শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ মানুষের প্রকৃত পরিচয়ের অভাব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

manabadikarতাহসীনা পারভীন

মানব সমাজে সবচেয়ে  গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানবাধিকার। মানবাধিকার হল মানুষের যা অধিকার বা প্রাপ্য। এ অধিকার কাদের জন্য? বিশ্বজুড়ে যারা শক্তিশালী, ক্ষমতাবান তাদের জন্য? না বিশ্বজুড়ে যারা দুর্বল, ক্ষমতাহীন তাদের জন্য? নাকি জ্ঞানের দিক দিয়ে যারা শ্রেষ্ঠ তাদের জন্য? না, এসবের একক দল হিসেবে কেউই না। মানবাধিকার হচ্ছে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-দুর্বল-শক্তিশালী, ক্ষমতাবান-ক্ষমতাহীন, জ্ঞানী-অজ্ঞ নির্বিশেষে সবার জন্য। আজ এ অধিকার নিয়ে হচ্ছে কত লড়াই সংগ্রাম। এ লড়াই সংগ্রাম কেন হচ্ছে? এসবের কারণ কি? এসবের মূল কারণ মানুষের প্রকৃত পরিচয়ের অভাব। মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হয়েও অধিকার আদায়ের জন্য করতে হয় লড়াই সংগ্রাম। জগতের অন্যসব সৃষ্টি তাদের নিজেদের দাবি ও অধিকার নিয়ে লড়াই সংগ্রাম করে না। করতে হয়ও না। কারণ তাদের মানুষের মতো এতবেশি অধিকারে প্রয়োজন নেই। মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাই তাদের অধিকারের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।

আমাদের চারপাশে আজ প্রতিনিয়ত হচ্ছে ধর্ষণ, হত্যা-জুলুম, লড়াই-সংগ্রাম, মানবতার বিপর্যয়।  এসবের একমাত্র কারণ মানুষের মৌলিক পরিচয়ের অভাব। সঠিক জীবন দর্শনের অভাব। মানুষের মৌলিক পরিচয় কোনো ধর্ম-বর্ণ-গোত্রে নয়, অর্থ-বিত্ত-কর্মে নয়। মানুষের মৌলিক পরিচয় তার মৌলিক গঠনে। মৌলিক আকৃতির মৌলিক বৈশিষ্ট্যে। যা সৃষ্টি জগতে অন্য কারো মাঝে নেই। মানুষের মৌলিক পরিচয় তার চাহিদায়, শক্তিতে, চিন্তায়, চেতনায়। অন্যকে সহযোগীতা, সহমর্মিতা ও আন্তরিকতায়।  অভাব-অনটনে যাদের জীবন যাপন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ায়।

কিছুদিন আগে আমি এক কাজের মহিলার সাথে একই থালায় দুধ-কলা দিয়ে ভাত খাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার এক চাচী এই দৃশ্য আমার ঘরে এসে দেখে চলে যান। যা বলার ছিল তাও বলতে পারেননি, এতটা ঘৃণাই জন্মেছিল আমার প্রতি তার। সেদিন বিকেলেই আমার পরিবারের কাছে আমার প্রতি বিচার জমা হয়, কেন আমি কাজের মহিলার সাথে নিজের পরিচয়ের কথা ভাবি না। বিচারটা নিয়ে আসেন আমার এক শিক্ষিতা চাচাতো বোন। একজন শিক্ষিত নারীর কাছ থেকে এই রকম অভিযোগ আমি আশা করিনি। ভাবতে অবাক লাগে, শিক্ষিত মানুষরাও তাদের এই মৌলিক পরিচয় অস্বীকার করছে। শেষে পরিবারের কাছে জবাবটা এভাবেই দিয়েছিলাম, আমরা ভুলে গেছি আমরা একই জাতি। আমি যা খাই, যা পরি, আমার ভালোবাসা পাওয়া সব কিছুতেই তার অধিকার আছে।

আমরা সবাই জানি খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্ম, বিবাহ, বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা- এসব প্রতিটি মানুষেরই একান্ত প্রয়োজনীয় অধিকার। আমাদের জীবনে চলার পথে এ অধিকারগুলো কখনোই আমরা অস্বীকার করতে পারি না। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় কী হচ্ছে এসব! এই একবিংশ শতাব্দিতেও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত। কেন এরা বঞ্চিত? পৃথিবীর সম্পদ কম, মানুষ গরিব? কখনোই নয়। বরং সমানুপাতিক বণ্টনের সমস্যা। ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার অভাব, মানসিক দৈন্য এবং দৃষ্টিভঙ্গিগত দুর্বলতা। তাই এসব অধিকার আদায়ের লক্ষে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করা অপরিহার্য। তবে এসব অধিকার আদায় করতে গিয়ে নতুন করে সংঘাত-সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং বিশেষ করে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী কিংবা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে হিংসা প্রতিহিংসায় আমরা যেন জড়িয়ে না যাই সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।

মানুষের অধিকার নিয়ে সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে প্রবৃত্ত হতে হবে আমাদের। যতক্ষণ না একটি সমাজ, একটি দেশ ও একটি জাতি সাধারণভাবে এর উপর সহমত পোষণ করে। কারণ বিশ্বের সমস্ত মানুষ মৌলিকভাবে এক, তাদের মৌলিক চাহিদা এক মৌলিক আশা-আকাঙ্ক্ষা এক। এর গতি-প্রকৃতি এক।

লেখক: শিক্ষিকা

জেডএম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ