শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ ধর্মযুদ্ধ নয়; দু্ই প্রতিদ্বন্দ্বীর শক্তি পরীক্ষার লড়াই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

liaqat-aliফারুক ফেরদৌস : গত জুলাইয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর থেকেই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নজিরবিহীন বিক্ষোভ প্রতিবাদ অব্যাহত ভাবে চলছে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে শতাধিক নিহত এবং বহু আহত হয়েছে। এরমধ্যে চলতি মাসের ১৮ তারিখে কাশ্মীরের উরি সেনাঘাঁটিতে সশস্ত্র হামলায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহত হলে তাৎক্ষণিকভাবে ভারত অভিযোগ করে এ ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত। সাথে সাথে ভারতের সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন মহল থেকে পাকিস্তানকে দেখে নেয়ার হুমকি ধমকি আসতে শুরু করে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিলো পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী এবার বোধহয় সত্যি সত্যি লেগে যাবে। কিন্তু ধীরে ধীরে যুদ্ধের সম্ভাবনা দূরে সরে যাচ্ছে। তবু যুদ্ধের আশংকা এখনও রয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে কি যুদ্ধ বাধবে? যুদ্ধ বেধে গেলে সেই যুদ্ধ কি ধর্মযুদ্ধ হবে? চিন রাশিয়া কি পাকিস্তানের পক্ষে থাকবে? কাশ্মীরের ভবিষ্যতই বা কি? এসব প্রশ্ন নিয়ে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিলো, মাদরাসা দারুর রাশাদের শিক্ষা সচিব, সিনিয়র সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মাওলানা লিয়াকত আলীর সাথে।

পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে সত্যিই যুদ্ধ বাঁধবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলানা লিয়াকত আলী বলেন, ভারত পাকিস্তানের মধ্যে কোনো যুদ্ধ হচ্ছে না। পাকিস্তানে হামলা করার কোনো পরিকল্পনা ভারতের নেই। ভারতের হুমকি ধমকিগুলো নিছক বাগাড়ম্বর।

তিনি মনে করেন, কাশ্মীরের উরিতে সেনাঘাঁটিতে হামলার পেছনে আছে ভারতের ফরেইন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি ‘র’। কাশ্মীরের পরিস্থিতি থেকে বিশ্বের চোখ অপর দিকে ফেরানোর জন্যই ঘটনাটি ভারত নিজেই ঘটিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাগাড়ম্বর করছে। পাকিস্তানকে দোষারোপ করে পৃথিবীর দৃষ্টি কাশ্মীর থেকে সরানোই মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, যুদ্ধের দিকে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ভারতের নেই। পাকিস্তানও যুদ্ধ করতে চাইবে না। যুদ্ধ দুই দেশের জন্যই ক্ষতিকর হবে। যুদ্ধে না গিয়ে দুই প্রতিবেশী বরং কূটনৈতিক পর্যায়ে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করবে।

ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জিহাদি সংগঠন জৈশ ই মুহম্মদের প্রধান মাসউদ আজহারের বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে কোন যুদ্ধ বেঁধে গেলে সেটা ধর্মযুদ্ধ বা জিহাদ হবে কি না জানতে চাইলে এই ইসলামি চিন্তাবিদ বলেন, এই যুদ্ধ ধর্মযুদ্ধ বা জিহাদ হবে না। এটা আঞ্চলিক শক্তি পরীক্ষার লড়াই।

চলমান উত্তেজনায় বাংলাদেশের ভারতকে সমর্থন জানানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত পাকিস্তানের এই যুদ্ধাবস্থায় বাংলাদেশের উচিত ছিলো নিরপেক্ষ থাকা। তবে বাংলাদেশে যুদ্ধের খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি।

চলমান উত্তেজনায় চীন যে কোন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পাশে থাকার অঙ্গিকার করেছে। রাশিয়াও মনে হচ্ছে পাকিস্তানের সাথে আছে। এর আগে একাত্তরে ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধে চীন আমেরিকা পাকিস্তানের পক্ষে থাকলেও কার্যক্ষেত্রে তারা পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়নি। যুদ্ধ বেঁধে গেলে এবার চীন রাশিয়া কি পাকিস্তানের পক্ষে শক্ত অবস্থানে থাকবে? মাওলানা লিয়াকত আলী বলেন, একাত্তরের প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট এক না। তখন পরাশক্তিগুলো চাচ্ছিলো পাকিস্তান ভেঙ্গে যান। এখনকার লড়াইটা হবে শক্তি পরীক্ষার। পরাশক্তিগুলো এখানে অস্ত্রব্যবসা করে লাভবান হতে চাইবে। সেই উদ্দেশ্যেই একেকজন একেক পক্ষে থাকবে।

কাশ্মীরের দুরবস্থার শিগগির কোনো উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না লিয়াকত আলী। কাশ্মীরের একটা অংশ চীনের ভেতরেও আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চীন ভারতকে চাপে রাখতে কাশ্মীরের পক্ষে বক্তব্য দিলেও কার্যত তারাও চাইবে না কাশ্মীর স্বাধীন হোক। তাই স্বাধীনতার পথে কাশ্মীরের পথ অনেকটাই দুর্গম।

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ