শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


স্বীকৃতির নামে আলেমদের শেকল পরানোর চেষ্টা হচ্ছে : আহমদ শফী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

Befaque- Pic (1)আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশ ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) সভাপতি ও হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকসহ শিক্ষার বিভিন্ন স্তর থেকে ইসলামী শিক্ষা ও মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক বিষয়াবলি বাদ দিয়ে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদের বিষয়াবলি যুক্ত করেই সরকার থেমে থাকেনি, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৬-এর মাধ্যমে তারা ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস এবং সনদের স্বীকৃতির নামে আলেমদের শেকল পরাতে চাচ্ছে।

গত সোমবার ২২ আগস্ট বাংলাদেশ ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে বোর্ডের সভাপতি ও হেফাজত আমীর আল্লামা আহমদ শফী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা সব মহলকে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই যে, ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি ও বিদ্যমান স্কুল পাঠ্যপুস্তক সংশোধন এবং প্রস্তাবিত বিতর্কিত শিক্ষাআইনের বিষয়ে আমাদের উত্থাপিত দাবী-দাওয়া পূরণ না করা পর্যন্ত ক্বওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করারও কোনই সুযোগ নেই।

আহমদ শফী বলেন, আমাদের সকলকেই এ বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে যে, যারা সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক বিষয়গুলো বাদ দিয়ে নাস্তিক্য ও হিন্দুত্ববাদের বিষয় সন্নিবেশিত করে এ দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শ বিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলেছে, তারা আলেম সমাজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার কতটা প্রকৃত কল্যাণকামী হতে পারে! মূলতঃ স্বীকৃতির নাম দিয়ে তারা ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষার স্বকীয়তা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট বিনাশ করে এই দেশে ইসলামী শিক্ষার সর্বশেষ এই অবলম্বনটাকেও ধ্বংস করে দিতে চায়। তাদের এই অপতৎপরতা উলামা-মাশায়েখ, মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র ও তৌহিদী জনতা কখনোই সফল হতে দিবে না। মনে রাখতে হবে, ক্বওমি মাদ্রাসার অর্থই হচ্ছে, জনগণের মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসাসমূহ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থে চলে না, জনগণই সরাসরি এসব মাদ্রাসা পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত। ইসলাম বিরোধী বহুমুখী ষড়যন্ত্রের কঠিন এই সময়ে ক্বওমী আলেমদেরকে নীতি-আদর্শের উপর সীসাঢালা প্রাচীরের মতো মজবুত থাকতে হবে। দেওবন্দী উসূলের বাইরে কোনভাবেই কদম রাখা যাবে না।

হেফাজত আমীর আরো বলেন, আলেমদেরকে আবেগ দিয়ে নয়, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা দিয়ে দুনিয়াবী মোহের ঊর্ধ্বে ক্বওম ও মিল্লাতের স্বার্থকে সামনে রেখে কথা বলতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্বওমি মাদ্রাসাসমূহ সরাসরি জনগণের সাহায্য সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। সঠিক ইসলামী শিক্ষার প্রচার প্রসারের জন্যেই মানুষ অকুণ্ঠ চিত্তে এসব মাদ্রাসাকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। সুতরাং যে কোন উক্তি, বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত নিতে দুনিয়াবী খ্যাতি, মোহ ও স্বার্থের বিষয়ে আত্মত্যাগী হয়ে ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসার এবং মুসলিম জাতিসত্ত্বার চেতনাবোধকে সমুন্নত রাখার বিষয়টাকে প্রাধ্যান্য দিতে হবে। মুসলিম জনসাধারণ আমাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আসছে দ্বীনের বিষয়ে আমাদের বস্তুনিষ্ঠ ও ত্যাগী নীতি আদর্শের কারণে। বেফাক সভাপতি এ পর্যায়ে কতিপয় দরবারি আলেমের নানা ধরনের লোভনীয় টোপ ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নাস্তিক্যবাদি চক্র ক্বওমি আলেমদের উপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসকে বিনষ্ট করার জন্য একের পর এক ফাঁদ পেতেই যাবে। আমরা নীতি-আদর্শে ঐক্যবদ্ধ ও অটল থাকতে পারলে তারা কখনোই সফল হবে না। তিনি বলেন, আমরা ক্বওমি সনদের স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করছি না। তবে ইসলাম বিরোধী শিক্ষা আইন, নাস্তিক্যবাদি ও হিন্দুত্ববাদি চেতানার স্কুল পাঠ্যবই, বিতর্কিত শিক্ষা আইন এবং শিক্ষা বিভাগের নীতিনির্ধারণী ও গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে একটি বিশেষসম্প্রদায়ের লোকজনের প্রাধ্যানতার বিষয়ে আমাদের যৌক্তিক দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্বওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে আলোচনার কোনই সুযোগ নেই। কারণ, এসব বিষয়ে সমাধানে না পৌঁছালে শুধু জাতীয় পর্যায়ে ইসলামী চেতনাবোধ বিলীন করার ষড়যন্ত্রই বাস্তবায়িত হবে না, পাশাপাশি ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষার স্বকীয়তা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকেও মারাত্মক হুমকির মুখে ঠেলে দেবে।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী স্পর্শকাতর যে কোন বিষয়ে মতামত দেওয়ার আগে আলেম সমাজকে বিচক্ষণতা ও সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতী ওয়াক্কাস, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, বেফাক মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জাব্বার জাহানাবাদী, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা মুফতী ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা মঞ্জুর মুজিব, বেফাক বোর্ডের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতী আবু ইউসুফ, মাওলানা মুনির আহমদসহ প্রায় শতাধিক ক্বওমি মাদ্রাসা শিক্ষক কর্মকর্তা।

বেফাকের বৈঠক থেকে অবিলম্বে ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল, নাস্তিক্যবাদি ও হিন্দুত্ববাদি বিদ্যমান স্কুল পাঠ্যবই সংশোধন করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও নীতি-আদর্শের প্রতিফলন হয়- এমন বিষয় সন্নিবেশিত করা এবং প্রস্তাবিত শিক্ষাআইনের বিতর্কিত ধারাসমূহ বাতিলের দাবী জানানো হয়। পাশাপাশি নিবন্ধনের নামে দেশের কোন ক্বওমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে হয়রানী না করার জন্যে সরকারের প্রতি জোর দাবী জানানো হয়।

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ