শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


প্রতিটি মাদরাসায় কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে হবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

salauddin-jahangirসালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর

প্রতিটি কওমি মাদরাসায় কেন কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে হবে— ব্যাপারটা একটু খুলে বলি...

বাংলাদেশের মাদরাসাগুলো থেকে দাওরা পাশ করার পর, একজন আলেমের কর্মসংস্থান বলতে দুটো— মাদরাসায় শিক্ষকতা নয়তো মসজিদের ইমাম বা মুআজ্জিন। মোটাদাগে এটাই মাদরাসাপড়ুয়াদের সার্বিক কর্মের ক্ষেত্র।

কিছু ভিন্ন পেশা থাকতে পারে, তবে সেটা অপ্রতুল। আবার অনেকে নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্যও করে থাকেন, সেটাও বলার মতো সংখ্যক নয়।

মাদরাসা আর মসজিদই এখন পর্যন্ত কওমিপড়ুয়াদের একমাত্র কর্মক্ষেত্র। কিন্তু মাদরাসা-মসজিদের চাকরিতে যে বেতন ধার্য করা হয়, তা বর্তমান সময়ের হিসেবে নিতান্তই অপমানজনক। (আমাদের গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেবের বেতন সাকুল্যে তিন হাজার টাকা) এ পরিমাণ বেতন দিয়ে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাছাড়া তারা যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন, তা দিয়ে ভিন্ন কোনো পেশায় কাজ করাও সম্ভব নয়। আর তাদেরও বিকল্প কোনো ভোকেশনাল ট্রেইনিং নেই যে বিকল্প পেশার মাধ্যমে বাড়তি আয় করবেন। সুতরাং তাদের দিন গুজরান হয় মানুষের মুখাপেক্ষিতায়।

এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই আমার প্রস্তাব ছিলো— প্রতিটি মাদরাসায় একটি করে পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হোক। মাধ্যমিক ক্লাস থেকে প্রতিটি ছাত্রের জন্য কম্পিউটার শেখা বাধ্যতামূলক করা হবে। উচ্চতর ক্লাসের আগেই যেনো একজন ছাত্র কম্পিউটারের বেসিক জ্ঞান রপ্ত করে ফেলতে পারে।

মিশকাত-দাওরা ক্লাসে এসে ব্যবহারিক যেকোনো একটা সাবজেক্টে তাকে বিশেষ ট্রেইনিং দেয়া হবে। গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপিং, এ্যাপ ডেভেলপিং, রিভিউ বা এ্যাসে রাইটিং, এস ই ও ছাড়াও নানা ধরনের প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের যেকোনো একটা সাবজেক্টে একজন ছাত্রকে পারদর্শী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

দাওরাপাশ একজন ছাত্র যখন গ্রাফিক্স বা ওয়েব ডিজাইন বা ওয়েব ডেভেলপার বা এ্যাপ ডেভেলপার বা ফ্রিল্যান্সার হয়ে মাদরাসা থেকে বেরুবে, তখন তাকে আর চার হাজার টাকার চাকরির জন্য মসজিদ-মাদরাসায় দৌড়াতে হবে না। অথবা মসজিদ-মাদরাসায় চাকরির পাশাপাশিও সে এসব কাজে আউটসোর্সিং করে ভালো আয় রোজগার করতে পারবে। সামান্য বেতনের আশায় মাদরাসার মুহতামিম বা মসজিদের কমিটির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।

এসব টেকনিক্যাল সাবজেক্ট কোনোটাই ঈমান-আমলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। বর্তমান পৃথিবীর অনেক আলেম উলামা এসব কাজে সম্পৃক্ত আছেন। তাছাড়া এসব ক্লাস মাদরাসার নিয়মিত ক্লাসের ওপরও কোনো প্রভাব ফেলবে না। কেননা প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টার ক্লাস করলেই একজন ছাত্র উদ্দিষ্ট সাবজেক্ট রপ্ত করে ফেলতে পারবে।

এই সামান্য উদ্যোগ গ্রহণে কওমি মাদরাসাওয়ালারা উদ্যোগী হলে কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির আর প্রয়োজনই হবে না। স্বীকৃতির জন্য তখন সরকারের কাছে ধর্ণা দিয়ে বসে থাকতেও হবে না। বরং সরকার যখন দেখবে— প্রতিবছর কওমি মাদরাসা থেকে বিশ হাজার ছেলে আলেম হওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে বেরুচ্ছে, সমাজে আশাব্যঞ্জক কর্মসংস্থান তৈরি করে নিচ্ছে, তখন সরকার বাপ বাপ বলে এসে সনদের স্বীকৃতি দিয়ে যাবে।

কিন্তু কওমিয়ানরা যদি সেই চেয়ে-চিন্তে মানুষের মুখাপেক্ষী হয়ে বাঁচার পথকেই বেছে নেয়, লাখ লাখ মাদরাসাছাত্রের ভবিষ্যত কুরবানির চামড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়, জীবিকা নির্বাহের জন্য ঘুষখোর বেনামাজি কমিটির পা চাটাকেই নিজেদের তকদির বলে মেনে নেয়... তাহলে এর দায়ভার কেয়ামতের দিন তাদেরই বহন করতে হবে।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ