শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ’র তিনটি কবিতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

smkk

শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহঃ আওয়ার ইসলাম

পবিত্র পাপের পঁয়ত্রিশ বছর

নিঃসঙ্গ অলসতার মাঝে ডুব দেয় যে পঞ্চদশী চাঁদ
স্বপ্নখেকো কালোমেঘের অশুভ আড়াল-অস্তিত্বে,
তেমনি অর্থহীনতায় সহস্র বছরও আমি বাঁচতে চাই না
বাঁচতে চাই না জনপদ ছেড়ে গভীর অরণ্যে জপতপ করে।

আসঙ্গ আলস্যে যদি কেটে যায় সঙ্গীহীন শতাব্দী দিন
গভীর নির্জনতার কলকাকলি মুখর অন্তর্লীন মুহুর্তে,
যখন অনায়াসে বারো বছরের একটি বালক টুপ করে
ঢুকে পড়ে আমার অস্তিত্বের ভেতর, এবং
হরমোন পরিবর্তন ছাড়াই অন্তর্ধান হয়ে যায়
আমার শ্মশ্রুমণ্ডলি, তখন-
অর্থহীনতার গভীর অনুভবে আমি এক বিস্ময়বালক!
আমার পঁয়ত্রিশোর্ধ মুখটি লুকিয়ে দুধ খেয়ে ধরা পড়া
অপরাধী কিশোরটির মত পবিত্র লাল দেখাচ্ছে এখন।
স্নেহময়ী মা'র সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছি ক্ষমাপ্রার্থী ভঙিমায়
আমার চোখমুখে ফুটছে সহাস্যে লক্ষ তারার লাজুক ফুল।

এ-ই বিশুদ্ধ সুন্দর আমাকে, আমি দেখছি তৃতীয়চোখ ভরে
কালির কলুসহীন অপ্রাতিভাসিক সত্তার বিশুদ্ধ পোট্রেটে,
কেনো ফিরে যাবো বলো রঙচটা প্রাতিভাসিক পঙ্কিলতায়
কাটুকনা কিছুটা সময় পবিত্র পাপের পঁয়ত্রিশ বছরে।

 

সার্ত্রের সহোদরা

আমাকে অন্ধকারের অভিযাত্রী ভেবে তোমার আফসোস
অর্থহীন অভিমান, অবজ্ঞা আর উষ্মায় আবর্তিত হচ্ছে।
আমার সানুভব অন্ধকারের যৌক্তিক দীপশিখা
অতলান্তিক সাগরেরও তলদেশস্পর্শী
তবুও অস্বীকৃতির শূন্যগর্ভ মানবতাবাদী ভঙিমায়
অটল তুমি স্বয়ংসিদ্ধা রমণী
যেন ছ'দানবের প্রেমিকা।

আসলে চার্বাকতত্ত্বই তোমার চলমান জীবনের চাকা
স্টুয়ার্ট মিল নয়, আত্মসুখবাদী বেন্থামই তোমার পূজনীয়।
তোমার সত্যিকার শুভকামী আমার মানবিক দর্শন
এজন্যই বারবার অন্ধকার অভিধায় অভিযুক্ত হয়েছে,
অথচ অভিজ্ঞতার এ রহস্যপুরীই প্রজ্ঞার পাঠশালা
মানবিক আলোর জ্যোৎস্নাযাত্রায় মহাজাগতিক প্রাণ।

অন্ধকার নামক এ সংশয় অন্ধকার কবরে আলো জ্বালে
যেমন আলোয় রেখেছিল মাতৃগর্ভে দশ মাস দশ দিন।
সঘন অন্ধকারের গহীনে এ কোন্ আলোর প্রকল্প-প্রক্ষেপ,
ভেবেছো কখনো?

তোমারও আছে অন্ধকারের অন্তরঙ্গ অভিজ্ঞ-অধ্যয়ন,
ছিলে কোথায়, যাবে কোথায় আবশ্যক এ অনাবশ্যক তত্ত্বে
তবু তুমি বরাবর ঠোঁটকাটা অস্তিত্ববাদী
যেন সার্ত্রের সহোদরা।

 

কোলাহল ক্লান্তি ও কাঁঠালপাকা দিন

গ্রীষ্মের এই বিষন্ন দুপুরে আমার ভেতরের মানুষটি
যখন বিবাগী পাখিটির মত উড়ছে আকাশে, আর
আতিপাতি করে খুঁজছে কাঁঠালপাকা দিন,
বৃক্ষের গোপন ডালে বসে যখন বউ কথা কও পাখিটি
ডাকছে সারাটি রাতদিন নির্ঘুুম ক্লান্তিহীন
তখন আমার নাগরিক দিনগুলোও গলে যায়
গ্রীষ্ম-ভেজা কিষাণীর মতই।
আমি চলে আসি বোরোধানী বিলের পারে
এক সরস কিষাণী কুটিরে।

হিজলের ছায়ায়, কিষাণী দাওয়ায় আমি ফিরে এসেছি
ক্লান্ত প্রাণ এক আধুনিক নগর-জীবনানন্দ,
ধানসিঁড়ি নদী কিংবা কপোতাক্ষ নদ পেরিয়ে
আমি তো এইখানে মৃতপ্রায় বুড়িবরাক নদীর হাঁটুজল হেঁটে
তোমার সোঁদা মৃত্তিকার মায়ায় ফিরতে চেয়েছি
জণ্মান্তরের কিষাণী আমার!

কিন্তু হায়! অন্তহীন বিষন্নতার ভ্যাপসা বিন্দুগুলো
আকাশ থেকে চুইয়ে পড়ে নিস্তরঙ্গ বিলের জলে যেমন
হারিয়ে যায়
তেমনি তোমার দাওয়ায় এক আধুনিকোত্তর জীবনানন্দের ফিরে আসার সর্বাত্মক প্রচেষ্টাটিও
নাগরিক কোলাহলে নিরন্তর হারিয়ে যায়।

 

এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ