মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


নির্মল মনের একজন আজম রাজুর কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

rajuজাকির মাহদিন : আমি ঢাকায় আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোরের অফিসে, দুপুর আড়াইটায় গোসল করছি। মোবাইল পাশেই ছিল। নবগঠিত ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের’ সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ভাইয়ের ফোন, তিনি আমার সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ রাখেন। কারণ আমার অনুপস্থিতিতে সাংগঠনিক দায়িত্ব তার কাঁধে, ভাবলাম সাংগঠনিক কাজেই। অথচ ফোন করেই জিজ্ঞেস করলেন কোনো দুর্ঘটনার খবর পেয়েছি কি না। কলিজায় পানি নেই। বললেন আজম রাজু ভাই নেই…। আমি তাকে ধমক দিলাম, হতেই পারে না। কী বলছেন এসব? কিন্তু আসলে সেটা যে আপনার আমার যে কারও ক্ষেত্রে যে কোনো সময় হতে বা ঘটতে পারে তা আমার ভালোই জানা। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাস্তাঘাট এবং সার্বিক পরিস্থিতির যা অবস্থা তাতে এটা আরও বেশি সত্য। তবু বিষয়টা মানতে পারছি না। মুহূর্তেই আমি বাকরুদ্ধ। যদিও মাত্র নয় মাস আগে আমিও এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর অনেকটা কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে মহান আল্লাহ নিজগুণে আমাকে আরও কিছুদিন অবকাশ দিলেন। চারমাস বিছানায় থাকার পর পৃথিবীর বুকে আবার দুপায়ে হাঁটার ব্যবস্থা পেয়েছি।

রাজু ভাইয়ের সঙ্গে আমার দুচারটি উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে। সেদিন এক পর্যায়ে ভাবলাম লোকটার সঙ্গে আর স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি আমাকে অবাক করলেন। আমি তার কড়া কথাগুলো মনে গেঁথে রাখলেও তিনি আমার আক্রমণাত্মক বাক্যগুলো সম্পূর্ণই ভুলে গিয়েছেন মাত্র আধঘন্টার ব্যবধানেই। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর আমি যখন দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ, একজন বললেন জাকির ভাই তো আর কোনো কথা বলছে না। সাথে সাথেই রাজু ভাই উত্তর দিলেন, জাকির ভাই কি আপনার আমার মতো সবকিছুতেই কথা বলে মনে করেন? তখন আর রাগ ধরে রাখতে পারিনি। মানুষটা যে এত নির্মল ও শিশুমনের অধিকারী, আগে বুঝিনি। সহজে যেমন সরল কথাটি বলে ফেলতে পারেন, আবার হাজারো দোষ ভুলেও যেতে সময় নেন না। তখন থেকেই মনে মনে আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। সময়ে সময়ে এমন আরো কয়েকটি গুণ আমি দেখেছি আমাদের ক্লাবের কয়েকজন সদস্যের মাঝে। যে কারণে তাদের অনেকের সঙ্গে আমার অনেক দিক থেকে দূরত্ব থাকলেও আমাদের মধ্যে একটা মৌলিক মিল পাওয়া যায়।

সাংবাদিক ও সমাজকর্মী আলী আজম (রাজু) ভাইয়ের সঙ্গে আমার খুব বেশিদিনের সম্পর্ক না। পরিচয় পথিক নিউজ সম্পাদক লিটন হোসাইন জিহাদ ভাইয়ের মাধ্যমে। এরই মধ্যে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে তার সঙ্গে। কিছুদিন আগে ‘বিট’ এর চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমরা একই মঞ্চে বক্তৃতা করেছি। নিউজটি আছে দেশ দর্শনের চলতি সংখ্যায়। এরপর অনলাইন প্রেসক্লাব নিয়ে প্রচুর কথা কাটাকাটি এবং মাখামাখি। সেদিন  পাক্ষিক দেশ দর্শনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অফিসে আমাদের ক্লাবের একটি মিটিংয়ে সর্বশেষ কথাবার্তা। মিটিং শেষ হবার আগেই আমি উঠে পড়লে বললেন, আপনার বাড়িতে আমাদের বসিয়ে রেখে আপনি চলে যাবেন? অথচ কিছুক্ষণ আগেও তার সঙ্গে আমার ‘একচুট’ হয়েছে। তার মনটা কত নির্মল, মানুষের প্রতি ভালোবাসায় পূর্ণ! শেষ দিকে তিনি পাক্ষিক দেশ দর্শনের নিয়মিত খোঁraju2জ নিতেন, তাড়াতাড়ি বের করার তাগাদা দিতেন।

গতকাল ২৭ জুন দুপুর পৌনে এগারটায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুন। আমি মন থেকে দোয়া করছি এবং ইনশাআল্লাহ করব। পাশাপাশি তার পরিবারকেও সমবেদনা জানাই। এ মুহূর্তে তিনি শুয়ে আছেন আরেক জগতে, কবরে। যদিও সেটা বাড়ির পাশেই, কিন্তু তবুও সেটা যোজন যোজন দূরে। তিনি আর আমাদের মাঝে আসবেন না, আমাদের সঙ্গে কোথাও কাজে বের হবেন না। পৃথিবীটা এমনই নিষ্ঠুর! তার মৃত্যুটাও নির্মম, বেদনাদায়ক। গত দুদিন আগে আমাদের আরেকজন মনীষী দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ায় এমনি মনটা ভারাক্রান্ত ছিল। এরই মধ্যে একজন সৎমনের সহকর্মীকে হারালাম। আমি দূরে থাকায় তার জানাযায়ও অংশ নিতে পারলাম না। তার ওপর কোনো নিউজও করিনি, কারণ নিউজের চেয়ে সহকর্মীর করুণ বিদায় আমার মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আহ! আমাদেরও কার কখন ডাক আসে জানা নেই। বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ একদিন এভাবেই চলে যাব। দুদিনের এই দুনিয়া। এর জন্যই আমাদের এত কিছু!

লেখক :    গবেষক ও কলামিস্ট; সম্পাদক : পাক্ষিক দেশ দর্শন


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ