শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


এক সময় আমি মাদ্রাসাকে অপছন্দ করতাম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

shahadatমুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন : এক সময় আমি মাদ্রাসাকে অপছন্দ করতাম। হেফাজতের আন্দোলনের পর সেই অপছন্দের পরিমাল অনেক বেড়ে যায়। এই বিপুল সংখ্যক মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলেদের আমার পিছিয়ে পরা সম্প্রদায় মনে হত যারা দুনিয়াবি কোন জ্ঞান রাখে না। তারা অংক করতে পারে না, বিজ্ঞান জানে না, তারা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয় না, সরকারি বেসরকারি কোন জবও পায় না। মোটকথা ইউজলেস জনগোষ্ঠি। তারা কেবল মসজিদের ইমাম হয় আর লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খায়, মিলাদ পড়ায়।

কিন্তু আমার ধারণায় ভুল ছিল। ইসলাম একটি পূর্ণাংগ জীবন ব্যবস্থা। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি একটা মানুষ কিভাবে ইসলামের আলোকে তার লাইফটাইম অতিবাহিত করবে সে বিষয়েই শিক্ষা দেয়া হয় মাদ্রাসায়। ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে যেমন ডাক্তারি পড়ানো হয় না তেমনি মাদ্রাসায় শুধুই জীবন যাপন প্রণালী যা ইহকাল ও পরকালের জন্য কামিয়াবি হাসিল করবে তা শেখানো হয়।

ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে শেখানো হয় কিভাবে বিল্ডিং বানাতে হয় আর মাদ্রাসায় শেখানো হয় বিল্ডিং এ রডের বদলে যাতে বাঁশ ব্যবহার করা না হয়।

বিজ্ঞান, কৃষি, ব্যংকিং, ব্যবসা সবকিছুই মাদ্রাসা শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। আর সবচেয়ে জরুরি যা শেখানো হয় তা হল নৈতিকতা, মানবিকতা। ফাইভে পড়া একটা ছেলে যেমন বীজগনিত পারবে না তেমনি হেফজ পড়া কোন ছাত্র অন্যান্য অনেক কিছুই পারবে না এটাই স্বাভাবিক। মাদ্রাসায়ও ওয়ান থেকে পিএইচডি পর্যন্ত কারিকুলাম রয়েছে।

কিছুদিন পূর্বে আমার ক্যাফে এন কফি রেস্টুরেন্টে ১০০ জন দরিদ্র শিশুকে একবেলা খাওয়ানো হয় কয়েকজন হিতৈশি বন্ধুর অর্থায়নে। এদের ৫০ জন পথশিশু আমারই কিছু ভাই বেরাদার পরিচালিত স্কুলে পড়ে আর বাকি ৫০ জন মাদ্রাসার ছাত্র যারা অতি দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। তখন আমি খুব কাছ থেকে গভিরভাবে ওদের আচরণ পর্যবেক্ষন করি। স্কুলের বাচ্চারা প্রচণ্ড দুষ্ট, বিশৃংখল এবং নয়েজি। ইভেন তারা তাদের মেয়ে সহপাঠিনীকে টিজও করছে। সাথে আসা শিক্ষকদের তারা খুব একটা মানছেও না। হাউকাউ!

আর মাদ্রাসার বাচ্চাগুলো সারিবদ্ধভাবে ঢুকে, শান্তভাবে আসন গড়োহোণ করে, হাত ধোয়, চুপচাপ খেয়ে হাত ধুয়ে আবার লাইন ধরে চলে যায়। ওরাও দুষ্টামি করে কিন্তু সেটা বিশৃংখল পর্যায়ের না।

মাদ্রাসার ছাত্ররা ছিনতাকারী, ঘুষখোর, নেশাখোর, ডাকাত, সুদখোর হয় না (ব্যতিক্রম আছে, থাকবেই)। এরাও মিসগাইডেড হতে পারে যেমনটা হয় বামরা।

শুধুমাত্র বাংলাদেশের কিছু জংগীর ব্যাকগ্রাউন্ড মাদ্রাসা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেসব জংগী আছে তারা সাধারণ স্কুল কলেজ থেকেই আসছে। থাবা বাবাকে হত্যা করা জংগীরা নর্থ সাউথ ইউনির। গুলশান ট্রাজেডির জংগীরাও বিভিন্ন প্রাইভেট ইউনির এমনকি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে আসাও একজন আছে। তবে জংগী তৈরিতে মাদ্রাসা ছাত্রদের ইউজ করা তুলনামূলক সহজ। তারা ছোটবেলা থেকেই শৃংখলা শিখে, আল্লাহ ভিতি বেশি, দরিদ্র পরিবার থেকে আসে... ফলে তাদের ব্রেইন ওয়াশ দেয়াটা তুলনামূলক ইজি। সেই নাটেরগুরুরা এসব নিরিহ যুবকদের ইউজ করে নিজেদের স্বার্থে, ইসলামের স্বার্থে না। এর শেকড় অনেক গভিরে।

বিশ্ব রাজনীতির একটি ঘুটি এই ‘জংগীবাদ’! মাদ্রাসায় বা ইউনিতে জংগীবাদ শেখানো হয় না। যারা জংগী বানায় তারাই মাদ্রাসা বা ইউনির ছাত্রদের রিক্রুট করে। মাদ্রাসা ছাত্ররা জংগী হলে পৃথিবীতে শুধু মাদ্রাসা ছাত্ররাই বেচে থাকতো। পৃথিবীর কোন দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সুইসাইড স্কোয়াড আছে কি না আমার জানা নাই।

লেখকের ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া

আওয়ার ইসলাম টোন্টিফোর ডটকম /আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ