিসাবে। ইঞ্জিনিয়ারের সার্টিফিকেটের যেমন স্বীকৃতি আছে,  ডাক্তারের সনদের যে ধরনের স্বীকৃতি রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে আমরা দাওরায়ে হাদীসের ছাত্রদের মার্স্টাসের মান পাইয়ে দেওয়া।

আওয়ার ইসলাম:  সবগুলো র্বোড আছে। বেফাকের প্রতিনিধি হিসেবে আপনাকে এবং ফরিদাবাদের মুহতামিম মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসকে  দেখা যাচ্ছে,  তো দুজনই কী যথেষ্ট?

মাওলানা আনওয়ার শাহ:  দুজনকে যে করা হয়েছে সেটা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়নি। যে কারণে আমি এখন ঢাকা রওয়ানা হচ্ছি। আগামীকাল সকাল সাতটার ফ্লাইটে আমি চট্রগ্রাম যাচ্ছি। আরো অনেকেই যাচ্ছেন। আহমদ শফী সাহেব ফোন করে আমাদের কজনকে তার ওখানে ডেকেছেন। আমরা সেখানে বৈঠক করে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাদের জানাতে পারবো।

আওয়ার ইসলাম:  এই কমিটি কতটা কওমি শিক্ষার র্স্বাথ রক্ষা করতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?

মাওলানা আনওয়ার শাহ:  দেখেন, উলামায়ে কেরাম  খুবই এর বিপক্ষে। আর সরকার  ভাবসাব বলে দিচ্ছে তারা স্বীকৃতি দেবেই।  তো তা আওতায় রাখার জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। আর সেই সঙ্গে এই চেষ্টাটাই এখন আমাদের সময়ের দাবি। মাঠপর্যায়ে আপনি  জরিপ করলে  দেখতে পাবেন, আজকে কওমি মাদরাসার সিংহভাগ ছাত্র স্বীকৃতির জন্য উতালা হয়ে আছে। সেজন্য আমাদের এ বিষয়ে এমনভাবে অগ্রসর হতে হবে, যাতে এমন না হয় যে,  মাদরাসাগুলোর নিয়ন্ত্রণ সরকার নিয়ে নেয়। যাতে স্বীকৃতির পাবার পরেও আমরা আমাদের কাজ কর্ম স্বাধীনভাবে করতে পারি। সেই সঙ্গে দাওরায়ে হাদীসের শিক্ষার্থীরাও মার্স্টাসের মান পেয়ে যায়।

আওয়ার ইসলাম:  এই স্বীকৃতি আপনার ধারণায় কতটা সুফল বয়ে আনতে পারে?

মাওলানা আনওয়ার শাহ:  সুফলটা হলো, আলেম হওয়ার পরেও, যোগ্য লোক হওয়ার পরেও কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ইলমী ময়দানে কাজ করতে পারে না এ সনদের মান না থাকার কারণে। যেমন- মসজিদের খতিব আছে, আরবি লাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষকতার একটা ব্যাপার আছে। মোটকথা এর মাধ্যমে দীনী খেদমতের ময়দানটা আরো প্রশস্ত হবে। আরেকটা বিষয় রয়েছে যা নিয়ে আমি ও আমরা বেশ ভুক্তভোগী। আমরা কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ফ্রি খাবার সরবরাহ করি, ফ্রি কোঠা দেই। এখান থেকে সার্ভিস নিয়ে তারা আলিয়া মাদরাসায় পরীক্ষা দেয়। এর অর্থ হলো,  আমাদের মাদরাসাগুলো একটা কোচিং সেন্টার । এই কোচিংয়ে তারা কোচিং করে আলিয়া মাদরাসায় পরীক্ষা দেয়। তো আমাদের নিজস্ব  সত্ত্বার যদি একটা স্বীকৃতি থাকে, তাহলে আমাদের কওমির স্বকীয়তাটা আশা করি বজায় থাকবে। কারণ আমরা যেভাবে ছাত্রদের গড়ে তুলি আলিয়া পরীক্ষা দিয়ে তারা আর সে অবস্থায় অটল থাকতে পারে না পরিবেশগত কারণে।

আমরা কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ফ্রি খাবার সরবরাহ করি, ফ্রি কোঠা দেই। এখান থেকে সার্ভিস নিয়ে তারা আলিয়া মাদরাসায় পরীক্ষা দেয়। এর অর্থ হলো,  আমাদের মাদরাসাগুলো একটা কোচিং সেন্টার । এই কোচিংয়ে তারা কোচিং করে আলিয়া মাদরাসায় পরীক্ষা দেয়।

আওয়ার ইসলাম:  খসড়া আইনের একটি ধারা এমন রয়েছে যে, সমস্ত  বেসরকারি  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য  নিবন্ধন বাধ্যতামূলকমনে করা হচ্ছে, এই  নিবন্ধের অর্থই হলো, কওমি মাদরাসার উপর সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

মাওলানা আনওয়ার শাহ:  আল্লামা আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ  যে আইন করেছিল তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান কমিটিটা করা হয়েছে। এটা সরকারকে প্রস্তাবনা করার জন্য। যদি ওই কমিটির নিয়ন্ত্রণে নিবন্ধনের একটা প্রক্রিয়া থাকে তাহলেই তো কওমি মাদরাসাগুলো নিবন্ধনে যাবে। আর যদি গঠিত কমিটির নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে আমাদের ভাববার বিষয় রয়েছে। এটা যতক্ষণ আলোচনা না করা হচ্ছে  ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়টা পুরোপুরি পরিষ্কার হবে না। সেজন্য কিছু পরামর্শ করার জন্যই আমি এই অসুস্থ শরীর নিয়েও চিটাগাং সফরে যাচ্ছি আহমদ শফী সাহেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য। সেখানে আমরা আলোচনা করেই এ সমস্ত বিষয়গুলো বলতে পারবো।  কারণ আমি এ পর্যন্ত কোনো এ সম্পর্কে কোনো পেপার্স পাইনি। আমি কোনো লবিংও করি নাই। বরং আমি এসব কাজ থেকে একটু দূরেই থাকতে চাই। কারণ আমার কোনো পদবি পাবার লোভ নেই। আমি চাই আমার ছাত্ররা যেনো শিক্ষার মানটা পুরোপুরি পায় তার জন্য কাজ করা করতে পারি আল্লাহ যেন সে তাওফিক দিন।

আওয়ার ইসলাম:  কওমী মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থার স্বীকৃতি বাস্তবায়নের লক্ষে সদস্যের যে তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেছে। তা গণমাধ্যমে প্রকাশ পাবার পর এ বিষয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। বলা হচ্ছে, শুধু এ কজন আলেম কেন, আরো যারা সম্মানিত আলেম রয়েছেন তারা নয় কেন?

মাওলানা আনওয়ার শাহ:  আমি তো এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমি যেটা ধারণা করছি, সম্ভবত সরকার অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কমিটিতে যুক্ত করেছে। যাদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে সরকার তাদেরকে সরকার এড়িয়ে গেছে।

আওয়ার ইসলাম:  আওয়ার ইসলামকে সময় দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

মাওলানা আনওয়ার শাহ: আপনাকেও।

আরো পড়ুন: শর্ত মেনে স্বীকৃতি দিলে বেফাক পক্ষে থাকবে – শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী

বেফাকের মাধ্যমে স্বীকৃতি দিলে কোনো প্রশ্ন থাকবে না -আল্লামা মোস্তফা আজাদ

কওমি স্বীকৃতির লক্ষে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের গঠিত কমিটির ৯ সদস্য কারা

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ