শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


`ভেবেছিলাম একটা দৈনিক কাগজ করবো'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

khan_ourislam24অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গত বর্ষার এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় দেখা পেয়েছি দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিত্ব মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের। তিনি তখন পল্টনে নোয়াখালী টাওয়ারের অফিসে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। লোকজনের ভিড়ের মধ্যেই একফাঁকে টুকটাক কিছু আলোচনা হলো তার সঙ্গে। সবকথা শেষ করা যায়নি সেদিন। পরে একসময় আরো আলোচনা করা যাবে- এমন আশ্বাস দিয়ে পূর্ব নিধারিত কোন অনুষ্ঠানে হাজিরা দিতে চলে গেলেন। তারপর রোজার মৌসুমে তার অসুস্থতার খবর শুনে ফোন দিলাম দেখা করার সুযোগ পাবার আশায়। বাসায় যেতে বললেন। গেন্ডারিয়ায় খান সাহেবের বাসভবনে পৌঁছার পূর্বেই এলাকাবাসীর মুখে জানলাম তাঁর অনেক কৃতিত্বময় কাহিনী। এলাকার সবাই তাকে ‘একনামে’ চেনে বললে পুরোটা বলা হয় না। তার বাড়ি এবং বাড়ির প্রতিটি সদস্যই সেখানে বেশ পরিচিত। ইসলামি পত্রিকা, তার লেখালেখি, বর্তমান কর্মকাণ্ড এমন নানাবিধ বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে ঘরোয়া আলাপের মতোই আলোচনা হলো। তিনি আমাদের সাথে একত্রে জোহর নামাজ পড়বেন বলে অপেক্ষা করছিলেন। বললাম, আমরা আপনার মসজিদেই নামাজ সেরে এসেছি।

মনে হলো, এখন আর জামাত করে নামাজ আদায় করতে পারবেন না বলে খানিকটা আক্ষেপ করলেন। বারান্দার একপাশে অগোছালো কয়েকটি খবরের কাগজের দিকে ইশারা করে তিনি নামাজে মশগুল হলেন। নামাজ শেষে বললেন, এ এলাকার দুইপাশের দু’টি মসজিদই আমার করা। গ্রামের বাড়িতেও একটা মসজিদ করেছি। সেখানে একটা এতিমখানাও আছে। প্রায় তিরিশজন ছেলে লেখাপড়া করে। কোনো চাঁদা-পাতি  নাই। নিজ খরচেই চালাই। মাদরাসা ছুটি হলে ঈদে-চান্দে ছাত্ররা আমার বাড়িতে, মানে ঢাকায় এই বাড়িতে এসে ওঠে।

মনযূরুল হক : এতগুলো ছাত্রের লেখাপড়ার খরচ কী করে জোগান ?
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : আমার বই বিক্রির টাকায় চলে যায়। ছোটবেলা মাকে হারিয়েছি তো। এতিমদের বড় যন্ত্রণা। আমার মাদ্রসায় যারা পড়ে, ওদের বেশিরভাগই একেবারে নি:স্ব।

মনযূরুল হক :  আপনার মাদরাসা কি কওমি মাদরাসা ?
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : হেফজখানা। সাথে মক্তব। আমি নিজে তো কওমি মাদরাসায় পড়িনি। হাদীস পড়েছি হজরত জাফর আহমাদ উসমানীর রহ. কাছে। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

মনযূরুল হক :  মুফতি ত্বাকি উসমানী সাহেব তাঁর সফরনামায় লিখেছেন দারুল উলুম দেওবন্দের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে আপনি বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে সেখানে বক্তব্য রেখেছেন।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : লিখেছে নাকি ! কী জানি।

মনযূরুল হক :  আপনার মাসিক মদীনার কী অবস্থা এখন?
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : লস, সবই লস। প্রতিমাসে লোকসান গুণতে হয়। বিজ্ঞাপন পাওয়া যায় কিছু। কিন্তু পত্রিকা তো চলে না। একসময় পঞ্চাশ-ষাট হাজার সার্কুলেশন ছিলো। এখন তো বিশ হাজার কপিও যায় না।

মনযূরুল হক :  আমাদের দেশে ইসলামি পত্রিকার সমস্যা সম্পর্কে বলেন।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : সমস্যা... সমস্যা ছাড়া আর কী আছে। সরকার ইসলামি পত্রিকার জন্য কোন ভর্তুকি দেয় না। সরকারি কাগজ আমরা পাই না। সব বিজ্ঞাপন পত্রিকায় ছাপা যায় না।

মনযূরুল হক :  এখন তো দেশে ইসলামি পত্রিকা অনেক।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : পাঠক কই ? ইসলামি পত্রিকার কোন পাঠক নাই। কেউ পড়ে না। আগে ‘নেদায়ে ইসলাম’ ছিলো। বন্ধ হয়ে গেলো। আরো অনেক পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। সবাই লোকসান দিয়ে পত্রিকা চালায়।

মনযূরুল হক : এবার কিছু সম্ভাবনার কথা বলুন।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান :  এই যদি হয় সমস্যার হালত। এত সমস্যার মধ্যে আবার কোন সম্ভাবনা আছে নাকি ?

মনযূরুল হক : কোন সম্ভাবনাই নেই ?
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : সম্ভাবনা তো কিছু দেখি না। আপনারা দেখেন কিছু করতে পারেন কি না। পাঠক বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে- এই আর কি।

মনযূরুল হক : অনেকেই এখন একটা ইসলামি দৈনিকের কথা ভাবছে।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : এটা এখন একটা হাস্যকর ব্যাপার হয়ে গেছে। আমিও ভাবছিলাম। চেষ্টাও করেছি। এখন মনে হয় কিছু হবে না। ভাবছিলাম তোমাদের জন্য একটা দৈনিক কাগজ করবো। এখন তো অসুস্থ আমি। হাঁটতে পারি না। বাইরের কাউকে সাক্ষাত দেই না আজকাল। তোমরা আসছো শুনে ভালো লেগেছে। না করতে পারি নাই।

মনযূরুল হক : আপনার লেখাও তেমন দেখি না।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : লিখতে কষ্ট হয়। চেয়ার-টেবিলে লেখার অভ্যাস তো।

মনযূরুল হক : জীবনের খেলাঘরে.. আপনার আত্মজীবনী অসাধারণ লেগেছে। তার বড় কারণ তখনকার সময়চিত্রটা একেবারে পরিষ্কার দেখা যায়।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : ভালো।

মনযূরুল হক :  সেখানে তো ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত লিখে শেষ করেছেন। মাসিক মদীনা প্রকাশ পর্যন্ত। এরপরের আপনার কর্মকাণ্ড তো অনেক বিস্তৃত।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : বাকিটা লেখা হবে কি না কে জানে। এখন তো লিখতে পারি না। বর্তমানে আমি প্রায় ৫০টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এসব লিখলে আরো বড় বই হয়ে যাবে।

মনযূরুল হক : ডিকটেশন দিয়ে লেখাতে পারেন। আপনি বললে আমরা কেউ এসে লিখে দিয়ে যাবো।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : ওসবে হয় না। নিজের লেখা নিজেই লিখতে হয়। নইলে লেখা তৈরি হয় না। লেখাটা কেবল সৃজনশীল কর্ম না। মননশীলতারও প্রয়োজন আছে।

মনযূরুল হক : অনেক কষ্ট দিলাম আপনাকে। মাফ করবেন। দোয়া চাই।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান : আমার মদীনার অফিসে এসো। কাজ করো। তোমাদের দেখলে ভালো লাগে। আচ্ছা, ভালো থেকো।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়েছিল ২০১৫ মাঝামাঝি সময়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনযূরুল হক। অল্প প্রচারিত সাক্ষাৎকারটি আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো। উল্লেখ্য, মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের অপ্রকাশিত আরো দুটি সাক্ষাৎকার আমাদের হাতে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রকাশ হবে ইনশাআল্লাহ। -নির্বাহী সম্পাদক

 


সম্পর্কিত খবর