বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫


ইমামতি ছেড়ে আতরবিক্রি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

imamআহসান শরিফ : কুরআনের সান্নিধ্যপ্রাপ্ত নিভৃতচারী একজন মানুষ মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। বয়স সত্তর। ভাণ্ডারিয়া, ফিরোজপুরে তার জন্ম। বাবা মৌলভী নূর মুহাম্মদ হাওলাদারের উত্তম চরিত্র, নেক আমল, পড়াশোনা এবং সুন্দর আচরণের প্রভাব পড়ে জয়নালের ওপর। পড়াশোনার অদম্য আগ্রহে জয়নাল নোয়াখালী রামগঞ্জের মিরার হাট মক্তবে ভর্তি হন। হিফজ পড়ে সেখান থেকে শরিয়তপুর নড়িয়ার মুলফতগঞ্জে আসেন। মুলফতগঞ্জে প্রাথমিক কয়েকটি ক্লাস পড়ে আবার নোয়াখালী টুমচরে যান। টুমচরেই কামিল পাশ করেন। দীর্ঘ এতো বছরে পড়াশোনার ইতিহাসও ভালো করে বলতে পারেন না জয়নাল।

সরল প্রকৃতির আল্লাহপ্রেমী মানুষটির কর্মজীবন শুরু হয় ইমামতি দিয়ে। বাঘের হাট মরেলগঞ্জ রেজিষ্ট্রি অফিস জামে মসজিদ, বরিশাল সিএনবি রোড জামে মসজিদ এবং বাগানবাড়ি জামে মসজিদ-এ তিনি ৪৫ বছর ইমামতি করেন। ৬০ টাকা বেতনে ইমামতি শুরু করেছিলেন, পরে ৩ হাজার টাকা বেতনে এসে চাকরি ছেড়ে দেন। পাবলিক ফাংশান তার আর ভাল লাগে না। খুসুখুজু বা একনিষ্ঠতার সঙ্গে নামাজ পড়তে না পারায় তিনি ইমামতি ছেড়ে দেন। মুসল্লিদের তাড়াহুড়ো আর মসজিদের বন্ধিজীবন তার কাছে অসৈয্যকর।

দীর্ঘ ইমামতির জীবনে বহু মসজিদ এবং মক্তব তার হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সে মসজিদ মক্তবগুলোর রঙ বদলে গেছে। সেগুলো এখন বড় প্রতিষ্ঠানের রূপ নিয়েছে। রঙ বদলেনি জয়নালের জীবনে। তবুও দিনে এনে দিনে খাওয়া এ মানুষটি এতে অসন্তুষ্ট নন। আল্লাহর ফয়সালায়ই কল্যাণকর মনে করেন তিনি।

সত্তর বছরের জয়নাল এখন একজন আতর বিক্রেতা। জোহর, আছর এবং এশার নামাজের পর মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে আতর বিক্রি করেন। ফজর এবং মাগরিবের পর আতর বিক্রিতে যান না। এ সময় লিপ্ত থাকেন আমলে। ফজরের পর এক ঘণ্টা দোয়া দরুদ পড়ে বসেন কুরআন তিলাওয়াতে। দীর্ঘ সময় কুরআন তিলাওয়াত করেন। এ যেন আল্লাহর সঙ্গে বান্দার কথোপকথনের অপূর্ব দৃশ্য। এ সময়ে ফোন বা অন্য কোন ড্রিস্ট্রার্ব তার অপছন্দ। সকাল এগারাটা থেকে প্রস্তুতি নেন আতর বিক্রিতে যাবার। সারাদিন বিক্রি করে পান ২ থেকে ৩ শ টাকা। এতেই তিনি সন্তুষ্ট।

৪ ছেলে ৭ মেয়ের একজন সফল বাবা জয়নাল। প্রথম স্ত্রী মারা যাবার পর আরেকটি বিয়ে করেন তিনি। প্রথম স্ত্রীসহ ৭ ছেলে-মেয়ে কোরআন হিফজ করেছে। বাকি ৪ জনও মাদ্রাসায় পড়ছে। বড় ছেলে আমিনুল ইসলাম বহু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কার পেয়েছে। বর্তমানে হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশন ফিরোজপুর জেলা সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম। জয়নাল বলেন, ‘টাকা না থাকলে কি, আমি গরিব না, আমার মনে শান্তি আছে। আমি সারাজীবন আল্লাহর কাছে নেক সন্তান চেয়েছি। আল্লাহ আমাকে নেক সন্তান দান করেছেন। এরচে সুখের আর কী আছে!

তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ., ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মুকিত রহ. এবং মাওলানা মুনির আহমদ রহ.সহ অনেক বুযুর্গের ঘনিষ্ঠবাজন ছিলেন জয়নাল। এ সব আল্লাহওয়ালার সান্নিধ্য তিনি ভুলতে পারেন না।

মুফাক্কিরে ইসলাম মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. দেখে একবার বুকে টেনে নিয়েছিলেন। সে স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারেন না জয়নাল। শর্শীনার পীর মাওলানা তাজাম্মলের কথাও তার স্মৃতিতে অমলিন।

শেষ জীবনেও কুরআনের খেদমতের বাসনা জয়নালের। মানুষের গোলামি বা মানুষের ইচ্ছায় নামাজ পড়াতে চান না তিনি। লাখ টাকার মালিক হলে আল্লাহকে ভুলে যেতে পারেন। এ জন্য গরিবি হালাতে জীবন পার করে দিতে চান জয়নাল।

লেখক : প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকা।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ