শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


ইসরায়েলকে ঘৃণা করে বাংলাদেশিরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

Israel-Bangladeshডেস্ক নিউজ : ইসরায়েল, মোসাদ ও ইহুদী বাংলাদেশের রাজনীতির ইস্যু হয়েছে। ইসলায়েল ও মোসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কি নেই এই নিয়ে চলছে বাংলাদেশের রাজনীতিক নেতা ও দলের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের সরকার ও প্রধান বিরোধীদল বিএনপি আগ্রাসী মনোভাবের মধ্যে রয়েছে এই ইস্যুটি নিয়ে।

ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এটা এমন একটি দেশ যে দেশের প্রায় আড়াই লাখ মসজিদে প্রতি শুক্রবারের ধর্মীয় বক্তৃতায় ইসরায়েলের মানুষ ও ইহুদীদের বিরুদ্ধে অভিশাপ দেওয়া হয়। ইমামরা শুক্রবার মুসল্লিদের সামনে ইহুদীদের কাফের বলে উচ্চ বাক্য পাঠ করেন।

বাংলাদেশে সর্বশেষ মে মাসের শুরুতে ইসরায়েলদের ঘৃণার নোংরা অনুশীলন নতুন করে শুরু হয়। ইসরায়েলি লিকুড পার্টির নেতা মেনদি এন সাফাদির সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে এটি শুরু হয়।

আসলাম চৌধুরী ভারতের রাজধানী দিল্লি ও ঐতিহাসিক শহর আগ্রা সফরের সময় সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দুইজন হাতে হাত রেখে হ্যান্ডশেক করেন। এই ছবি সাফাদির ফেইস বুকে পোস্ট করেন। সেই ছবি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে স্থান পায়। এরপর আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে বাংলাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। ক্ষোভে ফেটে ফুলে ওঠে সারাদেশ।

১৫ মে বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে যোগসাজসে সরকার পতনের প্রেক্ষাপট তৈরির অভিযোগে আসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দুইটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামিকে অভিযুক্ত করে বলেন, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে মিশে ষড়যন্ত্র করে আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। ফিলিস্তিনে মাঝে মধ্যে যারা নারী ও শিশুদের হত্যা করছে তাদের যৌথ হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।

বিএনপি ব্যাপকভাবে মুসলিম ধর্মের সমর্থনের উপর নির্ভরশীল ও ইসলামি রাজনৈতিক দল জামায়াত বিশ্বাসী ইসলামী বিপ্লবে। আসলাম চৌধুরীর দল বিএনপিও ইসরায়েলের নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করায় বিরক্তি প্রকাশ করেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, বিএনপির কোনো নেতা ইসরায়েলের নেতা সঙ্গে সাক্ষাৎ করা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এটি আমাদের জাতীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ও পার্টির নীতির বাইরে। বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ধরনের সাক্ষাৎ বন্ধুপ্রতীম মুসলিম দেশের জন্য ভুল বার্তা দেবে এবং এটি দেশে ও দেশের বাইরে বিএনপির ভাবমূর্তি বিনষ্ট করবে।

আসলাম চৌধুরী সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি অস্বীকার করেননি। তবে তিনি দাবি করেছেন এটি ছিল আকস্মিক। ২৬ মে আসলামকে গ্রেফতারের ৯ দিন পরে পুলিশ তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বিরোধী মামলা দায়ের করে। বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান জানান, প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে ইসরায়েলের লিকুড পার্টির নেতার সঙ্গে যোগসাজসে দেশকে ধ্বংস করা ও সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছে আসলাম চৌধুরী।

সাফাদি বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকারে জানান, ফেইস বুকের ছবি ব্যবহার করে একটি দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ অযৌক্তিক। বাংলাদেশি গণমাধ্যমে সাফাদিকে ‘মোসাদের এজেন্ট’ ও সিনিয়র কর্মকর্তা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তিনি এই দুটোর কোনোটাই নয়। তিনি লিকুড পার্টির দ্রæজ এমপি আয়ূব করার সাবেক সহকারি।
সুন্নি মুসলিমদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশে আসলাম চৌধুরীই প্রথম ইসরায়েলিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে ঘৃণার পাত্র হননি। ইসরায়েলে ভ্রমণ করতে চাওয়ার অভিযোগে সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী নামে বাংলাদেশের এক সাংবাদিককে ২০১৪ সালে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গি উত্থানের জন্য ইসরায়েলের সাথে আলোচনার অভিযোগে তাকে এই সাজা দেয়া হয়।

সূত্র: গেটস্টোন ইন্সটিউটে ডট ওআরজেতে লেখাটি ১ জুলাইয়ে প্রকাশিত


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ