শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


বায়োমেট্রিকে সিম নিবন্ধন, দেশ ও বিদেশ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

bayometrikখান মুফতি মাহমুদ, প্যারিস থেকেবাংলাদেশ সরকার তথা টেলিযোগাযোগ মনত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ইতোমধ্যেই বায়োমেট্রিক তথা আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে মোবাইল সিমকার্ড নিবন্ধন শেষ হয়েছে।  সরকারের এ সিদ্ধান্তের পক্ষে বিপক্ষে নানাবিধ মতামত সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন টকশোতে প্রচারিত অথবা আলোচিত হয়েছে। এমনকি  বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন এর বৈধতার বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। যদিও আদালত সরকারের সিদ্ধান্তকেই সঠিক বলেছে!

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে হাতের ছাপ নিয়ে মোবাইল সিম নিবন্ধন হচ্ছে কি- না ! সহজ উওর , না।

ইউরোপ-আমেরিকা কোথাও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশন হয় না। তাহলে বাংলাদেশে কেন এই নিয়ম?? এ নিয়ে রয়েছে নানামুনির নানামত। সরকারি যুক্তি হচ্ছে- টেলিকথোপকথন এর মাধ্যমে সৃষ্ট অপরাধী সনাক্ত করণে সিম রেজিস্ট্রেশন, আঙ্গুলের ছাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অপরদিকে বিশেষজ্ঞ ও  সাধারণ জনগণ মনে করছে, আঙ্গুলের ছাপ মোবাইল কোম্পানীকে দিলে ব্যক্তি নিরাপত্তা ও হয়রানির আশংকা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বায়োমেট্রিক নিয়মে সিম নিবন্ধন করে জনগণ অথবা সরকারের কোন লাভ না হলেও, টেলিযোগাযোগ মনত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা এবং তাদের পরামর্শ দাতারা আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণ করার মেশিন মোবাইল কোম্পানীকে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এটা জাতির সাথে এক মহা প্রতারণা  নয় কি!

সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যমতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত সিমের  গ্রাহক সংখ্যা ১১ কোটি ছাড়িয়েছে এবং মনত্রণালয়ের ঘোষিত নিবন্ধের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অনিবন্ধিত সিমকার্ড বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে জালিয়াতচক্র ভূয়া সিমকার্ড নিবন্ধন শুরু করেছে। অর্থাৎ অন্যের আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে অপরাধীচক্র সিম নিবন্ধন করে ব্যবহার করছে। যার বেশকিছু আলামত ইতোমধ্যেই পত্রিকান্তে প্রকাশিত হয়েছে, হচ্ছে। পুলিশ যদিও তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে সিম নিবন্ধনে গ্রাহকের কাছ থেকে ১০/২০ টাকা আদায় করা হয়েছে। যারা বৃদ্ধ মানুষ নিবন্ধন কেন্দ্রে যেতে অসমর্থ, তাদের সিমকার্ড কি হবে? অথবা আমরা যারা প্রবাসে থাকি, পূর্বে ক্রয়কৃত সিমকার্ড-এর বায়োমেট্রিক নিবন্ধনই বা কিভাবে হবে?

ইউরোপের উন্নত দেশ ফ্রান্স-এ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আমার অবস্থান। জাতীয়তাসহ। তাই ফ্রান্সের ন্যাশনাল আইডি ও পাসপোর্ট ব্যবহার সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রয়েছে। বিশ্বের শক্তিশালী এ দেশ যখন সর্বক্ষণ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে, তখনো জনগণ যাতে কোনো ধরনের হয়রানির স্বীকার না হন, তার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে কতৃপক্ষ। বৈধ প্রবাসীদের পারমানেন্ট রেসিডেন্ট কার্ড অথবা ফ্রান্স নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট  প্রদানে আঙ্গুলের ছাপ অর্থাৎ বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হলেও তা স্বরাষ্ট্র মনত্রণালয়ের অধীনে। যা শতভাগ নিরাপদ ।

তথ্যমতে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে মোবাইল সিমকার্ড নিবন্ধনে আঙ্গুলের ছাপ নেয়া নজিরবিহীন। উন্নত দেশগুলো জাতীয় পরিচয়পত্র (এন আই ডি) অথবা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এম আর পি) সর্বক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধীসহ সবাইকে প্রয়োজন অনুসারে সনাক্ত করে থাকেন ।

এমতাবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীত আবেদন, জাতীয় পরিচয়পত্র সত্যিকারের আধুনিক করণের মাধ্যমে এর সঠিক ও সর্বোচ্চ ব্যবহারের নিশ্চিত করণই সকল শ্রেণীর অপরাধী সনাক্তে সহায়ক হবে বলে আশা রাখি।

রু জন ভেরনে, প্যারিস লাকুরনভ, ফ্রান্স 
ই-মেইল:- muftymk@yahoo.fr
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ