আবিদ আনজুম: সঙ্গীতের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ক্লোজআপ ওয়ান ১ এর সেরা ১৫ জনের তালিকায় ছিলেন তিনি।
ভালোবাসতেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। সঙ্গীত নিয়েই পিএইচডি করার ইচ্ছা ছিল তার। সেই কিনা এখন আইএসের সদস্য। বাংলাদেশে হুমকির হামলাও দিচ্ছে।
সাইট ইন্টেলিজেন্সের পেজে আইএস’র সদ্য প্রকাশিত বাংলায় হুমকি দেয়া ভিডিওতে দেখা যাওয়া তিন তরুণের একজন তিনি। প্রাথমিক পাওয়া তথ্যে জানা যায়, এই তরুণের নাম তাহমিদ রহমান শাফি। বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে গ্রামীণফোনে কাজ করতেন তিনি। আর তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন তারই সাবেক এক সহকর্মী। তাহমিদ সাবেক নির্বাচন কমিশনার (ইসি) শফিউর রহমানের ছেলে। শফিউর রহমান ২০১৪ সালে মারা যান। তিনি ২০০০ সালের জুন থেকে ২০০৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তার পরিচয়টা প্রকাশ করা হচ্ছে না।
আইএসের নতুন ভিডিওতে বাংলাদেশকে হুমকি বলা হয়, ‘ওটা (গুলশানের রেস্টুরেন্টে হামলা) ঝলক মাত্র... বারবার ঘটবে।’ ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, তিন তরুণকে বাংলায় কথা বলতে। তাদের মধ্যে একজনের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা।
ভিডিওতে শাফিকে বলতে শোনা যায়, ‘শেখ আদনানির’ নির্দেশে তারা ‘খ্রিস্টান, ইহুদি ক্রুসেডার ও তাদের মিত্রদের’ বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ করছে এবং তা কোনোভাবেই ‘কৌতুক নয়’।
তিনি বলছেন, ‘বাংলাদেশের তাগুত সরকার, এদের সমর্থক ও এদের কর্মচারীদের উদ্দেশে, আমি তোমাদের প্রশ্ন করতে চাই কেমন করে তোমরা ডেমোক্রেসিকে (গণতন্ত্রকে) সাপোর্ট করো? ডেমোক্রেসি নামক এই শিরকি মতবাদকে তোমরা কিভাবে সাপোর্ট করো?’
ভিডিওতে আরও বলা হয়, ‘আমি বাংলাদেশের তাগুত (সীমালঙ্ঘনকারী বা আল্লাহদ্রোহী) সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, যে জিহাদ আজ বাংলাদেশে এসেছে, যে জিহাদ তোমরা প্রত্যক্ষ করছো, এরকম জিহাদ তোমরা এর আগে কখনও দেখো নাই। এই জিহাদ হচ্ছে সেই জিহাদ যার প্রতিশ্রুতি রাসুল্লাহ সা. দিয়ে গিয়েছিলেন, সুতরাং তোমরা কখনওই এই জিহাদকে বন্ধ করতে পারবে না।’
জিহাদ সফল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে ওই জঙ্গি বলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা জয়ী হই এবং তোমরা পরাজিত হও এবং সারাবিশ্বে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত না হয়। একে তোমরা কখনওই রুখতে পারবে না, সুতরাং এ চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।’
এরপর দ্বিতীয় জঙ্গি বাংলাদেশের সব সরকারকে দোষারোপ করে বলেন, ‘আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই তবে এই ভূমিতে সমস্ত সরকার আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে মানবরচিত আইন দ্বারা পরিবর্তন করেছে। যার ফলে তারা তাগুত হয়ে যায়; তারা কাফের হয়ে যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ অর্থাৎ সশস্ত্র কিতাল করা ফরজে আইন হয়ে যায়।’
তৃতীয় জঙ্গি জিহাদিদের উদ্ধুব্ধ করে গুলশানে হামলার দিকে ইঙ্গিত করে বলে, ‘বাংলাদেশে যে কাজটি তারা করেছেন, সেটি চমৎকার একটি কাজ।’
উল্লেখ্য, ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে শুক্রবার (১ জুলাই) রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল সসস্ত্র জঙ্গি ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে রেস্টুরেন্টটি নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী।
অভিযানে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার এবং ২০ জনের জবাই করা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ১৭ জনই বিদেশি। বাকিরা বাংলাদেশি।
এছাড়া জঙ্গিদের প্রতিহত করতে গিয়ে নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান।
/আরআর