বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


মুসলিম জনগোষ্ঠীর আচরণ আর ইসলাম এক জিনিস নয় : আল্লামা মাহমূদুল হাসান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

0123 copy

আল্লামা মাহমূদুল হাসান। দেশের শীর্ষ আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদ, মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমির, গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদের খতিব, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে যাত্রাবাড়ি জামিয়ার প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। লিখেছেন শতাধিক গ্রন্থ। এছাড়াও তার কর্মগত পরিচয় বহুবিধ। কখনোই সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করা এই বরেণ্য আলেম গভীর চিন্তাশীল, অত্যান্ত দূরদর্শী ও কোশলী হিসেবে সমধিক পরিচিত। এই সময়ের আলোচিত বিষয় ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন- রিদওয়ান হাসান।

-আমরা তো জানি যে, ইসলাম শান্তির ধর্ম কিন্তু ইসলামের নামে যে জঙ্গিবাদী তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে, এ ব্যাপারে আপনি কী বলেন?

আল্লামা মাহমুদুল হাসান : এক লোক আমাকে প্রশ্ন করেছিল, ইসলাম তো রক্তারক্তির ধর্ম, তা শান্তির ধর্ম হলো কিভাবে? আমি বললাম, একথার দলিল কী?প্রমাণ দেন। এরপর সে বলল, হযরত উমর, উসমান, আলী প্রত্যেকের যুগই তো রক্তাক্ত। এমনকি প্রত্যেকের মৃত্যুও হয়েছে রক্তারক্তির। তাহলে ইসলাম শান্তির ধর্ম হয় কি করে? আমি তাকে বললাম, আপনার প্রশ্ন ইসলামের ওপর নাকি মুসলমানের ওপর? আপনি পারলে ইসলামের একটি ত্রুটি দেখান। ইসলাম বলে আল্লাহ এক, দুই মানা যাবে না। ইসলাম বলে কোরআন মানতে। কোরআনের পথেই রয়েছে মানবতার চূড়ান্ত শান্তি। যে কোরআন একত্ববাদের কথা বলে। মানুষের জান-মাল, ইজ্জত-আবরুর শিওরিটি দেয়। আপনি সেই কোরআনের আয়াতে বা তার বিধানে কোনো ত্রুটি দেখান। একজন আলেম, হাফেজ, মুফতি কিংবা মুহাদ্দিসÑসে যদি নামায না পড়ে, সেটা কি ইসলামের দোষ? মুসলিম জনগোষ্ঠীর আচরণ আর ইসলাম কি এক জিনিস? কখনোই নয়। আমাদের দেশের অবস্থাও আজ এরূপ দাঁড়িয়েছে। কতিপয় লোক ইসলামকে অশান্তি ও সন্ত্রাসের ধর্ম বলে প্রমাণ করতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর আচার-ব্যবহারকে ইসলাম বলে চালিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণে তারা মুসলমান ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দিচ্ছে সন্ত্রাসবাদ। মুসলমানকে সন্ত্রাস সাজানোর এ অপচেষ্টা আজকের নয়। বহুকাল থেকে চলে আসা এ ষড়যন্ত্রে তারা বারবার চপেটাঘাত খেয়েছে। তাই ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
আমি মনে করি, মুসলমানের উচিত মানুষ যাই বলুক অন্তত মুসলমান যেন ইসলামকে সন্ত্রাসের ধর্ম না বলে। কারণ সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের মুখ থেকে মিথ্যার চর্চা হতে থাকলে একটা সময় সেটা সত্য বনে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হোক তা কথিত। কিন্তু ইসলামের সাথে সন্ত্রাস শব্দটি জুড়তে পারাটাও একপ্রকার তাদের সার্থকতা।

-ইসলামের জিহাদ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?আর ইসলামের জিহাদ আর বর্তমানের সন্ত্রাসবাদ কি একই জিনিস?

আল্লামা মাহমুদুল হাসান : জিহাদ শব্দের অর্থ ও তার প্রয়োগে আমরা প্রায়ই গলদ করে থাকি। মূলত ইসলামের বিজয় হয়েছে জিহাদের মাধ্যমে। অনেক বিধান যুগপরবর্তীতে রহিত হলেও ইসলামের এই জিহাদ এখনও আছে। কিন্তু ইসলামের শত্রুরা তাদের মিশনে এই ‘জিহাদ’ শব্দটিকে চয়ন করেছে। তারা অপব্যাখ্যা করে এর অর্থ দাঁড় করিয়েছে মারামারি করা। ফলশ্রুতিতে তারা জিহাদের নামে গুপ্তহত্যা করে, আতর্কিত ও আত্মঘাতি হামলা করে, রেস্তোরা এ্যাটাক করে, গলা কেটে মানুষ নিধন করে, সন্ত্রাসী করে এসব ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ। বস্তুত একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য পুলিশ তো বটে, এছাড়াও অন্যান্য প্রতিরক্ষাবাহিনী যেমন রয়েছে। সীমান্ত পাহারায় আরেক দেশের নাগরিক যেন আগ্রাসনী হাত না বাড়ায়, এজন্য রয়েছে বর্ডার গার্ড। রাষ্ট্রের ভাষায় এ প্রতিরক্ষামূলক কাজের নাম যুদ্ধ। আমাদের এদেশও স্বাধীন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ যুদ্ধ একটি সাংবিধানিক ব্যাপার। সংবিধানমতে এদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য সদা প্রস্তুত। এজন্য তাদের যুদ্ধ ও রণাঙ্গনের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। তাদেরকে তো সন্ত্রাসী বলা হয় না। কারণ, তারা জাতির জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য যুদ্ধ করে। এ জাতীয় যুদ্ধের নাম ইসলামে জিহাদ বলে খ্যাত। এটাই সর্বসম্মত মত। দেশ ও জাতি রক্ষার জন্য যেমন সামরিক বাহিনী থাকে, তেমনি ইসলাম তার আদর্শকে টিকিয়ে রাখতে, ইসলামের নাগরিকদেরকে রক্ষা করতে কিংবা মুসলিম রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য যে সর্বজনীন যুদ্ধ হয়, তাকে ইসলাম জিহাদ বলে। তবে জিহাদে একটি শর্তসাপেক্ষ ব্যাপার আছে, তা কেবল ইসলামের কোনো আইনবিরোধী কাজের প্রতিবাদে হয়ে থাকে। কারণ জিহাদের লক্ষ্যবস্তু একটাই, ইলায়ে কালিমাতুল্লাহ বা আল্লাহর মালিকানা সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করা। এজন্য বলা হয়ে থাকে, ‘ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ’–কার্যকরী বিধান একমাত্র আল্লাহর। সুতরাং ক্ষমতার মসনদ দখল, ধন-সম্পদ ও অর্থ উপার্জন আর রূপসী নারী পাওয়ার জন্য জিহাদ নয়। সে যুগে নবীয়ে রহমত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও ক্ষমতার মসনদ, ধন-সম্পদের প্রাচুর্য ও রূপসী নারীর প্রস্তাব করা হয়েছিল, রাসূল তা আল্লাহর হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এজন্য দরদ, মুহব্বতের ও হেকমতের সাথে আল্লাহর হুকুম মানুষের কাছে পৌঁছানো রাসূলের আদর্শ। যারা এই আদর্শ মানে না, তারাও নবীর উম্মত। তাদেরকে প্রাঞ্জলভাষায় নবীর আনুগত্যের আহ্বান করতে হবে। যদি তারা বিরোধিতা করে কিংবা ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টা করে, প্রয়োজনে জিহাদ হবে। যেটিকে সর্বজনীন যুদ্ধ বলে।
আমি মনে করি, আমাদের উচিত শব্দ বিভ্রাট থেকে সতর্ক থাকা। সন্ত্রাসকে জিহাদ নামে চালানোর জন্য একদল শুরু থেকেই মাঠে কাজ করে যাচ্ছে, তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। ইসলামে সন্ত্রাসবাদিতার কোনো স্থান নেই। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যেমন প্রতিরক্ষাবাহিনী আছে। যুদ্ধ আছে। মুক্তিযোদ্ধা আছে। তেমনি ইসলামেরও একটা সার্বভৌমত্ব আছে। আদর্শ আছে। সুতরাং মুসলিম রাষ্ট্রে ইলায়ে কালিমাতুল্লাহর জন্য রয়েছে জিহাদ। এই জিহাদের অর্থ মোটেই সন্ত্রাস নয়। কিন্তু কিছু লোক জিহাদের কথা বলে, ইলায়ে কালিমাতুল্লাহর দোহাই দিয়ে, বেহেশতে যাওয়ার আশা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসিকতা সৃষ্টি করছে। যাতে প্রচার হয়ে যায় ইসলাম সন্ত্রাসী ধর্ম, শান্তির ধর্ম নয়। অথচ জিহাদকে কোনোভাবেই সন্ত্রাসবাদিতার সাথে তুলনা করা সিদ্ধ নয়।

-জঙ্গি তৎপরতার মোকাবিলার অংশ হিসেবে সরকার মসজিদে নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ ব্যাপারে আপনি কী বলেন?

আল্লামা মাহমুদুল হাসান : অনেক সময় ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল শব্দ ও ভাষার প্রয়োগের কারণে আমরা বিভ্রান্তির শিকার হই। যেমন, নজরদারি। আমার মতে, মসজিদে নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আমাদের শব্দ ও ভাষাগত ভুল আছে। কারণ, বাংলাদেশে ‘নজরদারি’ একটি পরিভাষা। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে নজরদারি হয় চোর-ডাকাতের। ইমাম-খতিবের আবার কিসের নজরদারি? কিন্তু প্রকৃতপ্রস্তাবে মসজিদে এ জাতীয় নজরদারি উদ্দেশ্য নয়। সম্ভবত এখানে নজরদারির অর্থ, ইমাম-খতিব সাহেবরা ভালো। মুসল্লিরাও ভালো। আল্লাহর ঘর মসজিদ থেকে শুধু সন্ত্রাসবাদ নয়, সব ধরনের অন্যায়-অনাচার ও গোনাহের বিরুদ্ধে বয়ান করা হয়। কিন্তু ভালোর আস্তানায় মন্দেরা আশ্রয় নেয়। ঈদগাহের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের মতো জঘন্য কাজ এদেশে হচ্ছে। ইসলামের নামে এ ধরনের কাজ মসজিদেও হতে পারে। এ কারণে ইমাম-খতিব সাহেব আপনারা সতর্ক থাকবেন। মুসল্লিরাও সতর্ক থাকবেন। আর ইমাম-খতিব আপনারা বয়ানের মাধ্যমে মুসল্লিদেরকে সতর্ক রাখবেনÑ আমার মতে এটাই ছিল নজরদারির প্রকৃত অর্থ। যদি নজরদারির এই অর্থ হয়ে থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু নজরদারি নিয়ন্ত্রণের অর্থে হলে এটা সরকারের ভুল হবে। এর আগেও এমন পদক্ষেপ নিয়ে সরকার অনেক সমালোচিত হয়েছেন।

-ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক যে খুতবা নিয়ন্ত্রণের একটি নমুনা তারা দিয়েছে, এটির ব্যাপার আপনার কী অভিমত?

আল্লামা মাহমুদুল হাসান :মূলত খুতবার ফরজ আছে, ওয়াজিব আছে, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ ও মুস্তাহাব আছে। জুমার দিন জোহরের চার রাকাতকে দুই রাকাত করা হয়েছে এ খুতবার কারণে। তাই খতিব সাহেব যখন খুতবা দিতে মিম্বারে উঠবেন, মুসল্লিদের তখন কথা বলা নিষেধ। এমনকি লাইন ঠিক করুন কথাটাও বলা যাবে না। খুতবার ভেতরে বাইরের কোনো শব্দ আনা যাবে না। খুতবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত রয়েছে। সাহাবা ও তাবেয়ীন এবং যুগে যুগে ওলামা-মাশায়েখদের বর্ণিত খুতবা রয়েছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ ইমাম-খতিবদের নেই। খুতবাতে এমন কথা বলতে হবে, যেটা ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব। কিন্তু বলা হচ্ছে, সরকার খুতবা নিয়ন্ত্রণ করবে। এটিও একটি ভাষাগত ভুল। খুতবা আবার কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে? সূরা ফাতিহা কি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? আমলের দিক দিয়ে নামাযের মধ্যে সূরা ফাতিহার যেই মর্যাদা, খুতবারও একই মর্যাদা। খুতবা না দিলে জুমার নামায হবে না। তাই এসব আমলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কেন, কেউ হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
আমার মতে, খুতবা যেহেতু আরবিতে হয়। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ লোক আরবি খুতবা বুঝে না। তাই এতে নিয়ন্ত্রণেরও কিছু নেই! খুবসম্ভবত এখানে খুতবা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আরবি খুতবার পূর্বে প্রদত্ত বাংলা বয়ান। তাতে কী বলবে, এজন্য সরকার শ্রদ্ধেয় খতিবদেরকে একটি নমুনা পাঠিয়েছে। এটাই বাধ্যতামূলক এমনটিও নয়। আমি মনে করি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উচিত ছিল, খুতবা শব্দের উল্লেখ না করে বয়ান শব্দের উল্লেখ করা। কারণ, বাংলা বয়ান আর আরবি খুতবা এক নয়। আরবি খুতবায় ইমাম-খতিব সাহেব নির্দিষ্ট ছকের বাইরে যেতে পারেন না। অতএব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের খুতবা তৈরি ও বিতরণ কোনো অর্থ রাখে না। তার ওপর সে নমুনা খুতবায় রয়েছে ভাষা ও সাহিত্যগত প্রভূত ভুল। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনখুতবার পূর্বে বাংলা বয়ানের জন্য কোনো বিষয়বস্তু প্রস্তাব করতে পারে, তবে আরবি খুতবায় হাত দেয়া তাদের কাজ নয়। কারণ এটি জুমার নামাজের অংশ এবং ইবাদত।

-ইসলামের নামে বিভ্রান্তি থেকে মানুষ কিভাবে মুক্তি পেতে পারে?

আল্লামা মাহমুদুল হাসান :আমি মনে করি, ইসলামি শিক্ষা জনমনে ছড়িয়ে দিতে পারলেই এসব জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ধূলিৎসাত হয়ে যাবে। কারণ ইসলামে সর্বাধিক গুরুত্ব হলো শিক্ষার। শিক্ষা হলো শক্তি। সঠিক শিক্ষা মানুষকে চরিত্রবান করে তোলে। এজন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াতে এসে বলেননি, আমি রাসূল হিসেবে এসেছি। যদিও বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, আমি রাসূল প্রেরণ করেছি কিন্তু সেই রাসূল নিজেই বলেছেন, আমি শিক্ষক হয়ে এসেছি, আমি মানুষের চরিত্র সংশোধন করার জন্য এসেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবী হওয়ার পর তাকে নামায-রোজা বা অন্যান্য ইবাদতের আদেশ দেয়া হয়নি। তাঁকে বলা হয়েছেÑ পড়–ন আপনার প্রতিপালকের নামে। সুতরাং শিক্ষা ও জ্ঞানের মাধ্যমে নবুওয়তের সূচনা হয়েছে।
তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির মূলে রয়েছে ধর্মীয় শিক্ষা অনুশীলনের অভাব। ফলে মানুষের মধ্যে নৈতিকতা ও মানবতার চরম অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে। কাজেই আমাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর একথার ওপর জোর দিতে হবে। এদেশ শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ। এখানে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের শিক্ষা থেকে বিশ্বাস জন্ম হয়। আর এ বিশ্বাসের মাধ্যমে মানুষ কর্মসূচি বাস্তবায়নে শক্তিশালী হয়। তাই প্রথমে আমাদের দেখতে হবে, জাতীয় শিক্ষানীতি ও পাঠ্যসূচিতে কোনো পয়জন আছে কিনা, সন্ত্রাসী শিক্ষার সুযোগ আছে কিনা, থাকলে সেই পয়জন ও সন্ত্রাসী শিক্ষা দূর করার প্রয়োজন আছে কিনা, সবশেষে এতে ইসলামি শিক্ষা অনুশীলনযোগ্য কিনা, সেটাও দেখতে হবে এবং শিক্ষানীতি ও পাঠ্যসূচিতে সংশোধন আনতে হবে।

-আরেকটি কথা, সরকারের পক্ষ থেকে ইমাম-খতিবদের খুতবা সংশ্লিষ্ট নোটিশকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

আল্লামা মাহমুদুল হাসান : বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাহেব কিছুদিন আগে আমার এখানে (যাত্রাবাড়ি মাদরাসার খতমে বোখারী অনুষ্ঠানে) এসেছিলেন। এখানে এসে তিনি ঘণ্টা দুয়েক বসে থেকে আমার কথা শুনেছেন। বিগত সময়ে দেখা গেছে, মসজিদ-মাদরাসার কেউ হলেই তাকে মনে করা হত জঙ্গি বা সন্ত্রাসী। কোথায় মাথা উঁচু করে চলতে পারত না আলেম-ওলামারা। কিন্তু সেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার সামনে নিজেই বললেন, এসব জঙ্গিপনা আলেম-ওলামাদের কাজ নয়। এসবের সাথে মাদরাসা-মসজিদের সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রধানমন্ত্রীও একই বক্তব্য দিয়েছেন অনেক জায়গায়। এসব কথা স্পষ্ট বলার পরে বর্তমান সরকার ইমাম-খতিবদেরকে খুতবা সংশ্লিষ্ট অনুরোধ করতেই পারেন।
তবে সরকারের জন্য ক্ষতি হয়Ñএমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা বা শ্রদ্ধেয় ইমাম-খতিবদের ব্যাপারে কঠোর মন্তব্য করা কারো পক্ষেই উচিত হবে না। দেশের ইমাম ও ওলামায়ে কেরাম অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিপক্ষে ছিলেন, আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। তাদের হেনস্থা বা অপমান করে কোনো ভালো ফল পাওয়া যাবে না। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, তাদের আস্থায় রেখে ইতিবাচক সহায়তা নিয়েই সন্ত্রাস ও পাপাচার দূর করতে হবে।

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ