শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


প্রয়োজন ইসলামভিত্তিক সন্ত্রাসবিরোধী উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

nijami2আবদুল লতিফ নেজামী

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এখন টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড। শুধু বাংলাদেশ নয়, বলতে গেলে সারা বিশ্বই এখন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে বিপর্যস্ত। এই মারাত্মক ব্যাধিতে এখন সারাবিশ্বই আক্রান্ত।  সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার বিশ্ববাসী। বাংলাদেশসহ বিশ্বের শহর-বন্দরে পালিত হচ্ছে সন্ত্রাস বিরোধী সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন কর্মসূচি। গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরায় এবং শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে ভয়ংকর হামলার পর এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন মাঠে নেমেছে। এমনকি যারা এতোদিন কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি, তাঁরাও সন্ত্রাসবিরোধী সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে। গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরায় ও শোলাকিয়া ঈদগাহ  মাঠের অদূরে সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হওয়ার পর প্রচারণার ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। আগে যে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকা- সংঘটিত হলেই এর জন্যে দোষারোপ করা হতো ইসলামি দল, সংগঠন ও ব্যক্তিত্বকে। মাদরাসাকে জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রগলভ উক্তি করা হতো। বলা হতো মাদরাসা ‘ভয়ংকর বিপজ্জনক’। মাদরাসা সম্পর্কে তাদের এ ধরনের উক্তি যে জ্ঞানস্বল্পতারই পরিচায়ক তা এবার প্রমাণিত হয়েছে। মাদরাসা সম্পর্কে তাঁদের এ ধরনের উক্তি ও মন্তব্য যে সঠিক নয়, দেশবাসী এবার তা হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হয়েছেন।

ইসলামবিরোধী শক্তি এতোদিন ইসলামে জঙ্গিবাদ আবিষ্কার ও ইসলামপন্থিদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করে সমাজে ইসলামপন্থিদের হেয় প্রতিপন্ন করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামপন্থিদের প্রতি জনগণকে শত্রুভাবাপন্ন করে তোলা। তাছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বি বিবেচনায় জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী অভিযোগ এনে ইসলামপন্থিদের সমূলে ধ্বংস করাই তাদের মিশন। অথচ বিশ্বের নবপ্রজন্ম এখন ইসলামের দিকে ঝুঁকছে। যুবকশ্রেণিকে নীল আকাশের মতই চিরমুক্ত, চিরউদার, চিরনির্মল ইসলামের পতাকাতলে জড়ো হতে দেখা যাচ্ছে। বিশ্বায়নের সকল বেড়াজাল ছিন্ন করে ইসলামি আদর্শ পুনরায় জনগণকে নাড়া দিতে শুরু করছে। প্রবল প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে দেশে দেশে ইসলামের পতাকা হাতে জনগণ অগ্রসর হচ্ছে। ইসলামি চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণ বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বের নবপ্রজন্ম এখন ইসলামের দিকে ঝুঁকছে। যুবকশ্রেণিকে নীল আকাশের মতই চিরমুক্ত, চিরউদার, চিরনির্মল ইসলামের পতাকাতলে জড়ো হতে দেখা যাচ্ছে। বিশ্বায়নের সকল বেড়াজাল ছিন্ন করে ইসলামি আদর্শ পুনরায় জনগণকে নাড়া দিতে শুরু করছে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ইসলামি জাগরণ শুরু হয়। তখন থেকেই স্বাধীন হতে থাকে পরাধীন মুসলিম দেশগুলো। এই জাগরণ ছিল নীতি-নৈতিকতাহীন পুঁজিবাদী বিশ্বের শোষণ-পীড়ন-প্রতারণার বিরুদ্ধে এবং ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে। অন্যায়মুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার জন্যে। ইসলামি জাগরণ শুরু হয় পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে। সাম্রাজ্যবাদী, ফ্যাসিবাদী, প্রভুত্ববাদী, শোষণবাদী, আগ্রাসী, যুদ্ধবাজ ভূমিকার বিরুদ্ধে। ইসলামি জাগরণ বিশ্বায়নবাদীদের ঘৃণ্য আগ্রাসন থেকে আত্মরক্ষার জন্য দুর্বল দরিদ্র রাষ্ট্রসমূহকে নিজেদের আত্মশক্তির বিকাশ ঘটাতে চায়। বিশ্বায়নবাদিরা বিশ্বের শতকরা পাঁচ ভাগ লোকের স্বার্থ রক্ষায় অবশিষ্ট শতকরা পঁচান্নব্বই ভাগ লোকের প্রাপ্য লুটে নিচ্ছে। বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্রে ধনী-গরিবের বৈষম্য এবং অন্যায়-অবিচার ও সহিংসতা দ্রুত গতিতে বেড়ে চলছে। ধনী ও দরিদ্র রাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ও ক্ষমতাগত বৈষম্যও  দ্রুত বাড়ছে। অবাধ প্রতিযোগিতাবাদের মধ্যে ব্যক্তির সত্তা বিকৃত হওয়ায় মানুষ মানবিক গুণাবলী হারিয়ে ফেলছে। ইসলামি জাগরণের আরো কারণ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী চেতনাভিত্তিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র পরিচালনার কারণে সমাজে ঘুষ-দুর্নীতি ও মাস্তানদের অবাধ পদচারণার সুযোগ ঘটছে। অপহরণ-গুম-খুন-হাইজ্যাক প্রভৃতি অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়া। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থায় আজ ভেসে আসছে এসব অপরাধের শিকার মজলুমদের আর্তচিৎকার, আঘাত হানছে আকাশের দ্বারে উৎপীড়িতদের আহাজারী এবং সর্বত্র ধ্বণিত হচ্ছে নির্যাতিতের ক্রন্দনরোল। অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং অপসংস্কৃতির পথ প্রশস্ত হচ্ছে। অপসংস্কৃতির দুষিত জোয়ারে শুধু সুস্থ সংস্কৃতিই ধ্বংস হচ্ছে না বরং ভেসে যাচ্ছে চিরায়ত মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চরিত্র, ধর্ম ও আদর্শ। বিপন্ন হয়ে পড়ছে নৈতিক মেরুদ-। মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে নীতি-নৈতিকতায়। সর্বোপরি বিশ্বকে ধর্মনিরপেক্ষকরণের প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ায় বিশ্বের নবপ্রজন্ম ইসলামের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। পুঁজিবাদভিত্তিক ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের চরম ব্যর্থতার কারণেই ইসলামপন্থীদের উত্থান ঘটছে এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।

পশ্চিমা সভ্যতায় আজ ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বি। জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক, বর্বর, সন্ত্রাসী অভিযোগ এনে প্রতিদ্বন্দ্বি ইসলামধর্ম-প্রধান জনগোষ্ঠীকে শেষ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে এনজিও ও সিভিল সোসাইটি। বিশ্বায়নবাদীরা ইসলামি চিন্তার জগতে বিভ্রান্তি সৃষ্টির লক্ষে সৃষ্টি করে শিয়া-সুন্নি, কাদিয়ানি, বাহাইসহ ইসলামবিরোধী বিভিন্ন ফেরকা। আলেমসমাজ ও ফেরকাবন্দিদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে ইসলামি বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে তোলাই এর লক্ষ্য। শিয়া-সুন্নি দ্বন্ধ আজ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কাদিয়ানীবিরোধী আন্দোলনকারীরাও স্বক্রিয়। কেননা কাদিয়ানিরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. কে শেষ নবী মানে না। অথচ মহানবীকে শেষ নবী মানা ঈমানের অঙ্গ।

বিশ্বায়নবাদীরা ইসলামি চিন্তার জগতে বিভ্রান্তি সৃষ্টির লক্ষে সৃষ্টি করে শিয়া-সুন্নি, কাদিয়ানি, বাহাইসহ ইসলামবিরোধী বিভিন্ন ফেরকা। আলেমসমাজ ও ফেরকাবন্দিদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে ইসলামি বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে তোলাই এর লক্ষ্য। শিয়া-সুন্নি দ্বন্ধ আজ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

ইসলামের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রপাগা-া চালিয়ে ইসলামপন্থিদের জঙ্গি হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা চলছে। প্রতিদ্বন্দ্বি বিবেচনা করে জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী ইত্যাদি অভিযোগ এনে ইসলামপন্থিদের শেষ করে দেয়ার লক্ষে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশে আগ্রাসন চালানোর আবহ ও প্রেক্ষিত তৈরির লক্ষে বাংলাদেশে আইএস এর অবস্থিতি আবিষ্কারে ওঠেপড়ে লেগেছে বিদেশি শক্তি। বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দুদের সুরক্ষার(?) জন্যে ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে। ইসলামের বিরুদ্ধে এসব অপকৌশল অবলম্বন করা সত্ত্বেও ইসলামের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। তাই পশ্চিমা ইসলামবিরোধী শক্তি মুসলিমবিশ্বকে নেতাশূন্য করা এবং প্রভাবশালী মুসলিম দেশসমূহকে দুর্বল করার হীনপন্থা অবলম্বন করে। এই লক্ষে মানববিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করা হয়। টুইন টাওয়ার ধ্বংসে ওসামা বিন লাদেনের সম্পৃক্ততার অজুহাতে আফগানিস্তান আক্রান্ত  হয়। আধুনিক লিবিয়ার রূপকার মুয়াম্মার গাদ্দাফীকে খতম করে দেয়া হয়। সৃষ্টি করা হয় পূর্ব তিমুর। ভাগ করা হয় সুদানকে। লেবাননকে মুসলিম-খ্রিস্টান দুই ভাগে ভাগ করার পাঁয়তারা চলাছে। অথচ আজ বলা হচ্ছে ইরাক আক্রমণ ভুল ছিল। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ক্ষেত্রে বিন লাদেনের সম্পৃক্ততা ছিল না। মোয়াম্মার গাদ্দাফীকে হত্যা করাও সঠিক হয়নি। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন বলা হবে ইসলামপন্থিরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের জন্যে দায়ী নয়। যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর। (আগামী পর্বে সমাপ্ত)

লেখক : ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ